নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতৃবৃন্দ
# গণতান্ত্রিক আন্দোলন কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি : নজরুল ইসলাম আজাদ
# জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে হবে : গিয়াসউদ্দিন
# বিচার বিভাগ থেকে প্রশাসন সবখানে ন্যায়বিচারের অভাব : এড. সাখাওয়াত
# নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা দেশের মানুষ মেনে নেবে না : এড. টিপু
# মূল কাজ তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা দাবি মানুষের কাছে পৌঁছানো : রাজীব
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখলেও দ্রুততম সময়ে নির্বাচন চায় বিএনপি। দলটি মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু একটি অনির্বাচিত সরকার, নির্বাচন প্রলম্বিত হলে এখন দেশবিরোধী নানা ধরনের যে প্রোপাগান্ডা-ষড়যন্ত্র চলছে, সেটি আরও ডালপালা মেলতে পারে। তাই আগামী নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সূচি নিয়ে ধারণা নয়, এ ব্যাপারে রোডম্যাপ আকারে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা চায় দলটি।
এদিকে নেতাকর্মীরা আগামী বছরের মাঝামাঝি নাগাদ নির্বাচন চায়। বিভিন্ন সময় দলটির অভ্যন্তরীণ আলোচনায় সেটি উঠে আসে। তবে আগামী বছরের শেষ নাগাদ নির্বাচন হলেও সেটির বিরোধিতা করবে না দলটি। এটিকে সহনীয় বিবেচনা করে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে এই সময়টুকু দিতে চায় তারা।
এর আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলন এবং তার ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতন ঘটে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের। বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল হিসেবে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য ৮ আগস্ট গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার করে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরই এই সরকারের প্রধান লক্ষ্য। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সাড়ে চার মাস পার হয়েছে। সরকারের প্রধান কাজ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করা —এ লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলো থেকে জোরালো বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। সংস্কার ও নির্বাচনের বিষয়ে জোর দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি।
এদিকে ২০২৫ সালের শেষে অথবা ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে জানিয়েছেন অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তার ওই বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা, আলোচনা-সমালোচনা। রাজনৈতিক নেতারা বলছেন, নির্দিষ্ট করে নির্বাচনী রোডম্যাপের ঘোষণা দিলে জনগণ আরও বেশি আশান্বিত হতো। ইতিমধ্যে নির্বাচনী রূপরেখা ঘোষণা দেওয়ার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। এ ছাড়া ২০২৫ সালের প্রথমেই নির্বাচনী রূপরেখা না দিতে পারলে আন্দোলন নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ যুগের চিন্তাকে বলেন, এদেশের মানুষ তার নিজের ভোট নিজে দিয়ে সরকার গঠন করতে চায়। সুতরাং এদেশের মানুষ আপনাদের প্রতি যে শ্রদ্ধা রেখেছে সে দায়িত্ববোধ থেকে আপনারা খুব শীঘই একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। এদেশের জনগণ গণতান্ত্রিক ভোটের সরকার চায়। এই গণতান্ত্রিক আন্দোলন কিন্তু শেষ হয়ে যায়নি। যতদিন না পর্যন্ত এদেশে একটি গণতান্ত্রিক অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন না হবে, ততদিন পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।
নির্বাচন বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারকে দাবি জানানো হয়েছে দ্রুত নির্বাচনের জন্য। আমরা আশাবাদী এই নির্বাচন ২০২৫ সালের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এক বছর অতি দ্রুত পেরিয়ে যাবে। আমাদের এখন কাজ, প্রতিটি এলাকার মানুষের কাছে যাওয়া। সুখ দুঃখে তাদের সাথী হওয়া। জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে হবে। আমাদের উপরে জনগণের আস্থা আসলেই নির্বাচনে মানুষ ধানের শীষে ভোট দিবে।
তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে জাতীয় নির্বাচন মুক্ত, স্থানীয় সরকার নির্বাচন মুক্ত নয়। আমরা লক্ষ্য করেছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে দলের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে , কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। এটা হতে পারবে না। এখন কেউ স্থানীয় নির্বাচন মুখে উচ্চারণ করতে পারবেন না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। যখন ওই নির্বাচন আসবে তখন দেখা যাবে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংগঠনের মধ্যে কেউ দলাদলি সৃষ্টি করবেন, কেউ আলাদাভাবে কাজ করবেন। যার যার ব্যক্তিত্ব প্রকাশের শক্তি প্রদর্শন করবেন, এটা সম্পূর্ণভাবে অন্যায় হবে। দলের ক্ষতি হবে। ব্যক্তি স্বার্থের চাইতে দলের স্বার্থের কথা চিন্তা করুন। সামনে নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হবে। সেটার জন্য আমরা আসেন প্রস্তুতি নেই।
তিনি আরো বলেন, বাহিরের শক্তি, পতিত সরকার বা অন্য কোন স্বৈরাচার শক্তি নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করতে পারে। কোন ষড়যন্ত্র যাতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে না পারে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি অন্তবর্তীকালীন সরকার স্বৈরাচারে পরিণত হবে না। অত্যাবশ্যকীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া, দেশ যতদিন থাকবে সংস্কারের কাজ চলবেই। সংস্কারের অজুহাতে গণতন্ত্র বিঘ্নিত করা যাবে না। নির্বাচনকে পিছিয়ে দেওয়া যাবে না।
মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, জনগণের উপর অত্যাচার, সম্পদ নষ্ট, কিংবা চাঁদাবাজির মতো কোনো অপকর্মে জড়িত হলে তাদের বিএনপিতে স্থান হবে না। যারা এসব অপকর্মে জড়াবে, তাদের কানে ধরে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। এমনকি আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, প্রয়োজনে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। গত ১৫ বছরে তিনটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি। বিচার বিভাগ থেকে প্রশাসন সবখানে ন্যায়বিচারের অভাব। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাও কুক্ষিগত ছিল আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তারেক রহমান ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের কর্মসূচি দিয়েছেন। এই দফাগুলো বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ একটি সুখী, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। জনগণের উপর অত্যাচার, সম্পদ নষ্ট, কিংবা চাঁদাবাজির মতো কোনো অপকর্মে জড়িত হলে তাদের বিএনপিতে স্থান হবে না। যারা এসব অপকর্মে জড়াবে, তাদের কানে ধরে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে। এমনকি আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন, প্রয়োজনে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। গত ১৫ বছরে তিনটি নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে পারেনি।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, গত ৫ই আগস্ট এর পর থেকে এদেশে যখন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচনে দাবি জানিয়েছে তখনই তারা সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দেওয়ার কথা ভাবছেন না। আমরা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই বিএনপি একটি বৃহত্তর দল গত ১৭টি বছর হাসিনা সরকার কিন্তু হামলা মামলা নির্যাতন করে কিন্তু বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে দাবিয়ে রাখতে পারে নাই। বরং শেখ হাসিনাই হারিয়ে গেছেন, পদত্যাগ করে পালিয়ে গেছেন।
তিনি বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এদেশের শ্রমিক - জনতা একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনকে আরো বেগবান করে তুলেছিল। আমাদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সুদূর ৮ হাজার মাইল দূরে থেকেও এ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদেরকে উৎসাহ ও প্রেরণা দিয়েছিলেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বেগবান করে খুনি হাসিনাকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছিল এবং তিনি পালিয়ে গিয়েছিলেন। পরবর্তীতে এদেশে একটি অন্তর্বতীকালীন সরকার গঠন করা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বারবার বলেছেন আমরা এই সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। আমরা বলতে চাই আমাদের নেতার নির্দেশে আমরা সহযোগিতা করতে চাই। কিন্তু সংস্কারের নামে যদি নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা করেন তাহলে বাংলাদেশের বিশ কোটি মানুষ তা মেনে নেবে না।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাশুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, আমরা আশাবাদী অতি শীগ্রই নির্বাচনের মাধ্যমে দলীয় সরকার গঠন হবে। আমাদের এখন কাজ, প্রতিটি এলাকার মানুষের কাছে যাওয়া। সুখ দুঃখে তাদের সাথী হওয়া। আর এর পাশাপাশি মূল কাজ হলো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা দাবির সুফল জনগণের নিকট পৌঁছে দেওয়া। জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে হবে। আমাদের উপরে জনগণের আস্থা আসলেই নির্বাচনে মানুষ ধানের শীষে ভোট দিবে ইনশাআল্লাহ।