নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত বিশাল জনসমাবেশে মির্জা আব্বাস
ঘোড়ার আগে গাড়ি চড়তে নেই

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

গতকাল শহরের মেট্রো সিনেমা হল মোড়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ঘোড়ার আগে গাড়ি চড়তে নেই। গ্রামে-গঞ্জে একটি কথা আছে পায়ের তলায় মাটি নেই। এই সরকার স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিয়ে পায়ের তলায় মাটি তৈরি করতে চাচ্ছে। কিন্তু আমরা সংগ্রাম করেছি গণতন্ত্রের জন্য, কথা বলার জন্য, নির্বাচনের জন্য। আমরা স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করি নাই। সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন দেখতে চাই না। সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে অন্য কোন নির্বাচন নাই। সতেরো বছরে বিএনপির পাঁচ হাজার নেতাকর্মী জীবন দিয়েছে। এখনো অনেকে আহত অবস্থায় আছে। আমি নিজে তেরোবার জেল খেটেছি।
গতকাল মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে শহরের মেট্রো সিনেমা হল মোড়ে জেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে বিএনপি এ জনসভার আয়োজন করে।
মির্জা আব্বাস বলেন, প্রশিক্ষিত একটি বিশেষ বাহিনীর লোক, যারা এই দেশে থাকে না। তাদের দিয়ে আমাদের দেশের ৫৭ জন সেনা অফিসারকে হত্যা করানো হয়েছে। আজকে দেশে খুন ডাকাতি ছিনতাই বেড়ে গেছে। যারা এই দেশেকে লুট করেছে তারাই ভারতে বসে বসে চক্রান্ত করছে কীভাবে দেশকে অশান্ত করা যায়।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, সংস্কার সংস্কার করে কান ঝালাপালা করে তুলেছেন। কিন্তু হাতের কাছে যে সংস্কারটি করা প্রয়োজন তা করছেন না। আগষ্টের ২ অথবা ৩ তারিখ এদেশের কিছু কুলাঙ্গার ব্যবসায়ী সেদিন কি বলেছিলো বৈঠকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা শেখ হাসিনার সঙ্গে থাকবে। এমনকি মৃত্যুর পরেও তারা একসঙ্গে থাকবে। ওইসব ব্যবসায়ীদের এখনও গ্রেফতার করা হয়নি। তাদের গ্রেফতার না করলে জীবনেও দ্রব্যমূল্য কমবে না। বিনা পয়সায় ফ্রিতে আপনাদের পরামর্শ দিয়ে দিলাম।
মির্জা আব্বাস আরো বলেন, এই নারায়ণগঞ্জে অনেক কুলাঙ্গার আছে, তারা আজকে ঘরে বসে আছে। তারা ভারতের সাথে কথা বলে বাংলাদেশকে অস্থির করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না। অনেকে বলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলে দেশ চালানো যাবে না। অনেকে আবার তাদের অফিস পরিদর্শন করেছেন। এদের বিরুদ্ধে মামলা থাকার পরেও গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেনো জাতি জানতে চায়। এই সরকারের এসব বিষয়ে একটি বিহীত করাউচিত।
জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা বেনজির আহমেদ, বিএনপির সহ-আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ, সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান দীপু, যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব।
জনসভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি কাজী মনিরুজ্জামান, সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান, মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খাঁন, সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খাঁন টিপু, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এড. এইচ এম আনোয়ার প্রধান, জেলা যুবদলের আহবায়ক সাদেকুর রহমান, সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি প্রমুখ।
সমাবেশে বিএনপির সহ-আর্ন্তজাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেন, এ সরকার সংস্কারের কথা বলে যে সময় নষ্ট করছে, আপনারা এগুলো বন্ধ করেন। আপনাদের (অন্তর্বর্তীকালীন সরকার) মান-সম্মান থাকতে থাকতে অচিরেই একটি নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করেন। আপনারা দেখেছেন এ দেশের মানুষ কীভাবে খুনি হাসিনাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছে। আমি সরকারকে বলতে চাই, সেখান থেকে আপনাদের শিক্ষা নেওয়া উচিত। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংস্কার নিয়ে এখন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার যে কথা বলছে।, আজ যে সংস্কারের কথা বলছে- আমাদের জননেতা তারেক রহমান এ কথা কবে বলেছে, আপনারা সেটা নিশ্চয়ই জানেন। তিন বছর ধরে তারেক রহমান ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন। তিনি দেশের রাষ্ট্রকাঠামো গঠন এবং দেশের সংস্কারের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, এ দেশের জনগণ গণতান্ত্রিক সরকার দেখতে চায়। তারা নিজের ভোট নিজে দিয়ে নিজেদের পছন্দমতো নেতাকে নির্বাচিত এবং পছন্দের সরকারকে দেখতে চান। মানুষ তারেক রহমানকে ভালোবাসে। তার নেতৃত্বে এ দেশের মানুষ প্রত্যেকটি আন্দোলন-সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন কী দুই মাসের আন্দোলনে হয়েছে? বিগত ১৭ বছর ধরে জননেতা তারেক রহমানের নির্দেশে এ আন্দোলন চলেছে। সে আন্দোলন ও যুদ্ধের মাধ্যমে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। তার শেষ ধাপ ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
জেলা বিএনপির অন্যতম কার্যকরী সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা জনসমর্থিত সরকার হতে পারেন, কিন্তু নির্বাচিত সরকার নন। স্বৈরশাসনের সময় যারা অত্যাচার, লুটপাট ও অর্থ পাচার করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। এই বিচার নিশ্চিত করা গেলে ভবিষ্যতে প্রশাসন বা রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা অন্যায় কাজে লিপ্ত হবে না। অল্প ১ মাসের আন্দোলনে স্বৈরাচারের পতন হয়নি। যখন আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায় এবং সর্বস্তরের মানুষ রাজপথে নামে, তখনই স্বৈরাচার প্রাণভয়ে পালিয়ে যায়। অনেকদিন পর নারায়ণগঞ্জে মুক্ত ও স্বাধীনভাবে জেলা বিএনপি সভার আয়োজন করেছে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতি যখন দিশেহারা ছিল, তখন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে জাতিকে মুক্তির পথ দেখিয়েছিলেন। ২০২৪ সালে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। তবে এই বিজয়ের সাথে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের তুলনা হতে পারে না। বিএনপি সবসময় দেশের মানুষের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে এবং এখনও করছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কারের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কিন্তু সরকার এই সংস্কারের কথা বলে জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত করতে চায়, যা গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচন কমিশনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা আগে স্থানীয় নির্বাচন নাকি জাতীয় নির্বাচন দেবে।’
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মামুন মাহমুদ বলেন, আমরা গত ১৭ বছর তিনটি দাবিতে রাজপথে লড়াই সংগ্রাম করেছি। সেই দাবির একটি ছিলো শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সেটি পূরণ হয়েছে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে বাংলাদেশের জনগণের প্রতিরোধের মুখে বিতাড়িত হয়েছে। আরও দুটি দাবি ছিলো, একটি ছিলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আরেকটি ছিলো আমাদের প্রিয় নেতা তারেক রহমানকে বাংলাদেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনতে হবে। এখনো দুটি দাবি পূরণ হয়নি, সুতরাং আমরা আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছেড়ে যাবো না। তাই আপনাদের সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।’
দীর্ঘদিন পরে বাধাহীন ও মুক্ত পরিবেশে বিএনপির জনসভা নিয়ে বেশ আগ্রহ ছিলো জেলাবাসীর। জনসভাকে ঘিরে জেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদেরও ব্যাপক প্রস্তুতি। এমনকি দীর্ঘদিন পরে জেলার অনেক নেতাকে মঞ্চে দেখা গেছে।