৩৯ বছর পর সুশৃঙ্খল জনসভায় সফল জামায়াতে ইসলামী

রাকিবুল ইসলাম
প্রকাশ: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

৩৯ বছর পর সুশৃঙ্খল জনসভায় সফল জামায়াতে ইসলামী
মাত্র দেড় মাস আগে নারায়ণগঞ্জে বিশাল জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেন দলটি। সেই অনুযায়ী গতকাল ৭ ফেব্রুয়ারি ভিন্ন আঙ্গিকে জেলা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর জনসভা সফল ভাবে অনুষ্ঠিত হয় বলে জানান দলটির নেতৃবৃন্দ। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর জনসভাটি শুরু থেকেই শৃঙ্খলা বদ্ধ ছিল। ফতুল্লার ওসমানী পৌর স্টোডিয়ামে অনুষ্ঠিত হওয়া জনসভায় চেয়ারের জায়গায় না হওয়া দলটির নেতাকর্মীরা আগে থেকেই মাঠে তেরপাল বিছিয়ে রাখায় হয়। যাতে করে দলটির আমীরের বক্তব্য নেতাকর্মীরা মনোযোগ দিয়ে শুনতে পারে। জনসভায়ও তাই দেখা গেছে। এছাড়া জনসভায় প্রধান ফটক দিয়ে নেতাকর্মীদের মিছিল নিয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা রাখা হয়। আরেক দিক দিয়ে অতিথিদের প্রবেশের ব্যবস্থা করা হয় যাতে কোন হট্টোগোল না হয়। এছাড়া মাঠের কানা কানায় ভরে বাহিরেও মানুষ দাড়াতে সক্ষম হয় নাই। অথচ গত সাড়ে ১৫ বছরেও আওয়ামী লীগ নারায়ণগেঞ্জ এমন কানায় কানায় পুর্ণ হওয়া মানুষ নিয়ে একটি জনসভা শৃঙ্খলার সাথে করে দেখাতে পারে নাই। এমনকি পুরো মাঠ তারা মানুষের সমাগম করতে পারে নাই। তাই গতকাল নারায়ণগঞ্জে তথাকথিত সিষ্টেমের বাইরে গিয়ে এক ভিন্ন আঙ্গিকে সফল ভাবে বাস্তবায়ন হওয়ায় জামায়াতে ইসলামের জনসভা নিয়ে মানুষের মাঝে আলোচনা তৈরী হয়েছে। সেই সাথে এই জনসভার মাধ্যমে মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে নতুন ভাবে মুল্যায়ন করতে যাচ্ছে। যা গত সপ্তাহে মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির আবদুল জব্বার মন্তব্য করেছেন, জনসভার পর নারায়ণগঞ্জবাসি জামায়াতে ইসলামীকে নতুনভাবে মুল্যায়িত করবে। যা এখন তাই হচ্ছে।
এদিকে সরেজমিনে দেখায় যায়, পূর্ব ঘোষিত জামায়াতে ইসলামীর জনসভায় সময়ের আগেই ভোর থেকে ফতুল্লার ইসদাইর এলাকায় ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে লোকজন আসতে শুরু করে। ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংরোড জুরে স্বেচ্ছাসেবকদের পদচারনায় জনসভায় আসা মিছিল গুলো ছিল শৃঙ্খলাপুর্ণ। তাছাড়া নগরজুরে বিভিন্ন পয়েন্টে পয়েন্টে স্বেচ্ছাসেবীদের উপস্থিতির মাধ্যমে নগরীর শৃঙ্খলা বজায় রাখা হয়েছে। অপরদিকে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়ক ছিল স্বেচ্ছাসেবক ধারা শৃঙ্খলাপূর্ণ। এছাড়া দলটির স্বেচ্ছাসেবক ছাড়াও সমাবেশ স্থল থেকে শুরু করে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সেই সাথে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার উপস্থিতি ছিলো বলে জানায় পুলিশ প্রশাসন। ভোরের আভাস শেষ হতেই ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামের মাঠে কানায় কানায় পূর্ণ হতে শুরু করে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি। মাঠে লোকের জায়গা না হওয়ায় স্টেডিয়ামের বাহিরে বড় পর্দায় জনসভা দেখার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে ছিল। যার সুবাধে নেতাকর্মীরা বাহিরে অবস্থান করে তারা দলের অতিথিদের বক্তব্য শোনেন। তবে সেখানেও মানুষের জায়গা দেয়া সম্ভব হয়নি, এতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরাতন সড়কে নেতাকর্মীদের উপস্থিতির ভীড় লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু লক্ষাধিক লোকের জনসমাগম হওয়ার পরে কোন হট্টোগোলের ঘটনা ঘটে নাই। যার জন্য রাজনৈতিব মহল থেকে শুরু করে সচেতন মহলে এক ভিন্নরকম জনসভা করায় মানুষের মুখে মুলে পজিটিব ভাবে আলোচনা তৈরী করেছে।
অপরদিকে জনসভার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতের আমীর আব্দুল জব্বার। পরে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য পেশ করেন। শুক্রবার নারায়ণনগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াতের নেতাকর্মীদের আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এছাড়া জনসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল, নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর সাবেক আমির মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমদ, জেলা আমির মমিনুল হক সরকার।
জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমীর ডা শফিকুর রহমান বলেন, যুগ যুগ ধরে কষ্টে আছেন নারায়ণগঞ্জবাসী, নারায়ণগঞ্জকে সন্ত্রাসের রাজধানী বানিয়ে রাখা হয়েছিল। নারায়ণগঞ্জেও যদি চাঁদাবাজি দখলদারি হয়, অফিস আদালতে ঘুষ চলে, তাহলে কেন এতগুলো মানুষের জীবন গেল, কেন এত মানুষ পঙ্গু হলো, কেন এতগুলো রক্তের ফোটা ভাসল? আমি বিনয়ের সাথে দল মত ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে অনুরোধ করব, এই অপকর্মের সাথে যারাই জড়িত আছেন মেহেরবানি করে এই অপকর্মগুলো ছেড়ে দেন। এই অপকর্ম করলে এই শহীদদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। তাদের রক্তের সাথে অপমান করা হবে। ১৮ কোটি মানুষকে অপমান করা হবে। মানুষকে স্বস্তিতে বাঁচতে দেন। শাসন ক্ষমতায় যারা যাবে সকল মানুষের অধিকার নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্ব। এটা কোনো দয়ার দান নয়। বাঁচার অধিকার, সম্মান পাওয়ার অধিকার, বিচার পাওয়ার অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার, সন্তানের শিক্ষা পাওয়ার অধিকার, কাজের অধিকারসহ সবকিছু তাদের হাতে তুলে দিতে হবে। এটাই স্বাধীনতার মূল চেতনা। এই সমাজ হবে বৈষম্যহীন, মানবিক ন্যায় ইনসাফপুর্ন সমাজ ব্যবস্থা।
বিশ্লেষকদের মতে স্বাধীনতা পরবর্তি নারায়ণগঞ্জে এত লোকের সমাগম হওয়া শৃঙ্খলাপুর্ণ জনসভা দেখা যায় নাই। তাছাড়া শান্তিুপুর্ণভাবে কেউ এত সুন্দর ভাবে বিশাল আয়োজন অন্যান্য দলের নেতারা সফল করে দেখাতে পারেন নাই। যদিও ক্ষমতাচ্যুত দলের সাবেক এমপি নিজেরে পেশি শক্তিকে পোক্ত করার জন্য ওসমানী পৌর স্টোডিয়ামে জনসভা করে প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা হুশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু তিনি জামায়াতে ইসলামীর মত এত লোকের সমগাম ঘটাতে পারেন নাই। কিন্তু দীর্ঘ দিন পরে নারায়ণগঞ্জ জামায়াতে ইসলামী সুযোগ পাওয়ায় দলটির নেতাকর্মী নিয়ে বিশাল জনসভা সুন্দরভাবে বাস্তবায়ন করে দেখিয়ে দিয়েছে।