Logo
Logo
×

রাজনীতি

ওসমান সন্ত্রাসীরা নারায়ণগঞ্জকে কিছুই দেয়নি : জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান

Icon

লতিফ রানা

প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

ওসমান সন্ত্রাসীরা নারায়ণগঞ্জকে কিছুই দেয়নি : জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান

গতকাল ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৯ টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ওসমানী পৌর স্টোডিয়ামে নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াত আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।

ওসমান সন্ত্রাসীরা নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজত্ব দাম্ভিকতা দিয়ে কায়েম করলেও নারায়ণগঞ্জবাসীকে তারা কিছুই দেয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকারের মনোনীত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আমার অনেক আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের একজন আমির ছিলেন, এই নারায়ণগঞ্জের গডফাদার খ্যাত একজন দুর্ধর্ষ লোক মহাসড়কের পাশে ৭২ ফুট লম্বা একটি ব্যানার টানিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানে লেখা ছিল ওমকের (গোলাম আজমের) প্রবেশ নিষিদ্ধ। আরেক ধাপ এগিয়ে তিনি (শামীম ওসমান) নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে একটা সময় বলে রেখেছিলেন, ‘ডিসি এসপি সাহেব, আমার নামে খুনের একটি অগ্রীম মামলা দায়ের করে রাখেন। আমি অধ্যাপক গোলাম আজমকে খুন করতে চাই।’ সেই গডফাদারের সুযোগ হয়নি সরাসরি তাকে খুন করার। স্বৈরাচারী সরকারের জুলুমের শিকার হয়ে কারাগারে থাকাবস্থায় তিনি এই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। দীর্ঘ ৩৯ বছর পর গতকাল ৭ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সকাল ৯ টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ওসমানী পৌর স্টোডিয়ামে নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াত আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
 
নারায়ণগঞ্জবাসীর ভাগ্যেন্নয়নে কিছুই জোটেনি উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, যুগ যুগ ধরে নারায়ণগঞ্জবাসী বড় কষ্টে আছেন। নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রাখা হয়েছিল। এই অধ্যাপক গোলাম আজমকেই তিনি নারায়ণগঞ্জের মাটিতে নিষিদ্ধ করেছিলেন। যে ভাই এই নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন, আজকে তিনি কোথায়, তিনি কি নারায়ণগঞ্জে আছেন? অহঙ্কার ভালো জিনিস নয়। দাম্ভিকতা দেখাতে নাই, ক্ষমতার জোরে ছড়ি ঘুরাতে নাই, মানুষকে খুন করতে নাই, সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দিতে নাই, সন্ত্রাসীদের লালন করতে নাই। এই কাজগুলো যারা করেন, দুনিয়াতেই তারা একটি করুন পরিণতি ভোগ করেন এবং আখেরাতের আদালতের বিচারে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে শূলে চড়াবেন। সেই শূল পৃথিবীতে বিদ্যমান শূলের মতো নয়, সেটা আগুনের মহাকুণ্ড। আল্লাহকে ভয় করুন, দাম্ভিকতা অহংকার পরিহার করুন।


সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, ঢাকা অঞ্চল দক্ষিণের পরিচালক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য  সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিন আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য  মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ  সদস্য মাওলানা মইনুদ্দিন আহমদ, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য এডভোকেট মশিউল আলম, কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল মান্নান,  নারায়ণগঞ্জ জেলা আমির মমিনুল হক সরকার, মহানগরী নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম, মুন্সীগঞ্জ জেলা আমির আ য ম  রুহুল কুদ্দুস , নরসিংদী জেলা আমির মাওলানা মোছলেহুদ্দিন , ঢাকা জেলা আমির মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন।  

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রেীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল জব্বারের সভাপতিত্বে সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য  ডক্টর ইকবাল হোসাইন ভূঁইয়া, জেলা জামায়াত নেতা অধ্যাপক ইলিয়াস মোল্লা, আনোয়ার হোসেন মোল্লা,  মহানগরী শিবির সভাপতি হাফেজ মো ইসমাইল হোসাইন, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু সুফিয়ান।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরী সেক্রেটারি ইঞ্জিনিয়ার মানোয়ার হোসাইন ও জেলা সেক্রেটারি হাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এসময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, খেলাফত মজলিসের জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মিজানুর রহমান , মহানগরী সেক্রেটারি ইলিয়াস আহমদ, পূজা উদযাপন কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন,

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটি  নারায়ণগঞ্জ মহানগর সভাপতি বিষ্ণুপদ সাহা, সাধারণ সম্পাদক বিষ্ণু পদ সাহা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট জয় কে রায় চৌধুরী বাপ্পি । এসময় মহানগরী ও জেলার সকল কর্ম পরিষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

রাজধানীর লাগোয়া এবং দেশের অর্থনীতি ভূমিকা রাখার শীর্ষ তালিকায় থাকা নারায়ণগঞ্জ জেলার উন্নয়নের চিত্র দেখে খুবই মর্মাহত হয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। পুরো জেলাটাই একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক হওয়া সত্ত্বেও এই জেলার এমন করুন অবস্থায় তিনি খুবই ব্যথিত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায় অবস্থিত ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াতের নেতাকর্মীদের উদ্যোগে আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে পূর্ব বক্তাদের বিভিন্ন দাবির কথা উল্লেখ করে তিনি এমন মনোভাব প্রকাশ করেন।
 
জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এই নারায়ণগঞ্জ পুরো জেলাটাই হচ্ছে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক। কিন্তু নারায়ণগঞ্জ মহানগর আমির বলে গেলেন এখানে কোন মেডিকেল কলেজ নাই, কোন বিশ্ববিদ্যালয় নাই, উচ্চতর কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই। কেন নাই; তা জানতে চেয়ে তিনি বলেন, ২৬ লক্ষ মানুষের এই নগরী, ৪০ লক্ষ লোকের এই জেলা, এই জেলা কেন বঞ্চিত হবে। আমরা দেখি যে, কোন কোন জেলা মাত্র তিনটা উপজেলা নিয়ে জেলা। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় আছে, মেডিকেল কলেজ আছে, উন্নততর স্পেশালাইজড হসপিটাল আছে, সেখানে কারিগরি প্রতিষ্ঠান আছে, সেখানে এগ্রিকালচার ইউনিভার্সিটি আছে। তিন উপজেলার জেলায় যদি এটা হতে পারে ৪০ লক্ষ মানুষ কি অপরাধ করেছে যে তাদের এখানে হলো না। যখন গডফাদাররা জমিদারী নিয়েছিলেন তারা কি করেছিলেন? তারা তাদের আপার কাছ থেকে এগুলো আদায় করেননি কেন? কারণ তাদের ধান্দাবাজীই ছিল জমিদারী টিকিয়ে রাখা, মানুষের উপর সন্ত্রাস করা এবং চাঁদাবাজী, লুন্ঠন দখলবাজী চালিয়ে যাওয়া। এটা শুধু নারায়ণগঞ্জের দুর্ভাগ্য না, সারা দেশের দুর্ভাগ্য।
 
তিনি বলেন, এই মাঠ খুবই অপর্যাপ্ত। এখানে যত মানুষ আছে তার চেয়ে তিনগুণ বেশি মানুষ বাইরে। এখানে প্রবেশ করার কোন জায়গা নেই। নারায়ণগঞ্জ গর্বিত একটি জায়গা, এখানে কেন একটা মাঠ থাকবে না, যেখানে প্রশস্তভাবে সকল দলমতের মানুষ এসে কথা বলার সুযোগ পাবে। অতীতে কেন হলো না। আমরা আপনাদের কথা দিচ্ছি, আল্লাহ যদি আমাদের এই দেশবাসীর খেদমত করার সুযোগ দেন, এখানে আজকে যে দাবিগুলো উত্থাপিত হয়েছে, আমরা আপনাদের সকল দাবির সাথে সহমত পোষণ করে এখানে একটি বিশাল মাঠের প্রয়োজন বলে যোগ করে দিলাম। আমরা দায়িত্বে গেলে আপনাদের আর এই দাবিগুলো তুলতে হবে না। আমাদের পবিত্র কর্তব্য হবে এই দাবি বাস্তবায়ন।

জামায়াতে আমির নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন,  এই বাংলাদেশে কে কোন ধর্মের সেটা অবান্তর। ১৮ কোটি মানুষের এই দেশ একটি সাজানো ফুলের বাগান। বাগানের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ফুল থাকে। আল্লাহতায়ালা এই দেশে যাদেরকে পয়দা করেছেন মিলেমিশে তারা হবে এই বাগানের অধিবাসী, এই দেশের একজন গর্বিত নাগরিক। এদেশের সংবিধান সবাইকে সমান সাংবিধানিক অধিকার দিয়েছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, ৫৪ বছর এই জাতিকে ভাগ-বিভক্ত, টুকরা-টুকরা করে রাখা হয়েছে। এ কাজটা সুকৌশলে আওয়ামী লীগ করেছে। তারা প্রথমেই বাংলাদেশে যারা বসবাস করে তারা সকলে বাঙালী, এখানে যারা থাকবেন বাঙালী হয়েই থাকতে হবে বলে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষকে উস্কিয়ে দিলো। সেই যে পার্বত্য চট্টগ্রামে অশান্তি শুরু হলো আজ পর্যন্ত সেখানে শান্তি ফিরে আসেনি। শান্তিবাহিনী নামে একটি বাহিনী তৈরি করার মাধ্যমে তাদের হাতে ১০ হাজার সেনা কর্মকর্তা এবং আমাদের সৈনিক নিহত হলো, সাধারণ মানুষ নিহত হলো। এরপর তারা বললেন যে, বাংলাদেশ দুই ভাগে বিভক্ত। স্বাধীনতার পক্ষে একদল এবং বিপক্ষে একদল। এভাবে জাতিকে আরেকবার ভাগ করা হলো। স্বাধীনতা যুদ্ধে যার যে ভূমিকা ছিল মানুষই তার সাক্ষী। কিন্তু দেশটা স্বাধীন হওয়ার পরে কেউ কি জনসভা করে, রাস্তায় নেমে, মিছিল করে, পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে অথবা কোন জায়গায় একটি বক্তব্য রেখে বলেছে? যে আমরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা মানি না। এমন কোন দলের নাম আপনারা জানেন? এমন কোন দল নাই। সবাই প্রিয় দেশের স্বাধীনতা মেনে নিয়েছে। স্বেচ্ছায়-সানন্দে গ্রহণ করেছে এবং সকলেই স্বাধীনতার উন্নয়নের গর্বিত অংশিদার হতে চায়। কিন্তু যখনই আপনারা জাতিকে ভাগ করে টুকরা টুকরা করে, হিংসার চাষ করে প্রতিহিংসার সংস্কৃতি যখন গড়ে তুলবেন, তখনতো এই জাতি আর ঐক্যবদ্ধ হতে পারবে না। একটি বিভক্ত জাতি কখনও বিশ্বে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবে না। জাতিকে এরকম একটা বিভক্ত করে, জাতির মাথার উপরে কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া হয়। যা বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত করুনভাবে গত ৫৪ বছর তা প্রত্যক্ষ করেছে। স্বাধীনতার মূল্যবোধ এবং পক্ষের শক্তি বলতে আমি যা বুঝি, স্বাধীন  দেশে একজন নাগরিক সংবিধান তাকে যে কয়টা মৌলিক অধিকার দিয়েছে, সব কয়টি অধিকার এদেশে নিশ্চিত হবে। শাসন ক্ষমতায় যারা যাবেন এটা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব, এটা কোন দান নয়। তারা বাঁচার অধিকার, সম্মান রক্ষা, বিচার পাওয়া, স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া, সন্তানের শিক্ষা পাওয়া, মানুষ হিসেবে মর্যাদার সাথে বেঁচে থাকা এবং কাজ করা অধিকার তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। এটাই হলো স্বাধীনতার মূল চেতনা। এই সমাজটা হবে বৈষম্যহীন। কিন্তু তারা তা করেননি।
 
তিনি বলেন, তারা সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে ধংস করেছিল। যতগুলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ছিল সব তার ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তিনটা মৌলিক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান- একটি হচ্ছে আইন প্রনয়নকারী প্রতিষ্ঠান, দ্বিতীয়টা হলো নির্বাহী এবং তৃতীয়টা হলো বিচার ব্যবস্থা। এর সবগুলোকে আওয়ামী লীগ ধংস করেছে। এগুলোকে টুকরো টুকরো করে বিধ্বস্ত করেছে। এমনকি সুপ্রীম কোর্টের বিচারক, এজলাসে দাঁড়িয়ে তিনি বলতে পারেন যে, আমি হচ্ছি শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ। এধরণের কথা যারা বলে তাদের মাধ্যমে কি মানুষকে সুবিচার দেওয়া সম্ভব? তাদের অনেকেই আবার কাউকে ফাঁসির রায় দেওয়ার পর টক-শোতে গিয়ে বলতেন, অমুককে আজকে ফাঁসি দিয়ে এসেছি। এরা যদি রাজনীতি করতে চান, তাহলে তাদের বিচারকের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে আসা উচিৎ। এধরণের বিচারকরা পালিয়ে গিয়েছে। তাদের পালিয়ে যাওয়ার পর এদেশের জনগণ ধারণা করেছে যে, এরা সারে পনের বছর আমাদেরকে বহু জ্বালাতন করেছে। এখন তারা পালিয়ে যাওয়ায় আমরা স্বস্তির নিশ্বাস নিতে পারবো। কিন্তু না, তারা পালিয়ে গিয়েও বাংলাদেশকে অস্থির করার জন্য মাঝে-মধ্যেই উস্কানীমূলক কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন।
 
তিনি বলেন, এদেশে হাজার হাজার মানুষ খুন হলো, গুম হলো, যারা রক্তাক্ত হয়ে পঙ্গু হয়ে এখন হাসপাতালের বেডে কাঁতরাচ্ছে। সে সময় আবার আপনারা উস্কানী দেন। এটাকি বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ সহ্য করবে! সুতরাং উস্কানীর কারণে যত পরিবেশ সৃষ্টি হবে, তার সমুদয় দায় উস্কানীদাতাদেরই নিতে হবে। গেল তাদের আমল, করলো ধংস বাংলাদেশ, জাতিকে করলো বিভক্ত। এখন আমরা কি করতে চাই। আমরা চাই এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, যদি আল্লাহ তায়ালা আমাদের সেই শক্তি দান করেন, যদি দেশের মানুষের ভালোবাসা এবং সমর্থনে, আমরা এদেশের মানুষের খেদমত করার সেবা করার সুযোগ পাই, তাহলে সর্বপ্রথম আমরা হাত দিবো শিক্ষা ব্যবস্থায়। কারণ আমাদের শিক্ষা হচ্ছে কোরআনের তৈরি শিক্ষা। বিজ্ঞানের তৈরি শিক্ষা নয়। যার কারণে আমাদের দেশের বিজ্ঞান কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুয়েট, যুগের পর যুগ সেখান থেকে অনেক শিক্ষিত মানুষ বের হচ্ছেন, কিন্তু জাতিকে তারা কিছু দিতে পারেন না। কারণ সেই শিক্ষার ব্যবস্থা নেই, আবার যারা একটু শিক্ষিত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে নৈতিক মূল্যবোধের অভাব থাকার কারণে তারা জাতির পকেটে আস্তে করে হাত ঢুকিয়ে দেয়। পকেট খালি করে, লুন্ঠন করে, ব্যাংক ডাকাতি করে, সমস্ত অর্থ বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। গত সাড়ে পনের বছরে তারা এই দেশ থেকে বিদেশে ২৬ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। এখন পালিয়ে যাওয়ার পর, আত্মগোপনে যাওয়ার পরে এবং জেলে যাওয়ার পরে এখন যেখানেই তাদের উপরে হাত পড়ছে সেখানেই দুর্গন্ধ বের হয়ে আসছে। সেখানেই অবৈধ সম্পদের খনি বের হয়ে আসছে। সরকারের কাছে স্পষ্ট দাবী, এরা যত টাকা এরা যত টাকা জনগণের চুরি করে দেশে কিংবা বিদেশে জমা করেছে পাচার করেছে, সব টাকা জমা করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে আনতে হবে। সেই টাকা দিয়ে জনগণের সুষম উন্নয়ন করতে হবে।
 
 
আমির বলেন, একটা দেশের তিনটা শিল্প যখন সমান্তরালভাবে সামনের দিকে এগিয়ে যায়, বিশ্ব সভ্যতায় এই দেশ সোনালী গৌরবের শিখরে পৌছে যায়। প্রথম ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে হিউম্যান ইন্ডাস্ট্রি বা মানবশিল্প, এর উপর কোন শিল্প নাই। দুই নম্বর শিল্প হচ্ছে ইলেক্ট্রো ম্যাকানিকেল শিল্প। যেহেতু আমাদের দেশটা ছোট, জমি আমাদের কম। আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের দেশের জমিগুলোকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো প্রতিকারে সরকারের কোন কর্মসূচী নাই। নদীগুলোকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। এগুলো পলি জমে এখন নাই, অনেকগুলো মরে গেছে। তার বুকে এখন চাষাবাদ হয়। অথচ আমাদের মানব দেহে যেমন শিরা-উপশিরা, রক্তপ্রণালী আছে। ঠিক তেমনি আল্লাহর সৃষ্টি এই জমিকে বাঁচানোর জন্য এই নদী-নালা চ্যানেলগুলো হচ্ছে জমির রক্তপ্রণালী। কিন্তু এগুলোকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। জমির রক্তপ্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে জমিগুলোর কি হবে এই নিয়ে কোন গবেষণা নাই, পদক্ষেপ নাই। নদী শুধু ভরেই যাচ্ছে না, তা দখলও করছে। কারা করছে? যাদের রাজনৈতিক শক্তি যত বড়, ক্ষমতায় থাকার সময় তারা এ কাজগুলো করে। সর্বকালে করেছে এখনও চালিয়েছে। এ সমস্ত আবর্জনা সমাজ থেকে দূর করতে হবে। এর পরের তিন নম্বর ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে এগ্রো শিল্প। আমাদের যে পানি আছে, মাটিকে তার উৎকর্ষ ব্যবহার করে এগিয়ে নিতে হবে। এনিয়ে কার কি চিন্তা আছে ৫৪ বছর মানুষ দেখেছে। রাজনীতির ধান্ধা, গদিতে কিভাবে যাবো এবং কিভাবে থাকবো, এখন গদিতে আছি, মেরে-কুটে অবৈধভাবে কালো টাকা এবং পেশি শক্তির বিনিময়ে আগামীতে কিভাবে আবার ক্ষমতায় আসবো। রাজনীতির এটা ধান্ধায় পরিণত হয়েছে। জামায়েতে ইসলামী এই ধান্ধাকে ঘৃণা করে। যারা মানুষকে পণ্য মনে করে আমরা তাদেরকে ঘৃণা করি। আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে সম্মান করতে চাই এবং ভালোবাসতে চাই। যেখানে কোন বৈষম্য থাকবে না, দূর্নীতি এবং দুঃশাসন থাকবে না।
 
আমির আরও বলেন, ৫ আগস্টের পর আলহামদুলিল্লাহ দেশের কোথাও কোন চাঁদাবাজি হয় না, নারায়ণগঞ্জেও হয় না। যদি এগুলো হয়, তাহলে কেন আমাদের এতগুলো মানুষের জীবন জড়লো,এতগুলো মানুষ পঙ্গু হলো। এত রক্তে কেন বাংলাদেশ ভাসলো। আমি বিনয়ের সাথে অনুরোধ করবো। দল-মত-ধর্ম যার যার কিন্তু এই দেশটা আমাদের সবার। এই অপকর্মের সাথে যারাই জড়িত আছেন তাদের কাছে হাত জোর করে অনুরোধ করতে চাই, মেহেরবানী করে এই অপকর্ম ছেড়ে দেন। আপনারা যদি এই অপকর্ম করেন তাহলে শহীদদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। আপনারাও এদেশের নাগরিক। মেহেরবানী করে এগুলো ছেড়ে দেন। মানুষকে স্বস্তিতে বাঁচতে দেনে। কিন্তু এই ধান্ধাবাজি থেকে যদি সরে না আসেন, মনে রাখবেন ‘ওই ওয়ান্ট জাস্টিজ’ বলে আমাদের যে ইয়ং জেনারেশন রাস্তায় নেমে এসেছিল, তারা কিন্তু বুক চিতিয়ে যুদ্ধ করেছে। গুলিকে লুফে নিয়েছিল, শ্লোগান দিয়েছিল ‘বুকের ভিতরে তুমুল ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর’। আর এখন তারা শ্লোগান দিচ্ছে ‘হে আবু সাইয়িদ মুগ্ধ, শেষ হয়নি মোদের যুদ্ধ’। সে যুদ্ধটা হলো যে আবর্জনার কথা বললাম, এগুলো তারা এই সমাজে দেখতে চায় না। আমরা সন্তানদেরকে, যুবসমাজকে কথা দিচ্ছি, তোমাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে বাংলাদেশ জামায়েতে ইসলামী তোমাদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ। এই লড়াইয়ে আমরা তোমাদের সাথে আছি। আগামীর বাংলাদেশ সে সমস্ত বীর লড়াকুদের হাতে আমরা তুলে দিবো। ওরা দেশ চালাবে, আমরা পিছন থেকে তাদের পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করবো। ভুল করলে শক্ত করে টান দিয়ে ধরবো। অনেক ভুল এই জাতি করে ফেলেছে, আর তোমাদের ভুল করতে দেওয়া হবে না। সেখানে হবে একটি স্বপ্নের মানবিক বাংলাদেশ। যেখানে সবাই নিরাপদ থাকবেন।
 
তিনি বলেন, আমরা সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বিশ্বাস করি না। কিন্তু দেশে কোন পরিবর্তন আসলেই বিভিন্ন ধর্মের ভাইয়েরা আতঙ্কে থাকবেন আমরা এটাও চাই না। যদি মসজিদ পাহারা দেওয়ার দরকার না হয়, তাহলে মন্দির, প্যাগোডা, চার্চ কেন পাহারা দিতে হবে। আমরা একটি অহিংসার বাংলাদেশ দেখতে চাই। স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের কোথায় (জামায়াতে ইসলামীর) কোন নেতা কোন কর্মী অন্যায়ভাবে আপনাদের কারও একটুখানি জমি দখল করেছে মেহেরবানী করে আমাদেরকে জানিয়ে সাহায্য করুন। কার ইজ্জতের উপর, কার জীবনের উপর হাত দিয়েছে আমাদের জানতে দিন। আমরা কথা দিচ্ছি তার সুষ্ঠু প্রতিকার করবো, আপনাদের ন্যায় বিচার উপহার দিবো। আর যদি আপনাদের বিবেক বলে যে না, এই দলের নেতা কর্মীরা এসব কাজের সাথে জড়িত না। তাহলে আমরা আপনাদের কথা দিচ্ছি যে, আপনাদের এবং সমস্ত জনগণের নিরাপত্তার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা ক্ষমতায় যাই অথবা না যাই এটা আমাদের মানবিক দায়িত্ব আমরা পালন করবো ইনশাআল্লাহ।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন