বিএনপি নেতাকর্মীদের তারেক রহমানের সতর্কবানী
ভুল করলে জনগণ আবার কোনো একটা কিছু বুঝিয়ে দেবে
যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
তারেক রহমান ও নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাকর্মী
দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে আওয়ামী দুঃশাসনে জনজীবন অতিষ্ঠ। একসময় বাধ্য হয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে মাঠে নামে জনগণ। আর তাতেই পতন হয় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকারের। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর জনগণ কিছু সময়ের জন্য হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। তবে দেশের অন্যতম একটি বড় দল বিএনপির পরিচয়ে কিছু নেতাকর্মীর কর্মকাণ্ডে আবারো জনগণের মাঝে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। নারায়ণগঞ্জের প্রত্যেকটি থানা এলকায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে অভিযোগের পাহাড় জমতে থাকে।
দখল, চাঁদাবাজি, লুটপাট, ঝুট ব্যবসা দখল, ঘাট দখল, হাটবাজার দখল, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দখল, জায়গা দখল, ডকইয়ার্ড, নৌচাঁদাবাজি, ডিস ব্যবসা, জমি দখল, বালু ব্যবসাসহ প্রায় প্রত্যেক জায়গাতেই বিএনপির পরিচয়ে একদল লুটেরা মাঠে নামে। এতে ব্যাপকভাবে বিএনপির মতো বড় দলের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়। এব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বেশ কয়েকটি কমিটি ভেঙে দেয়, বিএনপির বিতর্কিত নেতাদের বিরুদ্ধেও শক্ত ব্যবস্থা নিতে তৎপর হয়। গত ৫ আগস্টের পর দখল-প্রভাব বিস্তার নিয়ে বিএনপির মধ্যেই বেশ কয়েকটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে এভাবে চলতে থাকলে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা অনেক হ্রাস পাবে বলে মত দিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই বিষয়টি আমলে নিয়ে গতকাল বিএনপি নেতার্কীদের সতর্ককরেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপি আয়োজিত আলোচনাসভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে দেয়া বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণ আমাদের শক্তি, জনগণই আমাদের সব কিছু। তাই আসুন, আমরা জনগণের পাশে থাকি, জনগণের সঙ্গে থাকি। ‘আমি গত কয়েক মাস ধরে বলছি, আপনারা যত সহজ ভাবছেন সামনের নির্বাচন এত সহজ নয়। নিজের মনে যতই বড়াই করুন, জনগণ পাশে না থাকলে সব অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে। ৫ আগস্ট জনগণ তাদের শক্তি বুঝিয়ে দিয়েছে। কাজেই আমরা যদি ভুল করি জনগণ আবার কোনো একটা কিছু বুঝিয়ে দেবে। তখন কিন্তু পস্তাতে হবে, হায়-হুতাশ করতে হবে শহীদ জিয়াকে সত্যিকারভাবে আমাদের স্মরণ করতে হয়, যদি তাকে সত্যিকারভাবে সম্মান জানাতে হয়, তবে জনগণকে ভালোবাসুন। বেগম খালেদা সবচেয়ে খুশি হবেন, যখন দেখবেন জনগণ সমর্থন দিয়েছে বিএনপির প্রতি।’
দলের সব নেতা সমান উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা কে ছোট নেতা, কে গ্রামের নেতা, কে ইউনিয়নের নেতা, কে বড় নেতা, কে বিভাগীয় নেতা, কে কেন্দ্রীয় নেতা সেভাবে দেখি না। বিষয়টি হচ্ছে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে হবে। আমাদের এমনভাবে দাঁড়াতে হবে, যাতে জনগণ বুঝতে পারে আমরা তাদের সাথে আছি। জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা সেভাবে তাদের পাশে থাকি। আজকে রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে এই হোক আমাদের শপথ, এই হোক আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
দলের নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, ‘আপনার চারপাশের বহিরাগত মোটরসাইকেলওয়ালাদের ভিড় করতে দেবেন না। আপনারা শহীদ জিয়াউর রহমানের জানাজার চিত্রটা মনে করবেন এবং দয়া করে আপনারা খারাপ কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকবেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘অনেকেই বলেন একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে, বিএনপির সর্বোচ্চ সম্ভাবনা আছে সরকার গঠনের। কিন্তু দেখা গেল আমাদের কিছু নেতাকর্মী বিভ্রান্ত হয়ে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করল, যেখানে অন্য কেউ সরকার গঠন করল। তখন কি আপনি মনে করেন আপনি ভালো থাকতে পারবেন? বিএনপির নেতাকর্মীরা কি ভালো থাকতে পারবে?’ তার এ প্রশ্নের জবাবে রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে কর্মীরা সমস্বরে ‘না’ বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘নিজেকে যত বড় মনে করি না কেন, জনগণ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং নাম বলব না কিছু কিছু রাজনৈতিক শক্তি যেই হোক না কেন, ছোট-বড় হোক না কেনো তারা বিভিন্নভাবে আমাদের বিপক্ষে এই বহিরাগত মোটরসাইকেলওয়ালাদের কিছু কাজকর্মের কারণে আমাদের নেতাকর্মীদের যুক্ত করে কিছু কিছু কথা বলার চেষ্টা করছে। আমাদের এই ব্যাপারে সতর্ক ও শক্ত হতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, উত্তরের আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব প্রমুখ।