নারায়ণগঞ্জের গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমান যখনই নিজ দল বা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নানান বক্তব্যে কোনঠাসা হয়ে পড়তেন। তখনই নিজের অবস্থান জানান দিতে শহরের ২ নং গেইটে সড়কের এক পাশ বন্ধ করে ভেন্যু করে বিশাল সমাবেশের ডাক দিতেন। যার মাধ্যমে সড়কে যানজটসহ আশপাশের দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের বিশাল ক্ষতির সম্মূখিন হতে হতো। মানুষ তার সমাবেশকে বেশির ভাগ সময় সাধুবাদ না জানিয়ে গালিগালাজ করতেন।

ঠিক একইভাবে গতকাল মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) ভোর সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ শহরের ডনচেম্বার এলাকায় আদমজী-চাষাঢ়া সড়কের একপাশ প্রায় ১৬ ঘন্টা বন্ধ করে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মীসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর যার সভাপতিত্ব করেছেন নগরীর সাবেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোমিনুল্লাহ ডেবিডের ভাগিনা পরিবহন মাফিয়া শাখাওয়াত হোসেন রানা। যা নিয়ে জনসাধারণ বিএনপির প্রতি ভিন্নমত প্রকাশ করছেন। সকলেই বলছেন, আওয়ামী লীগের সেই সন্ত্রাসী শামীম ওসমানের মতো জনগণকে ভোগান্তি দেওয়া শুরু করেছেন মিশনপাড়ার এই স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রানা। তা ছাড়া এর আগে, সোমবার রাত থেকেই রাস্তার একপাশ সম্পূর্ণ বন্ধ করে সম্মেলনের মঞ্চ তৈরির কাজ শুরু হয়। ওইদিন রাত থেকেই সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল অভিযোগ রয়েছে। এদিকে কর্মী সম্মেলনে প্রায় ১৬ ঘণ্টা এক পাশের সড়ক বন্ধ থাকায় হাসপাতালে থাকা রোগী ও সড়কে চলাচলকারী মানুষকে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এদিকে সকলেই বলছেন হোসিয়ারী সমিতির ভিতরে বা মহানগরের আওতাধীন বরফকল মাঠে এই কর্মী সভার আয়োজন করা হলে কোন ভোগান্তি লক্ষ্য করা যেত না। কিন্তু এ সব না করে মিশনপাড়ায় নিজ এলাকায় অবস্থান শক্ত করতে শাওয়াত হোসেন রানা এই বিশৃঙ্খলাপূর্ন কর্মী সভা রাস্তা বন্ধ করে দাপট দেখিয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , সমাবেশকে ঘিরে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের আগমন ঘটে এই এলাকায়। এর ফলে সড়কে সৃষ্টি হয় যানজটের। পাশাপাশি রোগীদের সুবিধা-অসুবিধা উপেক্ষা করেই চলে উচ্চশব্দে সমাবেশের মাইক। বেসরকারি হাসপাতালের সামনে শব্দ দূষণ হলেও ভয়ে এর প্রতিবাদ করার সাহস করেনি কেউ। তা ছাড়া এক পাশের প্রায় ৮/১০ টি দোকান বন্ধ রয়েছে কর্মী সম্মেলনকে ঘিরে। এদিকে মধ্যরাত থেকেই মঞ্চ প্রস্তুত করে সড়ক আটকে রাখলেও সভার কার্যক্রম শুরু হয় দুপুর ২টা থেকে। বিপুল নেতাকর্মীর অবস্থান এবং সড়ক আটকে রাখার কারণে যানবাহনের চাপ বাড়ে চাষাঢ়া থেকে খানপুরমুখী সড়কে।

এদিকে একাধিক পথচারী বলেন, বিএনপির হাইকমান্ডের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন সময় বক্তব্যে বলেন জনগণ বিরক্ত হয় এমন কর্মকাণ্ড নিজেদের জড়িয়ে ফেলার ব্যাপারে দল নিরুৎসাহিত করছেন। কিন্তু তাদের শাখার নেতারাই আজকে ভোগান্তি দিচ্ছেন সাধারণ জনগণকে। এদিকে তাদের এই রাস্তা বন্ধ করে জনগণকে ভোগান্তি দেওয়া পোগ্রামে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসানও উপস্থিত। আগামীতে এদের কর্মকাণ্ডে জনসমর্থন হারাবে বিএনপি।

এ বিষয়ে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানা বলেন, এখানে আগেও অনেক সভা-সমাবেশ হয়েছে। রাস্তায় সভা-সমাবেশ নতুন কিছু নয়। তাছাড়া এখানে সভার বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি অবগত নয় বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) জাকির হোসেন। তিনি বলেন, রাস্তার উপর সভা সমাবেশের কোনো অনুমতি আমরা দেই না। শহীদ মিনার বা মানুষের চলাফেরায় অসুবিধা হয় না, এমন স্থানে সভা-সমাবেশের অনুমতি আমরা দিয়ে থাকি। স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রোগ্রামের বিষয়ে আমাদের তেমন কিছু জানা নেই।