স্বৈরাচারের সমর্থনে বিভিন্ন পোস্টার
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতন ঘটে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে। গত ১৬ বছর টানা দেশের মানুষকে জিম্মি করে হেন অপকর্ম বাদ রাখেনি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ সমর্থিত লোকজন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলে সময়ের সাথে সাথে আওয়ামী লীগের কর্মীসমর্থকদের বিভিন্ন দলের কর্মীসমর্থকরা নানা সুবিধা নিয়ে প্রশ্রয় দিয়েছে। নারায়ণগঞ্জেও ব্যাপক হারে আওয়ামী লীগের বিতর্কিতদের পুনর্বাসন করার খবর পাওয়া গেছে। এবার সেসবের মাসুল দেয়া শুরু হয়েছে। এর নমুনা হিসেবে ফ্যাসিস্টদের বিদায়ের পরেও পোস্টার টানিয়ে আবারও ফ্যাসিস্টদের গুনকির্তন করে পোস্টার সাটানো হয়েছে শহরের নানা প্রান্তে। এতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের বিগত দিনে নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সামলোচিত হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল গুলোর অভিযোগ তারা পালিয়ে যাওয়ার আগে ২০১৮ সনের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনের ভোট রাতে করে ফেলে। তাদের সেই বদনাম এখনো মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে রয়েছে। তার রেশ না কাটতে এবার নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ছেলেরা রাতের বেলা পালিয়ে পোষ্টার ব্যানার টানিয়েছে। যা নিয়ে শহরে হৈ চৈ শরু হয়ে গেছে। সেই সাথে সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বোদ্ধ মহল প্রশ্ন তুলেন কারা রাতের বেলা এই পোষ্টার পেষ্টিং করেছে। যেই দলের সভানেত্রী ইতোমধ্যে পালিয়েছে। তাহলে তাদের পোষ্টার টানালো কারা। যা নিয়ে ইসলামী ছাত্র শিবির প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
এদিকে জানাযায়, নারায়ণগঞ্জ শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থান ও সরকারি দপ্তরের দেয়ালে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। পোস্টারে বড় করে লেখা রয়েছে শেখ হাসিনাতেই আস্থা। অথচ গণঅভ্যুত্থানের মুখে পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জের‘গডফাদার’ খ্যাত সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়নের ছবি দেখা যায়। পোষ্টারে নিচে লেখা রয়েছে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগ। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা কালিন সময়ে জেলা ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করেন। যা এখনো কমিটি বিহীন হয়ে রয়েছে। তাহলে প্রশ্ন উঠেছে কমিটি বিহীন সংগঠনের কারা পোষ্টার পেষ্টিং করলো। ২৩ জানুয়ারি দিবাগত মধ্যরাতে এসব পোস্টার সাঁটানো হয়।
সরকারি তোলারাম কলেজ, জেলা পরিষদের ডাক বাংলো, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের প্রধান ফটকের দেয়াল, সরকারি মহিলা কলেজ সহ কয়েকটি স্থানে এসব পোস্টার সাঁটানো হয়েছে। যা গতকাল দিনের বেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনদের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। আর এই নিয়ে ক্ষোভ তৈরী হয় ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থী দের প্রতিক্রিয়া তৈরী হয়। এছাড়া নিষিদ্ধ এই ছাত্র সংগঠনের এই পোস্টারিং-এর বিরুদ্ধে ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা একত্রে শহরে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন। তারা পোস্টারিং করা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনারও দাবি জানিয়েছেন।
২০২৪ সনের জুলাই-আগস্টে নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে শামীম ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর লোকজন। একই সাথে শামীম ওসমানের নেতৃত্বে তার ছেলে ইমতিনান ওসমান অয়ন, শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটুসহ তার অনুসারী আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীরা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী-জনতার উপর অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছেন। তাদের এই সশস্ত্র হামলার ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। গত বছরের ৫ আগষ্ট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার সাথে নারায়ণগঞ্জে ছাত্র জনতার উপর গুলি চালানো শামীম ওসমান সহ তার সাঙ্গ পাঙ্গরাও পালিয়ে রয়েছে। কিন্তু প্রায় ছয় মাস পড়ে তার অনুসারীরা হঠাৎ করে পোষ্টার টানিয়ে আলোচনায় আসেন।
তথ্যমতে , ইতোমধ্যে শামীম ওসমান, ওয়ন ওসমান সহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে নারী ও শিশুসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। ১৯ জুলাই শামীম ওসমান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী প্রকাশ্যে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়ক ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে আন্দোলনকারীদের দমাতে নির্বিচারে গুলি চালায়। ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্তও ছিল শামীম ওসমানের সন্ত্রাসী বাহিনীর সশস্ত্র মহড়া। যখনি শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়েছে তা প্রকাশ হয় তখন থেকে ওসমান পরিবারের কেউ দেখা যায় নাই। যদিও কয়েক মাসে পড়ে প্রথমে ভারতে, পরে আরব আমিরাতের দুবাইয়ে তাকে দেখা গেছে। তার অনুসারী ঘনিষ্ঠদেরকেও তিনি সেখানে ব্যবস্থা করেন।
ছাত্র শিবিরের নারায়ণগঞ্জ মহানগর সাধারণ সম্পাদক অমিত হাসান বলেন, ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাতের আধারে শহরে পোস্টার টানানোর মাধ্যমে জানান দেয়া সুযোগ পেয়েছে প্রশাসনের দুর্বলতার কারণে। বিগত সময়ে আমরা বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি অথচ নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এখন রাতের অন্ধকারে নিজেদের উপস্থিতি জানান দেয় এটা প্রশাসনের ব্যর্থতা।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, গত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের গুন্ডা বাহিনীর অত্যাচারে ছাত্রসমাজের নাভিশ্বাস অবস্থায় পার করেছে। যখনই তা উত্তোরণ হলো, ঠিক তখই প্রশাসনের নাকের ডগায় খুনি হাসিনা ও শামীম ওসমানের ছবি সম্বলিত পোস্টার লাগিয়েছে ছাত্রলীগ। আমরা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন দেয়ালে সাঁটানো নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের পোস্টারের ছবি দ্রুত সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সকালে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা পোস্টারগুলো ছিঁড়ে ফেলে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি আজিজুল ইসলাম রাজীব বলেন, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ রাতের আঁধারে পোস্টার টাঙানোর মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। তারা রাতের আঁধারে ভোট চুরি করে। এখন দিনে পালিয়ে থাকে রাতে উপস্থিতি জানান দেয়।’
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য শওকত আলী বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী গণহত্যার ছয় মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও যখন আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচার হয় না। তখন তারা এভাবেই নিজেদের স্পর্ধা দেখানোর সাহস পায়।