বাদলের ছায়ায় এদের অপকর্মের পাহাড়

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম. সাইফুল্লাহ বাদলের ছায়াতলে থেকে কাশীপুরের চর নরসিংপুরসহ আশপাশের বেশ কয়েক এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল আহম্মেদ, আওয়ামী লীগ নেতা জহির ওরফে লেংড়া জহির, ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নাজমুল হাসানসহ এদের সাঙ্গপাঙ্গরা। এরা সাইফুল্লাহ বাদলের ঘনিষ্ট কাছের লোক পরিচয়ে কাশীপুরবাসীকে জিম্মি করে গড়েছেন অপকর্মের পাহাড়
দীর্ঘ ১৭ বছর আওয়ামী লীগের আমলে গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমানের নামধারী বড় ভাই ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম. সাইফুল্লাহ বাদলের ছায়াতলে থেকে কাশীপুরের চর নরসিংপুরসহ আশপাশের বেশ কয়েক এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুয়েল আহম্মেদ, আওয়ামী লীগ নেতা জহির ওরফে লেংড়া জহির, ১নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নাজমুল হাসানসহ এদের সাঙ্গপাঙ্গরা। এরা সাইফুল্লাহ বাদলের ঘনিষ্ট কাছের লোক পরিচয়ে কাশীপুরবাসীকে জিম্মি করে গড়েছেন অপকর্মের পাহাড় যার ফলে তারা আজকে বনে গেছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। এরা উভয়ে বিগত দিনে বিভিন্ন গার্মেন্টসে চাকুরী করতেন কিন্তু বাদলের আর্শিবাদে আজকে এরা আঙউল ফুলে বনে গেছেন কলাগাছ। তাদের নির্যাতনে অপকর্ম থেকে শুরু করে ব্যাপক ভূমিদুস্যতার কবলে পরেছে কাশীপুরের সাধারণ মানুষ। তারা বাদলের নামে বিগত দিনে চর নরসিংপুরের এলাকায় বহু খালি জায়গা তথা খাস জমি থেকে শুরু করে ওয়ারিশ জমি, বেজাল জমি, নাল জমি সবই দখলে নিতেন।
এ ছাড়া কাশীপুরের ভূমি অফিসের ছত্রছায়ায় খাস-মামলা করা জমির খাজনা কাটিয়ে সেই জমি বিক্রি করার নজিরসহ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া কাশীপুরের চর নরসিংপুর ও উত্তর নরসিংপুর এলাকার চিহ্নিত কিছু ভূমিদস্যুদের আন্ডারে ও ছিলেন এরা। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ নেতা জুয়েল ওরফে কাইল্লা জুয়েল চর নরসিংপুর এলাকায় একক আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। তার অপকর্মের মধ্যে ছিলো কেউ জমি কিনলেই করতেন মোটা অংকের চাঁদাবাজি, ইট-বালুর ব্যবসা, ইন্টারনেট-ডিস, ড্রেজার এছাড়া ও বাদলের পিএস রেহান শরীফ বিন্দুর সাথে মিলে বিভিন্ন খাস জমি দখল, অন্যের জমিতে সাইনবোর্ড লাগিয়ে মোটা অংকের চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের সাথে ছিলেন এই জুয়েল। যার মাধ্যমে কয়েকটি বাড়ি ও জমিসহ অঢেল সম্পত্তির মালিক বনে গেছেন। অথচ এক সময় এই জুয়েল ভাত খেতে ভাত পেতো না। ভাতের অভাবে সে গার্মেন্টসে চাকুরী করতেন। একই সাথে জহির ওরফে লেংরা জহির বিগত দিনে গার্মেন্টস কর্মী থাকলে ও বাদলের শেল্টারে করতেন চোরা থান কাপড়ের কারবারি। তা ছাড়া বাদলের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ে কাশীপুরের বিভিন্ন জমির দালালীসহ ঝামেলা জমির ওয়ারিশ নিয়ে সাইফুল্লাহ বাদলের ছোট ভাই খোকনের মাধ্যমে জমিতে বায়না করে পরে বেশি টাকায় জমি বিক্রি করাই এর ছিলো মূল কাজ। এ ছাড়া একটি এফ-জেড হুন্ডা দিয়ে ঘুরে ঘুরে বাদলের নামে বিভিন্ন গার্মেন্টসে ঝুট সন্ত্রাসীসহ নানান অপকর্ম পরিচালনা করেছেন এছাড়া হাজীপাড়া ও শান্তিনগরে ব্যাপক প্রভাব খাটাতেন এই জহির। অন্যদিকে ১ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নাজমুল হাসান। তিনি ও বিগত দিনে গার্মেন্টসে চাকুরী করলে বাদলের আশ্রয়ে বনে গিয়েছিলেন অঢেল সম্পত্তির মালিক। তিনি ওয়ারিশ জমি, বেজাল জমি, নাল জমি সবই নিজ দখলে রাখতেন।
এ ছাড়া হাতেমের পিএস খ্যাত হাসানকে দিয়ে বহু জমি দখল করাই ছিলো এই নাজমুলের কাজ। যাকে ঘিরে এই নাজমুল গড়েছেন বিশাল সম্রাজ্যে। এছাড়া যে নাজমুল এ সময় খেতে খাবার পেতেন না যে আজকে গাড়িসহ বাসায় ২৫ লাখ পাকার জাড়বাতি লাগিয়ে শো-অফ করেন। এদিকে তাদের ব্যাপক অপকর্মের কারণে গত ৫ আগষ্ট পপ পরিবর্তনের পর পালিয়ে যান এরা। কিন্তু ধীরে ধীরে বিএনপির কিছু কথিতদের নেতাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে তাদের আশ্রয়স্থলে নিজ এলাকায় বসবাসসহ টিকিয়ে রেখেছেন এদের সম্রাজ্যে। বর্তমানে এদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝাড়ছেন ভুক্তভোগীরা। এ ছাড়া সূত্র জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে সাইফুল্লাহ বাদলের নির্দেশনায় বিশাল মিছিল নিয়ে গত ১৮ ও ১৯ জুলাই চাষাড়ায় শামীম ওসমানের নেতৃত্বে কাশীপুরের আইয়ূব আলী সাথে ছাত্র-জনতার উপরে হামলা করেছিলেন এরা। যে সূত্রে হত্যা মামলা আসামী হিসেবে ও রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে দেদারসে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
এদিকে বর্তমানে সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের দমনে সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ অপারেশন যৌথভাবে পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপারেশনে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন নষ্ট করতে না পারে সেই জন্য এ অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে। ইংরেজি শব্দ ডেভিল অর্থ শয়তান আর হান্ট অর্থ শিকার। ফলে ডেভিল হান্ট-এর অর্থ দাঁড়ায় শয়তান শিকার করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের বোঝানো হয়েছে। কিন্তু সাইফুল্লাহ বাদলের দখলদারিত্বের ‘ডেভিলরা’ এখনো এলাকায় বহাল এদের কোন কিছু হয় না।