গিয়াসউদ্দিনকে কেন টার্গেট করলো ওসমান অনুগতরা
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির মধ্যে ওসমান পরিবার, আওয়ামীলীগ দুঃশাসনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজির রিরুদ্ধে লাগাতার ভাবে কথা বলেছেন এমন অন্যতম নেতা সাবেক সংসদ সদস্য সদ্য সাবেক হওয়া জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ৫০এর অধিক মামলা দেওয়ার পর গডফাদার শামীম ওসমানের একমাত্র ভীতি ছিল এই গিয়াসউদ্দিন। ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের পর থেকে ওসমান পরিবারের কুকীর্তি, তাদের দোসরদের কুকীর্তি, আজ্ঞাবহ ব্যক্তিদের বিভিন্ন সংগঠনের শীর্ষপদ দখল ইত্যাদি নিয়ে যেসকল ব্যক্তব্য তিনি দিয়েছেন তার সবকিছুই ওসমান পরিবার আর তার দোসরদের বিপক্ষে গিয়েছে।
৫ আগস্টের পর প্রতিটি সমাবেশে ওসমানদের কুকর্মের দুর্গগুলোকে সামনে তুলে ধরে তাদের লুটপাটের বিষয়ে সবিস্তরে কথা বলেছেন। ওইসব সমাবেশে ওসমান পরিবার ও তার দোসরদের লুণ্ঠন, ঝুট সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর হিসেবে কথা বলেছেন। গডফাদার শামীম ওসমানের সময়কালে পিছিয়ে যাওয়া ফতুল্লাকে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অধীন অন্তর্ভূক্ত করার তাগিদ দিয়েছে, নানা দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি গিয়াসউদ্দিন যখন লাগাতার ভাবে ওসমান ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক, ঝুট ব্যবসায়ী, মাদকব্যবসায়ী, আঁতাতাকারী, দোসরদের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করেন, ওসমানদের তাবেদারি ব্যক্তিদের মনে তখন ব্যাপক ভীতির সঞ্চার হয়। গিয়াসউদ্দিনের কণ্ঠরোধ করার জন্য গত দেড় থেকে দুইমাস আগে থেকেই ওসমান বলয়ের সাথে ঘনিষ্ঠ একটি চক্র, ওসমান ঘরনার ব্যবসায়ী, দোসররা মাঠে নামেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
এই চক্রটা নানাভাবে দলীয় পদ থেকে গিয়াসউদ্দিনকে যাতে অপসারণ করা হয়, সেটি নিয়ে বিভিন্ন মহলে ভুল তথ্য দিয়ে তদ্বির চালিয়ে আসছেন। বিএনপির হাইকমান্ডেও ওই চক্রটা ব্যাপকভাবে গিয়াসউদ্দিন সম্পর্কে ভুল তথ্য দিয়ে কমিটি ভাঙার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিল। ওই চক্রটার এমন করার কারণ হিসেবে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে যে লুটপাট, দখলবাজি, চাঁদাবাজি তারা করেছে সেটি গিয়াসউদ্দিন থাকলে অদূর ভবিষ্যতেই তাদের আইনের আওতায় আনা হতে পারে। সূত্র জানিয়েছে, গত ১৬ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের হাত ধরে ওসমানদের সেসব অনুসারীরা দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করে প্রচুর অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছে। তাদের হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ রয়েছে। দূর থেকে ওসমান পরিবারের শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ ওসমান দোসররা নিজেদের লোকজন বসানোর জন্য এখন সেই অবৈধ টাকাগুলো ইনভেস্ট করছে। বিএনপির হাইকমান্ডেও নারায়ণগঞ্জের আসল চিত্র সম্পর্কে তুলে না ধরে ভুল মেসেজ পাঠিয়েছে। বিষয়টি যে অত্যন্ত স্পর্শকাতর তা বুঝা গেছে জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির পর। বিএনপির মতো বড় দলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা-প্রতিযোগিতা থাকাটা দোষণীয় নয়। তবে জেলা বিএনপির সভাপতি পদ থেকে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনকে সরিয়ে দেয়ার পর ওসমান ঘনিষ্ঠ একটি বিরাট চক্রের উল্লাস করতে দেখা গেছে। ওসমান ঘনিষ্ঠ দোসররা আনন্দে যেন হাফ ছেড়ে বেচেছেন।
মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা জানান, নারায়ণগঞ্জ এমন একটা অদ্ভুত জায়গা, যেখানে বিএনপির প্রচুর ত্যাগী কর্মী রয়েছে। তবে এরপরেও বিএনপি দশকের পর দশক এখানে বিএনপির শক্ত ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব তৈরি করতে পারেনি। ভালো ভালো নেতার জন্ম হলেও সেসব নেতাদের তারা নেতৃত্বে ধরে রাখতে পারেননি। জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন যে শুধু বিএনপির জন্য সম্পদ এমনটি নয়। নারায়ণগঞ্জের আপামর মানুষের জন্য সাহসী একজন মানুষ। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকে তিনি জনমানুষের সাথে মিশে যেতে শুরু করেন। একসময় উপজেলা চেয়ারম্যান, এরপর সারাদেশের উপজেলা চেয়ারম্যানদের চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য হয়ে নারায়ণগঞ্জের মানুষের সাথে একেবারে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে গেছেন। নারায়ণগঞ্জের অলি-গলি, রাজনীতি, সমস্যা সবকিছু সম্পর্কে তিনি জানেন। এখানকার মানুষের মুখোশগুলোও বর্তমান রাজনীতিকদের মধ্যে সবচাইতে ভালো জানেন এই গিয়াসউদ্দিন। যার ফলে গিয়াসউদ্দিনকে যখন জেলা বিএনপির সভাপতি করা হলো, অল্পদিনের মধ্যেই তিনি নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে একটি সিস্টেমে নিয়ে আসেন।
এরআগে যাদেরকেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারাই পরবর্তীতে ওসমান ঘনিষ্ঠ লোক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তৈমূর আলম খন্দকার তো বিএনপির সাথে বিশ^াসঘাতকতাই করলো। অন্য দলে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাথে আতাঁতে নির্বাচন করে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হলেন। তৈমুরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে তখন কারা কাজ করেছেন সেটিও সবার জানা। গিয়াউদ্দিন যখন জেলা বিএনপির সভাপতি হল, তখন শামীম ওসমানসহ গোটা ওসমান পরিবার ও তাদের দোসরদের ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিল, কেননা তখন থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সংগঠিত হতে শুরু করেছিল। ৫ আগস্টের পর বিএনপির একটি অংশের লুটপাট, চাঁদাবাজি, রাহাজানি নিয়েও লাগাতার কথা বলেন গিয়াসউদ্দিন। যার ফলে ওসমান পরিবার, তাদের দোসর এবং আঁতাতকারীদের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছিলেন গিয়াসউদ্দিন। যার ফলে গিয়াসউদ্দিনের কণ্ঠরোধ করার জন্য ওসমানদের সেই অবৈধ টাকার একটি বিরাট অংশ বিভিন্ন জায়গায় ইনভেস্ট শুরু করে সেই চক্র। আপাতত জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়ায় ওসমানদের বিরুদ্ধে এবং মাঠ পর্যায়ের কিছু বিএনপি নেতার দখলবাজি, চাঁদাবাজির যে উদ্যোগ গিয়াসউদ্দিন নিয়েছিলেন সেটি থেমে গেলো।
তবে, জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দিলেও বিএনপি এখনো গিয়াসউদ্দিনকে আগলে রেখেছে বলে জানিয়েছে সূত্র। তারেক রহমান তার বক্তব্যে স্পষ্ট করে বলেছেন, বিএনপি (দলের) মধ্যে নানা অনুপ্রবেশকারী ঢুকে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘দল ও দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। দুষ্ট লোকদের দুষ্টমি থেমে নেই। সেটি আমাদের দেশের ভেতর ও বাহিরে উভয় জায়গাই হচ্ছে। কারণ এ দেশের অর্থ সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ অনেকেই নির্লোভ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এই দেশে যদি একটি বিশৃঙ্খলা লাগিয়ে রাখা যায় এটা অনেকের জন্য ভালো সুযোগ।’ নারায়ণগঞ্জের ক্ষেত্রেও এমনটিই। নারায়ণগঞ্জে যদি গিয়াসউদ্দিনের কণ্ঠরোধ করা যায় তাবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে বিশৃঙ্খলা করা সহজ হবে কুচক্রী মহলের।