সওজের কম্পিউটার অপারেটর সম্পদ কোটি টাকার

সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর সৈয়দ মাকছুদুর রহমান
তিনি সরকারি একটি অফিসের কম্পিউটার অপারেটর। অথচ তাঁর রয়েছে ফ্ল্যাট-প্লটসহ কোটি টাকার সম্পদ। ২২ বছর একই দপ্তরে থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি এসব সম্পদ অর্জন করেছেন। সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কম্পিউটার অপারেটর সৈয়দ মাকছুদুর রহমানের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, শ্রমিক-কর্মচারীদের সরকারি বাসভবনের জায়গায় বিভিন্ন জনের নামে বরাদ্দ নিয়ে মাকছুদুর দোকান ও আবাসিক ঘর ভাড়া দিয়ে বছরের পর বছর হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। সওজের ঠিকাদারি বিলের আইপিসি, পেমেন্ট সার্টিফিকেট প্রস্তুতসহ তাঁর হাতে গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক লেনদেনের কাগজ প্রস্তুতের কাজ রয়েছে। ঠিকাদারি বিলের কাজসহ গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার কারণে সবাই তাঁর কাছে জিম্মি রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নির্ধারিত হারে তিনি ঘুষ নেন। নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসিয়াল পাসওয়ার্ডও মাকছুদুরের কাছে রয়েছে। তাঁর আলগানী নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। আট বছর আগে তিনি সওজের দেয়াল ভেঙে শিমরাইল-আদমজী সড়কের শিমরাইল মোড়ে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি তাঁর নিজ এলাকা নোয়াখালীর রামগঞ্জে ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন বলে পরিচয় দিতেন। সওজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের বি-১৮৭০ (শ্রমিক লীগের অন্তর্ভুক্ত) নারায়ণগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক পদে ২০২৩-২০২৪ সালে নির্বাচন করে পরাজিত হন মাকছুদুর। এখন বিএনপি সমর্থিত ইউনিয়নে পদ পাওয়ার প্রতিযোগিতায় আছেন তিনি।
জানা গেছে, সিদ্ধিরগঞ্জের ভূমিপল্লীর ৭ নম্বর সড়কের এ-৮৭ নম্বর প্লটে ১০ তলা ভবনে ১৩০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর। হিরাঝিলের মসজিদ গলিতে যৌথ মালিকানায় রয়েছে একটি প্লট। এ ছাড়া তাঁর গ্রামের বাড়িতেও রয়েছে বিপুল সম্পদ।
নোয়াখালী জেলার রামগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চনপুর গ্রামের সৈয়দ আলী আকবরের ছেলে মাকছুদুর ২০০২ সালের ২ জুলাই তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলে নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগে কম্পিউটার অপারেটর পদে যোগদান করেন।
নারায়ণগঞ্জ সওজ বিভাগের শিমরাইলের অফিসে গিয়ে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে আলাপকালে তারা তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানান। তারা বলেন, মাকছুদুরকে সরকারিভাবে আবাসিক বাসভবন দেওয়া হয়। কিন্তু মোটা অঙ্কের টাকা অগ্রিম নিয়ে বাসভবনটিতে আবাসিক ঘর ও ১০টি দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন তিনি। বহিরাগতরাও আবাসিক ভবনে বসবাস করছে। বাসভবনের রান্নার জন্য গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে ভাড়া দেওয়া বেকারি ও বাসায়। এসব দোকান ও বাসা থেকে মাসিক ভাড়া হাতিয়ে নিচ্ছেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে, তিনি সওজ কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে অস্থায়ীভাবে প্রায় ৩০টি টং দোকান বসিয়েছেন। মসজিদের নাম বলে প্রতিটি দোকান থেকে দৈনিক ৫০-১০০ টাকা করে চাঁদা নেন। গোপন সূত্রে জানা যায়, এ চাঁদাবাজির টাকা তিনিসহ সওজের বেশ কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা ভাগাভাগি করে নেন।
এসব অভিযোগ বিষয়ে সৈয়দ মাকছুদুর রহমান বলেন, দীর্ঘ চাকরিজীবনে একটি ফ্ল্যাট করেছেন মাত্র। এ ছাড়া তাঁকে দেওয়া বাসভবন শুধু ভাড়া দিয়েছেন, অন্যগুলো তাঁর নয় বলে তিনি দাবি করেন। তাঁর বিরুদ্ধে ঘুষ-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ সম্পর্কে তাঁর দাবি, এসব অপকর্মে তিনি জড়িত নন।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহসান উল্ল্যাহ মজুমদার বলেন, মাকছুদুর রহমান কীভাবে একই দপ্তরে ২২ বছর থেকে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে যাচ্ছেন তা তিনি জানেন না।
নারায়ণগঞ্জ সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহিম বলেন, তিনি এ দপ্তরে নতুন এসেছেন। কারও বিরুদ্ধে যদি এ ধরনের অভিযোগ থাকে তাহলে খোঁজখবর নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।