
প্রিন্ট: ২৯ মার্চ ২০২৫, ১০:০৯ পিএম
শত কোটি টাকার মালিক ওসমান দোসর গিয়াসউদ্দিন ভেন্ডার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২১ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

শত কোটি টাকার মালিক ওসমান দোসর গিয়াসউদ্দিন ভেন্ডার
আরো পড়ুন
শুধু রাজনৈতিকভাবেই না, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা, টেন্ডারবাজি, পদবাণিজ্য এবং প্রশাসনকে হাতের মুঠোয় নেওয়ার মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জে ত্রাসের এক বিশাল সম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত ওসমান পরিবার। তাদের এই সম্রাজ্যের বিস্তার উপজেলার হিসেবে নারায়ণগঞ্জের ৫টি উপজেলার ৩টিতেই ছিল তাদের দাপট। অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জ সদর, বন্দর এবং সোনারগাঁও উপজেলায় তাদের বিভিন্ন প্রতিনিধির নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাস ও ক্যাডার বাহিনী তৈরীর মাধ্যমে এই একটি বিশাল সম্রাজ্য গড়ে তুলতে সামর্থ্য হয়। তবে থানার হিসেবে করলে নারায়ণগঞ্জের ৭টি থানার ৫টিতেই ছিল ওসমান পরিবারের রাজত্ব। রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার ব্যতীত নারায়ণগঞ্জের সব থানা ও উপজেলাই ছিল ওসমান পরিবারের রাজত্ব। আর বন্দর উপজেলায় ওসমান পরিবারের নিযুক্ত ক্যাডার বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিল বন্দরে এক সময়ে লজিং মাস্টার হিসেবে পরিচিত শূন্য থেকে হঠাৎ করেই আঙ্গল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়া জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা গিয়াস ওরফে ঘরজামাই গিয়াস, ওরফে দালাল গিয়াস, ওরফে রোটারিয়ান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, ওরফে গিয়াস ভেন্ডার। যার বিরুদ্ধে দলিল লেখক সমিতির টাকা আত্মসাত, অবৈধ ক্ষমতার প্রয়োগ এবং স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে সাড়ে ১৪ একর জমি বিক্রি করে দেওয়াসহ আছে ভুরি ভুরি অভিযোগ। এর সব কিছুই তিনি ওসমান পরিবারের ছত্রছায়ায় করেছেন বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তাকে অপারেশন ডেভিল হান্টের আওতায় নিয়ে এসে তদন্ত এবং জিজ্ঞাসা করলেই তার সকল সত্য উদঘাটন হয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ওসমান পরিবারের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত এই গিয়াস একটা সময় সোনারগাও থেকে জীবিকার সন্ধানে বন্দরে এসে একমুঠো ভাতের জন্য ছিলেন লজিং মাস্টার। অর্থাৎ একটু থাকার জায়গা ও তিনবেলা খাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য মানুষের বাড়িতে থেকে সেই পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পড়াতেন তিনি। তারপর বন্দর এলাকায় বিয়ে করে লজিং মাস্টার থেকে হয়ে যান ঘর-জামাই গিয়াস। এরই মধ্যে চতুর গিয়াস উদ্দিন বিভিন্ন লিংক ব্যবহার করে ওসমান পরিবারের তৎকালীন ক্যাডার (যিনি নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের প্রথম ক্যাডার হিসেবে পরিচিত) নাসিম ওসমানের দালালী করার মাধ্যমে তার আস্থা অর্জন করতে শুরু করেন। সে সময় নাসিম ওসমানের অশির্বাদ লাভের মাধ্যমে বন্দরের দেউলী চৌরাপাড়ায় অবস্থিত (বর্তমানে নাসিক ২৪ নং ওয়ার্ড) এসিআইয়ের নির্মাণাধীন ফ্লাওয়ার মিলের জমি কিনা থেকে শুরু করে, এলাকায় তখনকার সরু মাটির সড়ক দিয়ে এসিআইয়ের বড় বড় গাড়ি চলাচলের দালালীসহ মিলের বিভিন্ন ওয়স্টেজ মালামাল ক্রয় বিক্রয়ের দায়িত্ব পান। এরপর থেকে দালাল গিয়াস হিসেবে টাইটেল পাওয়া গিয়াস উদ্দিনকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
ভেন্ডার কাজের লাইসেন্স পাওয়ার পর ওসমান পরিবারের প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে হয়ে যান দলিল লিখক কমিটির নেতা। তারপর আলাদীনের চেরাগ পাওয়ার মতোই যেন ঘুরতে থাকে গিয়াস উদ্দিনের ভাগ্যের চাকা। নিজের নামের সাথে একাধিক টাইটেল লাগিয়ে হয়ে রোটারিয়ান গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। এরপর সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমানের দালালীর মাধ্যমে জাতীয় পার্টির নেতা হয়ে যান গিয়াস। আর এলাকায় জোর-জবরদস্তি করে জায়গা দখল, সালিশে নেতৃত্বের নামে অর্থ অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জন, নকল দলিল সৃষ্টির মাধ্যমে অন্যের সম্পদ দখল, প্রতিবাদ করলে ওসমান পরিবারের লাঠিয়াল বাহিনীর ব্যবহার, সরকারী জায়গা বেদখলসহ বিভিন্ন অবৈধ উপায়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বনে বিশাল সম্পদের মালিক। মাত্র কিছুদিন আগেও বন্দরে যার থাকার জায়গা ছিল না বলে মানুষের বাড়িতে লজিং থাকতে হয়েছে সেই গিয়াসের এখন বেশ কয়েকটি অট্টালিকাসহ অলিসান বাড়ি। কয়েক বছর আগেও যিনি পকেট খরচের জন্য হাতে কাঠ মিস্ত্রির যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘুরে মানুষের বাড়ি বাড়ি ছোট খাটো কাজ খুঁজে বেড়াতেন, তিনি এখন একাধিক আলিসান গাড়ি নিয়ে চলাচল করেন। ওসমান পরিবারের ক্যাডার হওয়ায় বন্দরের প্রশাসনও তার ভয়ে তটস্থ থাকতেন, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ভয় পেতেন।
এই সময়ের মধ্যে তিনি একবার সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন, দলিল জালিয়াতি মামলায় জেল খাটেন। কিন্তু এসব সাজা যেন তার অপকর্মের মাত্রা আরও বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জাতীয় পার্টির নাম ভাঙ্গিয়ে কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই বন্দরে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেন তিনি। এই বিষয়গুলো নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মিডিয়ায় একাধিকবার সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সাবেক সরকারে আশির্বাদপুষ্ট এই এবং ওসমান পরিবারের এই এই ক্যাডার এখন বহাল তবিয়তে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলেও জানান স্থানীয়রা। অর্থ-বিত্তের প্রভাবে বন্দরে এখনও সে নিজের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।