Logo
Logo
×

রাজনীতি

যুবদলে সাংগঠনিক তৎপরতা

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

যুবদলে সাংগঠনিক তৎপরতা

একটা সময় ছিল যখন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির চেইন অব কমান্ডের ভিত ছিল খুব মজবুত। ফলে কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃত্বসহ কর্মীরাও ছিলেন এই কমান্ডের আওতায়। জেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্ব থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ছিল একটি শৃঙ্খলতার আবদ্ধে। বিশেষ করে ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এই চিত্রটা দেখা যেতো ব্যাপকভাবে। তবে সেসব নেতাদের অনেকেই এখন দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছেন আবার অনেকেই বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে রাজনীতিতে অনেকটাই অনিয়মিত কিংবা বিমূখ হয়ে আছেন।

যার ফলে প্রায় দেড় যুগ সময় বিভিন্ন নিপীড়ন ও নির্যাতনের শিকারে থেকে অনেক ত্যাগ বিনিময়ের পর যখন নারায়ণগঞ্জ বিএনপি একটি সোনালী সময়ে প্রবেশ করে তখনও অভিজ্ঞ, জাঁদরেল ও দাপুটে নেতৃত্বের অভাবে তাদের সম্ভাব্য প্রাপ্য থেকে অনেকটাই দূরে সরে আছেন বলে দাবি করছেন স্থানীয় সচেতন মহলসহ বিএনপির তৃণমূলের সমর্থকগণ।

তাই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে ফেলার পর এবং শীঘ্রই মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ভেঙ্গে নতুন পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে বলে দলের বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে, তখন একটি কার্যকর ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের উপর জোর দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির তৃণমূলসহ শুভাকাঙ্খীরা আশা প্রকাশ করছেন। তাদের মতে এই মুহুর্তে বিএনপির প্রাপ্য ফসল ঘরে তুলতে হলে এসব কমিটিতে যোগ্য, বলিষ্ঠ ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের প্রয়োজন।
 
দলীয় সূত্র থেকে জানা যায়, গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগের স্বৈরাচারী সরকারের পলায়নের বছরখানেক আগেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপিকে শক্তিশালী করার জন্য জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে আহ্ববায়ক কমিটি গঠন করা হয়। যার ফলও হাতেনাতে পায় নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে সবচেয়ে বড় জনসমর্থন পাওয়া এই দলটি। তবে এর সাথে সাথে প্রকাশ পেতে থাকে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির এতদিনের জমে থাকা অন্তর্দ্বন্দ্ব ও নিজেদের প্রভাব বিস্তারের চিত্র। যা দীর্ঘদিন পর নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে ফিরে আসা কর্মসূচীর চাঞ্চল্যে কিছুটা হলেও ভাটা পড়ে। স্থানীয় কর্মী সমর্থকদের মতে নিজেদের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে পারলে যে আন্দোলন সংগ্রামের পারদ অনেকটা উপরে উঠতে পারতো, তা অনেকটাই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে দলের বিভিন্ন মহলের অভিমত। তাদের মতে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী সরকারের পলায়নের পর যখন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির দাপট তুঙ্গে থাকার কথা, সেই সময়টাতেই দলীয় বিভিন্ন নেতাদের স্ব-স্ব আধিপত্য বিস্তারসহ দীর্ঘদিনের না পাওয়া নিজেদের আর্থিক লেনদেনের শূন্যস্থান পূরণ করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। ফলে নেতৃত্বের উপর শুধু নামেই ভরসা অর্থাৎ নেতৃত্বের নাম ভাঙ্গিয়ে দাপট দেখাতে শুরু করলেও চেইন অব কমান্ড মুখ থুবরে পড়ে।
 
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির আগামী দিনের কমিটিগুলোতে কি ধরণের নেতৃত্ব চান এই বিষয়ে মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, আমি মনে করি যারা সংগঠনের দায়িত্বকে আমানত হিসেবে নিয়ে কাজ করবে, যারা মানুষের পাশে থাকবে এবং মানুষের সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে না, মানুষের আস্থার জায়গাগুলো যারা তৈরি করতে পারবে, তারাই আগামী দিনের নেতৃত্বে আসবে। তারা যেন মানুষের মন জয় করতে পারে এবং তাদের দ্বারা যেন দলের ভাবমুতি ক্ষুন্ন না হয়। তিনি বলেন, আমাদের মহানগর যুবদলের ৫১ সদস্যের বাইরে কারো কোন নেতৃত্ব দেওয়া বা নাম ব্যবহার করার সুযোগ নাই। আগামী দিনে যারা বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃত্বে আসবে সেখানে সংগঠনের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে এমন লোক জায়গা পাবে না। এখানে যারা যুব দলের নাম বিক্রি করছে আসলেও তারা যুব দলের কেউ না। সুতরাং দীর্ঘদিন যারা সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত তারা কখনও-ই সংগঠনের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হয় এমন কাজ করবে না। যারা সংগঠনের নাম বিক্রি করে নেতার পরিচয় দেয়, তাদের যদি সংগঠনে কোন পদ না থাকে তাহলে তারা কিসের নেতা! যারা সংগঠনের বাইরে থেকে দলের ভাবমুর্তি নষ্ট করছে তারা শাস্তির আওতায় আসবে। আর যে সংগঠনে থেকেই অপকর্ম করবে, তাদের বিরুদ্ধে সংগঠন ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
 
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান সেই ধরণের নেতৃত্ব চান, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ভালো থাকবে, যেকোন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে যেকোন সমস্যার সমাধানে যার সক্ষমতা থাকবে সেই ধরণের নেতৃত্বকেই তিনি দায়িত্বে বসাতে চাচ্ছেন। যে কি না নারায়ণগঞ্জের মানুষকে একটু শান্তিতে রাখতে পারবে, সব ধরণের নির্যাতন ও দুর্নীতির ঊর্ধ্বে উঠে গিয়ে নারায়ণগঞ্জকে সাজাতে পারবে তাদেরকেই মূল নেতৃত্বে নিয়ে আসবে বলে আমি বিশ্বাস করি। তিনি বলেন, আমাদের নেতা তারেক রহমান সকল শ্রেণির মানুষ যাতে ভালো থাকে তার জন্য ৩১ দফা বাস্তবায়নে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে কোন বৈষম্য থাকবে না, গডফাদার থাকবে না এবং সে অনুযায়ী আমরা সাধারণ মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তো বিশৃঙ্খলা হচ্ছে, আমরা যখন জানতে পারছি, তখন সেখানে যাচাই করে দেখছি যে সেখানে বিএনপির কোন সম্পৃক্ততা নেই। তবে ইতিপূর্বে যারা এই দলের সাথে থেকে কিংবা দলের পদ ব্যবহার করে যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, চাঁদাবাজি কিংবা দখলদারি কাজে সাথে লিপ্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি, আমরা এবং আমাদের দল তাদেরকে বহিষ্কার করেছি। এ সময় তিনি সোনারগাঁ ও রূপগঞ্জের কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কার করার কথা উল্লেখ করেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান এই বিষয়ে কাউকে ছাড় না দেওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছেন। সে যত বড় বা যত সিনিয়র নেতাই হোক না কেন তাকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন