Logo
Logo
×

রাজনীতি

লুটপাট-চাঁদাবাজিতে আ.লীগকে হার মানিয়েছে হিরণ-লিটন

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

লুটপাট-চাঁদাবাজিতে আ.লীগকে হার মানিয়েছে হিরণ-লিটন

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা বিএনপি সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটন।

গত ৫ আগষ্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পটপরিবর্তনের পর বন্দর উপজেলাকে লুটপাট-চাঁদাবাজির মহোৎসবে পরিণত করেছেন সেই উপজেলার সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটন। বন্দর উপজেলায় বিএনপির নাম বিক্রি করে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন হিরণ ও লিটন তাদের শেল্টারে থাকা বন্দরের বিএনপির কয়েকটি ইউনিটের নেতাকর্মীরা।  জানা গেছে, পটপরিবর্তনের শিল্পকারখানায় চাঁদাবাজি, ডিস ব্যবসা, ইন্টারনেট ব্যবসা দখল, মদনপুরসহ এর আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নে থাকা বিভিন্ন গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরী থেকে ওয়েস্টিজ ও ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন মালিক সমিতি দখল, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ভূমিদূস্যতা, বালু মহল, স্কুল কমিটি নিয়ে পায়তারা, রাস্তার টেন্ডার বাজি, মদনপুর স্ট্যান্ডের দুই লাইনের অটো থেকে চাঁদাবাজি, সেখানকার দোয়েল ও স্বদেশ বাসের কাউন্টার থেকে মাসিক ১ লাখ টাকা চাঁদাবাজি, মোটা অংকের টাকায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের শেল্টার দেওয়াসহ ডজনে ডজনে অভিযোগ রয়েছে এই হিরণ ও লিটনের বিরুদ্ধে। যেই অভিযোগ শুধু বন্দর বা নারায়ণগঞ্জে সীমাবদ্ধ নেই। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিএনপির কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
 
সূত্র জানিয়েছে, মদনপুর দেওয়ানবাগ এলাকার চিহ্নিত জমির দালাল ছিলেন এই মাজহারুল ইসলাম হিরণ। জমি দালালির মাধ্যমে খাড়া দলিলসহ নানা কায়দায় বিভিন্ন অসহায়ের জমি দখলে নিয়ে একটি অবস্থানে চলে আসেন হিরণ। তা ছাড়া বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সাথে আতাঁত করে জমির দালালি ও ব্যবসা করতেন এই হিরণ। সেই সুবাদে বিএনপির নেতাকর্মীদের থেকে বেশির ভাগ সময় দিতেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে। এদিকে ২০২২ সালে বিএনপিতে সুবাতাস বইতে দেখে তিনি বিএনপির দায়িত্ব নিতে মরিয়া হয়ে উঠেন। রাজপথে কোন ভূমিকা না রেখেই টাকা বিনিময়ে হাতিয়ে নেন উপজেলা বিএনপির সভাপতির পদ। এর পরপরই কঠোর আন্দোলনমুখী হয়ে পরলে দল প্রায় সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পরতেন বলে জানা যায়। অপর দিকে এক সময়ের ঔষধ কোম্পানীর সেলসম্যান থাকা এই হারুন অর রশিদ লিটন বর্তমানে বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বনে গেছেন। যা নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই। এই লিটনের ভাই ও ছিলেন একজন আওয়ামী লীগ কর্মী। এদিকে ২৮ অক্টোবর বা ছাত্র-জনতার জুলাই-আগষ্টের আন্দোলন কোন জায়গায় ছিলো না তাদের কোন নেতৃত্ব বা নির্দেশনামূলক ভূমিকা।



গত ৫ আগষ্টের পর হিরণ ও লিটনের কর্মকাণ্ডের আমলনামা উল্লেখ করা হলো :



গত ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ত্যাগ করলে টানা ১০/১৫ দিন বন্দরে গড়ে ওঠা শতাধিক শিল্প প্রতিষ্ঠান আগুনে পোড়ানোর হুমকি-ধমকি দিয়ে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে। এ ছাড়াও আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যসহ শতাধিক স্থানে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে প্রায় শত কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে ভুক্তভোগীদের দাবি। বিশস্ত সূত্র জানিয়েছে, গত (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কামতাল এলাকায় অবস্থিত এসএইচকে লেভেল ফ্যাক্টরী থেকে জোর পূর্বক ঝুট ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটে। তা ছাড়া সেখানকার ইউনাইটেড ফ্যাশন গার্মেন্টস থেকে ঝুট ছিনতাইয়ের অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তা ছাড়া মদনপুরে থাকা প্রায় অর্ধশত গার্মেন্টস-ফ্যাক্টরী বর্তমানে এই মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও হারুন অর রশিদ লিটনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এদিকে তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে কেওঢালা এলাকায় অবস্থিত পারটেক্স বাড মিলের বাউন্ডারি ভেঙ্গে ৩২ শতাংশ জমি দখলের অভিযোগ।

গত (৬ আগষ্ট) কুমিল্লার সংসদ সদস্য শামীম আহম্মেদের মালিকাধিন উপজেলা মদনপুর ইউপির কেওঢালা এলাকায় অবস্থিত এসকিউ ক্যাবল তৈরির ফ্যাক্টরীতে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজারুল ইসলাম হিরণের ছত্রছায়ায় জেলা জাতীয় পার্টির নেতা জাকার মোল্লা ও তার ভাই শাহজাহান মোল্লা সাজা, মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুন, সহসভাপতি শাহজাহান, গোলাপ, মাহবুবসহ ২০/২৫ জনের একটি দল হামলা চালিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ। এ সময় নগদ ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন কর্তৃপক্ষ।

একই কায়দায় একই এলাকায় অবস্থিত পোলার গে¬াব ফ্যাক্টরী থেকে ২ লাখ টাকা ও বেঙ্গল গেরেট ওয়েল, টাইলসের গোডাউন থেকে ৬৫ হাজার টাকা ও দুইটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। তা ছাড়া চুনা পাথরের ফ্যাক্টরী থেকে ৫ লাখ, আমজাদ ডাক্তারের বাসায় হামলা ও লুটপাট, একই সাথে ধামগড়ের বাবু মেম্বারের উপরে হামলা চালিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করলে চাঁদা দিতে না চাইলে তার বাসায় হামলা ও তাকে চারটি মামলার আসামী করা হয় বলে জানা গেছে। আরো রয়েছে, ধামগড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও এএসআরএম এর ঠিকাদার শরীফ হোসেনের কাছ থেকে ১০ টাকা হাতিয়ে নেয় হিরণ ও লিটন। ধামগড় ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড মেম্বার ও শেখ রাসেল ক্রীড়া একাডেমীর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা ভয়-ভীতি দেখিয়ে হাতিয়ে নেন এই হিরণ ও লিটন। তা ছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ধামগড় ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড মেম্বারের কাছ থেকে সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান মাকসুদ ৫ লাখ ও মাজহারুল ইসলাম হিরণ ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। ১৩ লাখ টাকার বিনিময়ে বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম আহম্মেদকে মামলা থেকে অবহৃতিসহ ছাত্রলীগ নেতা অহিদুজ্জামান, ধামগড় ইউনিয়নের মেম্বার আইয়ুব আলী, ধামগড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী শরীফ হোসেন সহ বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতাদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে নিজ এলাকায় পুনর্বাসনের অভিযোগ রয়েছে। মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ধামগড় ইউপির হালুয়াপাড়া এলাকায় অবস্থিত শেখ জামাল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও বন্দর উপজেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সম্পাদীকা শামীমা আক্তারকে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে গত ৩ রা  ডিসেম্বর  ইউএনও  বরাবর অভিযোগ দায়ের করে শিক্ষার্থীরা। এ প্রেক্ষিতে স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ১০ ডিসেম্বর প্রধান শিক্ষিকাকে বরখাস্ত করার পর প্রধান শিক্ষিকাকে আবরো পুনর্বহাল করতে চাপ প্রয়োগ ও হুমকির অভিযোগ রয়েছে মাজহারুল ইসলাম  হিরণের বিরুদ্ধে।


এদিকে ধামঘর ইউনিয়নের এক শিল্পপতি সাদেক আলীর একটি জায়গা ৩০ লাখ টাকার বিনিময়ে দখল করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই হিরণ ও লিটনের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া মদনপুরের দুই পাশের স্ট্যান্ডের প্রায় ৫০০/৬০০ সিএনজি থেকে নিয়মিত ৫০ টাকা করে চাঁদাবাজির অভিযোগসহ মদনপুর স্ট্যান্ডে থাকা স্বদেশ ও দোয়েল বাস কাউন্টার থেকে মাসিক ১ লাখ টাকা চাঁদাবাজি, তা ছাড়া সেখানকার একতা মার্কেটে কোন সদস্য পদ না থেকে ও বিএনপির সভাপতি পদের জোর খাটিয়ে সেই মার্কেটের সভাপতি বনে গেছেন। যা নিয়ে কিছুদিন পূর্বে নারায়ণগঞ্জ কোট প্রাঙ্গনে মদনপুর এলাকার কবিল বাহিনীর দ্বারা মারধরের শিকার হয়েছিলেন এই সভাপতি হিরণ। বর্তমানে শামসুজোহা স্কুল, মালিবাগ স্কুল, শেখ জামাল স্কুলে মোটা অংকের টাকা বিনিময়ে কমিটি গঠনে পায়তারায় মগ্ন রয়েছেন। আর এছাড়া বর্তমানে কলাগাছিয়া ইউনিয়নে রাস্তার টেন্ডার নিয়ে কয়েকদিন যাবৎ হিরণ-লিটন গ্রুপ ও বন্দর উপজেলা যুবদলের একটি গ্রুপের সাথে বাকবন্ডিতা নিয়ে সমস্যা চলমান যা যে কোন সময় সংঘর্ষে মোড় নিতে পারে। এভাবেই বিভিন্ন কায়দায় বন্দর উপজেলা জুড়ে বাণিজ্যে চালিয়ে যাচ্ছে হিরণ ও লিটন এ ছাড়া তাদের সাথে আরো রয়েছে,ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদ খন্দকার, মদনপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মামুন ভূঁইয়া, সিনিয়র সহসভাপতি শাহাজাহান ভূঁইয়া, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তারা মিয়াসহ আরো বেশ কয়েকজন।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন