সিদ্ধিরগঞ্জে ওসমানদের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা ৭ মাসেও অধরা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

সিদ্ধিরগঞ্জে ওসমানদের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীরা ৭ মাসেও অধরা
শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ত্যাগের খবরের সাথেই নিপাত ঘটে ‘ওসমানীয় রাজত্বের’। তবে নারায়ণগঞ্জের দীর্ঘদিনের ওসমানীয় রাজত্বের নিপাত ঘটালেও তাদের অপরাধ জগৎতের ডেভিলরা ধরা ছোয়ার বাহিরে থাকায় জনমনে দেখা মিলছে অসস্তি। এদিকে শামীম ওসমানের আসনের সিদ্ধিরগঞ্জ ছিলো বড় বড় ডেবিলদের মূল আস্থানা। বিগত দিনে শামীম ওসমানের সাঙ্গপাঙ্গদের দখলে ছিলো সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেড, পাওয়ার হাউজ, আশপাশের শত শত গার্মেন্টস, বাজার-হাট-ঘাট, বালু নিয়ন্ত্রণ, স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ, ডিপো নিয়ন্ত্রণ, তেল চোর নিয়ন্ত্রণ, গম সাইলো, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ড্রেজার, বড় বড় টেন্ডার, খাস জমি, সওজের জমি, ময়লা, পানি, রাস্তা দখল করে ফুটপাত, ট্রাক স্ট্যান্ড, বাস কাউন্টার, বিভিন্ন ক্লিনিক-ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, পুরো চিটাগাংরোড সবই বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের শাসন আমলে দখলে রেখেছিলেন শামীম ওসমানের দুর্ধর্ষ বাহিনীরা। তা ছাড়া এই সকল অপকর্মের শামীম ওসমানের সহযোগীরা ছিলেন জনপ্রতিনিধিরা। যার কারণে তারা হয়ে উঠেছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জের আতঙ্ক। বর্তমানে অপারেশন ডেভিল হান্ট অভিযানের কারণে তাদের ডেভিল হিসেবেও বিবেচনা করছেন সিদ্ধিরগঞ্জের সাধারণজনগণ। এছাড়া বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকালীন সময়ে ছাত্র হত্যার সাথে সম্পৃক্তর অভিযোগে এসকল ডেভিলদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকলেও পট পরিবর্তনের ৭ মাসে এখনো গ্রেফতার হয়নি এই দুর্ধর্ষরা। এর মধ্যে নাসিক ৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি গ্রেফতার হলে ও বাকিরা অধরা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। এর মধ্যে অনেকেই প্রকাশ্যে এলাকায় দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে বিএনপির কিছু কথিত নেতকার্মীদের শেল্টারে।
সূত্র বলছে, সিদ্ধিরগঞ্জে অপারেশন ডেভিল হান্টের অভিযানে একাধিক ছাত্র হত্যার মামলা নিয়ে ও নানান অপকর্ম করে অধরা রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক হাজী ইয়াসিন, শামীম ওসমানের জালাল মামা, সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরউদ্দিন মিয়া, নাসিক ৪নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসান, আওয়ামীলীগ নেতা আবু বকর সিদ্দিক আবুল (ইয়াসিন মিয়ার ভাই), যুবলীগ নেতা টাইগার ফারুক, নতুন বাজার হাজী বাড়ির সেলিম মজুমদার, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ও প্যানেল মেয়র-২ ও ৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল, ১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন, ৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রুহুল আমিন মোল্লা, ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মিজানুর রহমান, ছাত্রলীগ নেতা শাহরিয়ার বাপ্পি, ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণকারী ছাত্রলীগ নেতা বিকে বাপ্পী, মানিক মাস্টার, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শফিকুল ইসলাম, কাউন্সিলর আনোয়ার ইসলামের ছেলে মাহবুব আলম ও ছত্রলীগ নেতা ইলিয়াস ইসলাম লিয়ন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক তাজিম বাবু, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সদস্য রমজান আলী (সাইলো গেইট), আওয়ামী লীগ নেতা তের চোর আশরাফ, পানি আক্তার, মানিক মাষ্টার, ভাগিনা মামুন, নাসিক ৬ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি গুজালিটনসহ আরো কয়েক শত রাগবয়োল ‘ডেভিল’ সিদ্ধিরগঞ্জে দেদাসরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কোন না কোন বিএনপি নেতাদের শেল্টারে।
বিগত দিনে, সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী ইপিজেডে ঠিকাদারী ব্যবসা থেকে শুরু করে তোল সিন্ডিকেট, পাওয়ার হাউজ সিন্ডিকেট, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ড্রেজার নিয়ন্ত্রণ, সাইলো, বালু, ঘাটসহ সবই সিদ্ধিরগঞ্জে একক আধিপত্য বিস্তারে ছিলেন মতিউর রহমান মতি, ইয়াসিন, মুজিবুরসহ উপরে উল্লেখিত বেশ কয়েকজন। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আদমজী ইপিজেডে আধিপত্য বিস্তার করে আসছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়ক মতিউর রহমান মতি। তার হাত ধরেই ইপিজেডের যাবতীয় লাভজনক কার্যক্রম কব্জা করে নেয় তার আত্মীয়স্বজনসহ পালিত সন্ত্রাসীরা।
এরপর এনসিসি ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর ইপিজেডে একক আধিপত্য বিস্তার করেন মতি। হাতের হাত ধরেই সব ঠিকাদার ব্যবসা করতে পেড়েছেন কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় সন্ত্রাসী। যেসব সন্ত্রাসীরা ইপিজেড থেকে বিভিন্ন মালামাল চুরি করে সহজেই বাইরে বের করে নিতেন এই সকল সন্ত্রাসীদের মাধ্যমেই। কোটি কোটি টাকার মালামাল কাস্টমস ফাঁকি দিয়ে চুরি করে বের করা সবই এই কয়েকজন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরাই পারতেন। এ ছাড়া ৪, ৬,৭, ৮, ১০ জন ওয়ার্ডের নিয়ন্ত্রণে বড় বড় ব্যবসা সবই ছিলো এই সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে যার মাধ্যমে শামীম ওসমানের কাছেসহ কয়েকটি সেক্টরে মোটা অংকের টাকা যেত।
এদিকে বর্তমানে সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের দমনে সারা দেশে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ অপারেশন যৌথভাবে পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপারেশনে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পতিত আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যেন নষ্ট করতে না পারে সেই জন্য এ অপারেশন পরিচালনা করা হচ্ছে। ইংরেজি শব্দ ডেভিল অর্থ শয়তান আর হান্ট অর্থ শিকার। ফলে ডেভিল হান্ট-এর অর্থ দাঁড়ায় শয়তান শিকার করা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষিত ডেভিল হান্ট বলতে দেশবিরোধী চক্র, সন্ত্রাসী ও দুষ্কৃতকারীদের বোঝানো হয়েছে। কিন্তু সিদ্ধিরগঞ্জের এই ‘ডেভিলরা’ এখনো এলাকায় বহাল তবিয়তে রয়েছে।