কমিটির প্রথম সমাবেশে ইতিহাস গড়তে চায় জেলা বিএনপি

লিমন দেওয়ান
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

কমিটির প্রথম সমাবেশে ইতিহাস গড়তে চায় জেলা বিএনপি
আওয়ামী লীগের শাসন আমলে ব্যাপক মামলা-হামলা নির্যাতনের মধ্য দিয়েই দীর্ঘ ১৭ বছর কেটেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। এ ছাড়া দলীয় কোন কর্মসূচি ঘোষণা হলেই নানাভাবে কর্মসূচি পালনে বাধার সম্মূখিন হতে নেতাকর্মীরা অনেক সময় আয়োজিত বহু কর্মসূচি পন্ড হওয়ার মতো নজির অহর অহর। কিন্তু ৫ আগষ্টের পর স্বস্তির নি:শ^াস ফেলছে বিএনপি নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে পট পরিবর্তনের পর কয়েক দফায় দলীয় নানা কর্মসূচি পালন করলে ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আজকে নারায়ণগঞ্জে প্রথমবারের মতো শহরের মেট্রোহল মোড়ে বড় জনসমাবেশের করতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি। এ সমাবেশকে ঘিরে নেতা-কর্মীদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা। সমাবেশ সফল করার লক্ষে তারা ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছেন। এদিকে গত ২৪ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে ২ ফেব্রুয়ারী ৫ সদস্য বিশিষ্ট নতুন কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় হাইকমান্ড। যে কমিটিকে ঘিরে বিভিন্ন নেতাকর্মীদের মাঝে আলোচনা-সমালোচনা থাকলে ও আজকের নয়া কমিটির চ্যালেঞ্জের জনসমাবেশের মধ্য দিয়ে সকল সমালোচনা ধুয়ে মুছে একাকার হবে বলছে নেতাকর্মীরা। এদিকে জনসমাবেশটি নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধের দাবী, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও পতিত ফ্যাসিবাদ মোকাবিলার দাবিতে দেশব্যাপী বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি থাকলে ও জেলা বিএনপির মূল টার্গেট নিজেদের শক্তির প্রদর্শন করা।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। এদিকে গতকাল সন্ধ্যায় ভেন্যুস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা বিএনপির নবাগত আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদও জানিয়েছেন লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে আশাবাদ তার। এতে দলীয় নেতা-কর্মীদের বাইরেও জনসাধারণেরও উপস্থিতি ঘটবে বলে জানান তিনি। এর আগে দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসনকালে নারায়ণগঞ্জে সভা, সমাবেশ করার তেমন সুযোগ পায়নি বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। যেকোনো কর্মসূচি পালনে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কখনো প্রশাসনিক তো কখনো আবার আওয়ামী দলীয় নেতা-কর্মীদের। যার ফলে বিএনপি কর্মসূচি পালন করতে পারলেও তা করতে হয়েছে স্বল্প পরিসরে। সেই পরীলক্ষিতে পট পরিবর্তনের পর জেলা বিএনপির এই প্রথম জনসমাবেশে নেতাকর্মীসহ লোকবলের ঢল পরবে বলে বোঝা যাচ্ছে। এদিকে সমাবেশ সুশৃঙ্খল রাখার জন্য সকল ইউনিটের নেতাকর্মীকে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে জেলা কমিটি। নির্দেশনাগুলো হলো, সমাবেশ শুরুর পূর্বেই সমাবেশ স্থলে প্রবেশ ও শেষ পর্যন্ত অবস্থান করা, ব্যক্তিগত ছবি যুক্ত ব্যানার ফেস্টুন বা প্ল্যাকার্ড বহন না করা, ব্যক্তিগত শ্লোগান দেওয়া যাবে না, অতিথি ব্যতিত মঞ্চ ও মঞ্চের নিরাপত্তা বলয়ের প্রবেশ, নারী সহকর্মী এবং অতিথিদেরকে আসন গ্রহনে সহায়তা করা। শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত স্বেচ্ছাসেবকদেরকে আন্তরিক আচরণ করার অনুরোধ করা হয়েছে। আজকের সমাবেশ সফল ও ইতিহাস গড়তে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা একত্রিত হয়ে বিদ্ধপরিকর রয়েছে।
সমাবেশ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, ‘এ জনসভাকে সাধারণ জনসভা হিসেবে মানুষ দেখছে না। গত ১৫ বছর নারায়ণগঞ্জে আমরা সমাবেশগুলো করেছি কিন্তু ভয়ে ভয়ে, সীমিত সময়ে জন্য। সমাবেশে নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেয়া হতো, পুলিশ এবং ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের বাধাগ্রস্থ করতো। আগামীকাল সমাবেশ হবে সম্পূর্ণ ভয়মুক্ত, স্বাধীন দেশে। জনসভাকে কেন্দ্র করে আমারা দেখছি নারায়ণগঞ্জে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। এই জনসভাকে ঘীরে সকলে উৎসুক। আমাদের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ এ সমাবেশে অংশগ্রহণ করবে। মানুষ জানাতে চায় আগামীদিনে বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে কিভাবে দেশ পরিচালনা করবে। সেই বার্তা এখান থেকে তারা নিতে আসবে। জনসভায় প্রধান অতিথি থাকবেন মির্জা আব্বাস। ইনশাল্লাহ আগামীকালের জনসভা হবে নারায়ণগঞ্জে সর্বকালের বৃহৎ জনসভা। এর মধ্যে আমরা কোনো বড় জনসভা করি নাই। কারণ ৬ মাস হয়েছে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতন হয়েছে। আগামীকাল যে জনসভা করবো সেটি হবে, বৃহৎ জনসভা। এর মধ্যে আমরা আর কোনো বড় জনসভা করিনি। জনসভাকে ঘীরে বিএনপি নেতাকর্মীরা উৎসুক হয়ে আছে।’ ‘দীর্ঘদিন পর জনসভার আয়োজন করতে পেরে প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে পারছেন’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর নারায়ণগঞ্জে আমরা এমন একটি জনসভা করছিল। মনে হচ্ছে, প্রাণ খুলে নিশ্বাস নিতে পারছি। কারণ গত ১৫ বছর আমরা নিশ্বাস নিতে পারি নাই। এখানে মুক্ত বাতাশ গ্রহণ করবে। নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসমুক্ত হয়েছে এ মেসেজ যাবে। অন্যান্য জেলার মানুষ জানতো, নারায়ণগঞ্জ একটি সন্ত্রাসের জনপদ, গডফাদারের জনপদ। আগামীকালের জনসভা থেকে আমরা মেসেজ দিতে চাই সারাদেশে, নারায়ণগঞ্জ একটি শান্তির জনপদ। এ জনপদে আর কোনো গডফাদারের জন্ম হবে না। নেতাকর্মী ও আমাদের প্রমাণ করবো বিএনপির হাতে নারায়ণগঞ্জ সুন্দরভাবে পরিচালিত হয়।’
‘এটি ঐতিহাসিক জনসভায় রূপ নিবে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লক্ষাধিক মানুষ এখানে আসবে আমরা ধারণা করছি। এখানে শুধু আমাদের নেতাকর্মীরাই আসবে না সাধারণ মানুষের মধ্যে আগ্রহ দেখছি। প্রচারণা মাইক যে এলাকায় গিয়েছে মানুষ এসেছে, জানতে চেয়েছে কে আসবে। তাদের মধ্যে যে আগ্রহ দেখা গেছে তাতে মনে হয়েছে, সাধারণ মানুষও আসবে।’
জেলা বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু বলেন, বিগত দিনে ঢাকায় বিএনপির যে সকল দলীয় কর্মসূচি আসতো সকল জায়গায় নারায়ণগঞ্জের ব্যাপক ভূমিকা ছিলো। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বলা চলে আগামী কালকের ইতিহাসে স্মরনীয় লক্ষ লক্ষ লোকের জনসমাবেশ হবে।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, আমরা বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশের মানুষের আশা আকাঙ্কার বাস্তবায়ণ ঘটাতে চায় রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে। আর এই সমাবেশটি আমাদের জেলা কমিটির প্রথম সমাবেশ যাকে ঘিরে সকল নেতকার্মীরা জনসমাবেশকে সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি রেখেছেন।
তিনি বলেন, আমাদের এই কর্মসূচির উদ্দেশ্য হলো নিত্য প্রয়োজনী দ্রব্য মুল্যের দামের উর্ধ্বেগতি, আইনশৃঙ্খলার উন্নতির ঘটানোসহ একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হয় সেটার ব্যাপারে মানুষের যে আশা আকাঙ্কা সেটার বাস্তবায়ন ঘটানোর জন্য জেলা বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি। আর এই কর্মসূচিকে ঘিরে আমরা নেতাকর্মীদের যে আগ্রহ লক্ষ্য করতে পাচ্ছি সেই অনুযায়ী এই ভেন্যু অনেকটাই ছোট হয়ে পরে। আর আমরা আশাবাদী এই সমাবেশ একটি ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শরীফ আহম্মেদ টুটুল বলেন, সমাবেশকে সফল করতে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছি। আশা করছি ব্যাপক লোক সমাগমের অংশগ্রহণে আমাদের এই সমাবেশ বাস্তবায়ন হবে।