
সোনারগাঁয়ের চিহ্নিত লুটেরা
সোনারগাঁয়ে আওয়ামীলীগের শাসন আমলে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে লুটপাটের এক প্রতিযোগীতায় মেতে উঠেছিলেন সোনারগাঁয়ের চিহ্নিত লুটেরা নেতারা। যারা বিভিন্ন সময়ে সোনারগাঁয়ের একক নিয়ন্ত্রক বা সংসদ হচ্ছেন এমন মুলা ঝুলিয়ে সোনারগাঁয়ের সর্ব সেক্টর মহালে লুটপাটের মহোৎসবে মেতে উঠতেন এসকল আওয়ামীলীগ নেতারা। তবে তারা গত ৫ই আগস্টের পর দেশত্যাগ করতেও ব্যর্থ হয়েছেন। যার কারণে বিভিন্ন ভাবে সোনারগাঁয়ের বিএনপির সাথে আঁতাত করে গ্রেফতার এড়িয়ে আত্মগোপনে থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার রূপরেখা নির্মাণে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনেও আন্দোলন রুখে দিতে সোনারগাঁয়ে এসকল নেতারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ভুরি ভুরি মামলা থাকলেও তারা এখনো গ্রেফতার হচ্ছে না।
সূত্র বলছে, সোনারগাঁয়ের লুটেরা নেতারা হলেন- সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত,পিরোজপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জি মাসুুদুর রহমান মাসুম, সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান কালাম, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম ড. আবু জাফর চৌধুরী বিরু,সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু,আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ কমিটি সদস্য দীপক কুমার বণিক দিপু, আওয়ামীলীগের তথ্য গবেষণা উপ কমিটির সদস্য এইচ এম মাসুদ দুলাল, কাঁচপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ ওমর, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল ওমর বাবু, সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ রনি। এসকল নেতারা কিভাবে সোনারগাঁকে লুটেপুটে খেয়েছেন সেসকল ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যাক।
সোনারগাঁয়ের সাবেক এমপি কায়সার হাসনাত: সোনারগাঁয়ে কায়সার হাসনাত তার বাবার বদৌলতে প্রথমবারের মত ২০০৮ সালে সাংসদ হন। সাংসদ হয়েই সোনারগাঁকে লুটে পুটে খাওয়ার পায়তারা করেন তৎকালীন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম। পরবর্তীতে টানা দুবার মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এমপির সাঁধ গ্রহণ না করলেও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে পিরোজপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জি মাসুুদুর রহমান মাসুমকে নিয়ে লুটপাটে অংশ নেন। সাংসদ হয়েই বিপুল পরিমাণ দুর্নীতি করে সে আমেরীকায় পারি জমাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ৫ই আগস্টে সরকার পতন এবং এমপিত্ব হারিয়ে একাধিক মামলার আসামী হয়ে দেশে অবস্থান করলেও এখনো গ্রেফতার হচ্ছেন না।
পিরোজপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ইঞ্জি মাসুুদুর রহমান মাসুম: আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর সোনারগাঁয়ের শিল্পনগরী মেঘনা এলাকা তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে হাজার কোটি টাকার মালিক বনে যান। গত ৫ই আগস্টে সরকার পতনের পর চেয়ারম্যান পদ হারালেও সোনারগাঁয়ে বিএনপি নেতাদের সাথে আতাঁত করে এখনো ঢাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
সোনারগাঁ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান কালাম: সোনারগাঁয়ে সর্বমহলে আধিপত্য বিস্তার করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন এবং উপজেলা চেয়ারম্যান পদও ভাগিয়েছিলেন। কিন্তুগত ৫ই আগস্টে সরকার পতনের পর চেয়ারম্যান পদ হারিয়ে একাধিক ছাত্র আন্দোলনে হত্যা মামলার আসামী হলেও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেনকে ম্যানেজ করে গ্রেফতার এড়িয়ে ঢাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম ড. আবু জাফর চৌধুরী বিরু: সোনারগাঁয়ে একাধিক বার আওয়ামীলীগের নিয়ন্ত্রক সেঁজে সোনারগাঁ বিভিন্ন মহলে প্রভাব বিস্তার করে লুটপাট করেছেন অন্তরাল থেকে কারণ ডাক্তার হিসেবে নিজের ইমেজ রক্ষার্থে লুটপাটের নানা কৌশল অবলম্বন করে।
সোনারগাঁ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু: সোনারগাঁয়ের টেন্ডারবাজি চাঁদাবাজি করে অর্থের পাহাড় গড়ে তুলে সোনারগাঁ লুটপাটের মহোৎসব করেন। এছাড়া হেফাজত নেতা মামুনুল হককে লাঞ্চিত করতে অন্যতম ভূমিকা রাখেন।
আওয়ামীলীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ কমিটি সদস্য দীপক কুমার বণিক দিপু: সোনারগাঁয়ের কেন্দ্রীয় নেতা ও শেখ হাসিনার আস্থাভাজন পরিচয়ে দীর্ঘদিন সোনারগাঁয়ে রাজনীতিতে ছড়ি গুড়িয়েছেন। এছাড়া ২০২৪ সালের নির্বাচনে তিনিই সোনারগাঁয়ের এমপি হবেন এমনটা প্রচার করেন। কেননা সোনারগাঁয়ের ইউপি নির্বাচনের ৮টি ইউনিয়নে খোদ দিপু নৌকার মার্কা নিশ্চিতে মনোনয়ন বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা সোনারগাঁয়ের ইউপি চেয়ারম্যান প্রার্থীদের থেকে লুফে নেয়। এছাড়া সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন মহালে প্রভাব বিস্তার করতেন আওয়ামীলীগের মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে। কেননা কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে শেখ হাসিনার আশে পাশে সর্বদা ছবি তুলে ভাইরাল হতেন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহার নির্মাণেও সে কাজ করেছেন। সেই আর্শীবাদে সে জুলাই-আগস্টের আন্দোলনেও শেখ হাসিনার অন্যতম মাস্টার মাইন্ড হিসেবে কাজ করেন।
কাঁচপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ ওমর: আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসলেই সোনারগাঁয়ে শিল্প এলাকা কাঁচপুরকে লুটে পুটে খান মোশারাফ ওমর। এছাড়া কাঁচপুরে অত্যাচার নির্যাতনের মহোৎসব করে এই সন্ত্রাসী মোশারফ। তাছাড়া জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে কাঁচপুরে আন্দোলন রুখে দিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে গিয়ে ছাত্র জনতার উপর ব্যাপক হামলা চালান মোশারফ। পরবর্তীতে সরকার পতনের পর একাধিক মামলার আসামী হলেও ছাত্র হত্যায় এখনো অদৃশ্য কারণে গ্রেফতার হয়নি মোশারফ।
সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বাবুল ওমর বাবু: আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর সোনারগাঁয়ে অন্যতম শীর্ষ চাঁদাবাজ এবং লুটেরা হিসেবে পরিচিত ছিলেন বাবু। যার বিরুদ্ধে বিতর্কের অন্ত নেই। আর এই চাঁদাবাজি এবং লুটপাটে টাকায় সোনারগাঁয়ে উপজেলা নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা উড়িয়ে ফেল করেন।
সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহাগ রনি: রাজনীতি বহু অপকর্মের মাধ্যমে উত্থান ঘটিয়ে সোনারগাঁয়ে আরমান হত্যার মাস্টার মাইন্ড হিসেবে ভূমিকা রেখে আর পিছনে ফিরে তাঁকাতে হয়নি সোহাগকে। হয়েছেন শত শত কোটি টাকার মালিক একাধিক আলিসান বাড়ি গাড়ি ফ্লাট ও একাধিক ব্যবসা। যার মূলে ছিলে মেঘনা গ্রুপকে লুটে পুটে খাওয়া। আর এই অর্থের প্রভাবে মামুনুল হককে লাঞ্চিত করতে মুখ্য ভূমিকা রাখেন ও মোগরাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচন করে কোটি কোটি টাকার মাধ্যমে। কিন্তু সরকার পতনের পর একাধিক হত্যা মামলার আসামী হলেও ছাত্র হত্যায় এখনো অদৃশ্য কারণে গ্রেফতার হয়নি সোহাগ দেশে অবস্থান করে।