Logo
Logo
×

নগরের বাইরে

মদনগঞ্জ খাল সংস্কার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ঝুঁকিতে রাস্তাসহ বাড়ি-ঘর

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

মদনগঞ্জ খাল সংস্কার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ঝুঁকিতে রাস্তাসহ বাড়ি-ঘর

মদনগঞ্জ খাল সংস্কার কাজ সম্পন্ন না হওয়ায় ঝুঁকিতে রাস্তাসহ বাড়ি-ঘর

অর্ধেক কাজ করেই থমকে আছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের বন্দর এলাকার ১৯ ওয়ার্ড এর মদনগঞ্জ খালের সংস্কার কার্যক্রম। আর এতে বিপাকে পড়েছেন খালের উভয় পাশে থাকা মানুষজন। খালের পাড়ে অবস্থিত তাদের যাতায়াতের সড়কটির নিচ থেকে মাটি সরে গিয়ে রাস্তাটি কাত হয়ে এখন যায় যায় অবস্থা। বাড়ি-ঘর ধ্বসে পড়ার শঙ্কার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন স্থানীয় জনগণ। এর মধ্যেই বেশ কয়েকটি বাড়ির মাটি সরে গিয়েছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাড়ির মালিকগণ। সামনে আসছে বর্ষার মৌসুম। দ্রুত এই অর্ধেক কাজ হওয়া প্রকল্পটির বাকি কাজ সমাপ্ত করতে না পারলে এইবারের বর্ষায় অনেকেরই বাড়ি-ঘর খালের মধ্যে ধ্বসে যাবে বলে আশঙ্কার প্রকাশ করছেন তারা। তাছাড়া যে বাজেটে এই খালটির কাজ সম্পন্ন করার কথা দ্রুত তা সম্পন্ন করতে না পারলে যে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে তাতে করে নির্মাণ খরচ আরও বহু বৃদ্ধি পাবে ফলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও মনে করছেন তারা। তাই খালটি দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে স্থানীয়দের বাড়ি-ঘর ও রাস্তা-ঘাট রক্ষায় নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় আধিবাসীরা।
 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৯ ওয়ার্ডের বন্দর এলাকার মদনগঞ্জ খালটি তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর টোলপ্লাজা সংলগ্ন এলাকা থেকে বন্দর উপজেলা পরিষদের সামনে পর্যন্ত খনন করা হয়েছে। খালের দক্ষিণ পাশে খাল ঘেঁষে যাওয়া সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নির্মাণ করা আরসিসি ঢালাইয়ের রাস্তাটির নিচ থেকে মাটি সরে গিয়েছে। এর ফলে রাস্তাটি খুব ঝুঁকিপূর্ণভাবে একদিকে (খালের দিকে) হেলে পড়েছে। যেকোন সময় এই রাস্তাটি ভেঙ্গে খালের উপর পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গতবছর এই কাজটি মনির কনস্ট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করে।
 
স্থানীয়রা জানায়, এই হেলে পড়া রাস্তা দিয়ে চলাচলা করার সময়ে বেশ কয়েকবার একাধিক গাড়ি উল্টে পড়ে যাত্রীরা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এছাড়া এই খালের পাশে থাকা বেশ কিছু বাড়ি-ঘর থেকে মাটি সরে খালের উপর পড়েছে। যেকোন সময় এসব বাড়ি-ঘরও এই খালের উপর ধ্বসে পড়ে যাবে বলে শঙ্কায় আছেন সেখানকার বাসিন্দারা। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত বছরের শুরুর দিকে এই খনন কাজ শুরু করা হয়। সে সময় খালটি খনন কাজ সেরে তার দুই পাশে বেশ কিছু জায়গা ব্লকের মাধ্যমে বেঁধে দেওয়া হয়। তবে বর্ষা এসে পড়ায় সেই পার বাঁধার কাজ আর সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু এই মৌসুম শেষ হয়ে পথে, অথচ এখন পর্যন্ত এখানকার বাকি কাজ সমাপ্ত করার কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু বর্ষা অতি নিকটে। তাই এখুনি কাজ ধরতে না পারলে অর্থাৎ বর্ষা শুরু হয়ে গেলে এই কাজ ধরা আর সম্ভব হবে না। গত বর্ষায় খালের কিনারায় কিছু মাটি থাকায় রাস্তা ও বাড়ি-ঘর কিছুটা ক্ষতির শিকার হলেও এখনও দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তা গত বর্ষায় সেই মাটি সরে যাওয়ায় এবার তা সরাসরি রাস্তা ও বাড়ি-ঘরে আঘাত করবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
 
ফারুক নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা যুগের চিন্তাকে জানান, আমরা খুবই আতঙ্কের মধ্যে আছি। তিনি বলেন গত বছর এ খালটি সংস্কারের কাজ ধরা হয়। কিন্তু সিটি কর্পোরেশনের গাফলতির কারণে কাজগুলো বর্তমানে বন্ধ হয়ে আছে। এখানকার অবস্থা বর্তমানে এতটাই ভয়াবহ হয়ে উঠেছে যে, যেকোন সময় আমাদের এই রাস্তাসহ বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে পড়ে যাবে। এখানে প্রতিনিয়ত অটো রিকশা ও ইজিবাইক উল্টে পড়ে যায়। গাড়ি উল্টে পড়ে যাওয়া এখন এখানকার নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়টির দ্রুত সমাধান না হলে এখানকার এলাকাবাসির অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে যাবে। বাড়িঘর, ভবনসহ এই খালে পড়ে যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন যদি দ্রুত এই কাজটি সম্পন্ন করতে না পারে তাহলে আমরা খুবই সমস্যায় পড়ে যাবো।
 
১৯ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সাগর বলেন, এই খালাটির বর্তমান অবস্থা আমি দেখেছি, এলাকার মানুষজন বেশ কয়েকবার বিষয়টি নিয়ে করনীয় সম্পর্কে জানতে আমার কাছে এসেছিল। তবে এখনই খালপাড়ের রাস্তাসহ বাড়িঘর খুবই ঝুঁকির মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। এতদিন খালটি যেভাবে ছিল সেই পরিবেশের সাথে সমন্বয় করেই জনগণ তাদের বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করেছে। কিন্তু গত বছর খালটি সংস্কারের কাজ ধরার পর যেহেতু খাল খননের মাধ্যমে বেশ কিছু মাটি উত্তোলন করা হয়েছে তাই খালের দুই পাশে অবস্থিত রাস্তা ও বাড়িঘরকে রক্ষা করতে সেখানে বেস্টনী নির্মাণ খুবই জরুরী। এখনই খালের দুই পাশে ব্লকের মাধ্যমে বেস্টনি দিতে না পারলে কিছু পর বর্ষা এসে পড়লে এখানে বাড়িঘরে ধ্বস নেমে বড় ধরণের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। তাই আমার মনে হয় সিটি কর্পোরেশনের এখনই উচিত বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্যোগ নিতে হবে।
 
এই বিষয়ে এই কাজের ঠিকাদারের দায়িত্বরতদের সাথে যোগাযোগ করলে এই খালটি সংস্কার কাজের দায়িত্বে থাকা মো. রবিন বলেন, আমরা গত বছর এই কাজটি শুরু করার পর খালটি খননসহ বেশ কিছু এলাকায় ব্লকের মাধ্যমে বেস্টনী নির্মাণ করতে সক্ষম হই। এর পর বর্ষা এসে যাওয়ায় সেই কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। কিন্তু বর্তমানে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা এই বিষয়টি নিয়ে তেমন একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। এর ফলে কাজটি বন্ধ অবস্থায় আছে। আমরা বাকি কাজ শেষ করার জন্য বেশ কিছু ব্লক বানিয়ে রেখেছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গা-ছাড়া ভাবে কাজ ধরতে পারছি না। এরই মধ্যে রাস্তার নিচ থেকে বেশ কিছু মাটি সরে গিয়েছে। এবার বর্ষার আগে কাজটি শেষ করতে না পারলে সেই মাটি আরও সরে গিয়ে রাস্তাটি ধ্বসে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এই কাজটি দেখার জন্য যে প্রকৌশলী ছিলেন বর্তমানে তিনি এখানে নেই। এই জন্যই বিষয়টি সমস্যা হয়ে গেছে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন