
চলতি বছরের (২ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক সুপার ফাইভ কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে ও ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, শরীফ আহমেদ টুটুল এবং সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিনকে। এর ফলে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। এদিকে জেলা বিএনপির কমিটিতে আরো গতিশীল করতে গত (১০ ফেব্রুয়ারী) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। এতে বলা হয়েছিল, সাত দিনের মধ্যে জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটির তালিকা প্রস্তুত করে কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দিতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে (২৬ ফেব্রুয়ারীর) মধ্যে দফতরে তালিকাটি জমা দেওয়ার তারিখ রয়েছে।
এদিকে সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি কেন্দ্রীয় ঘোষিত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও ফ্যাসিবাদ মোকাবিলার দাবিতে জনসমাবেশের তারিখ ঘোষণা পরেন (২৫ ফেব্রুয়ারী) যা জেলা বিএনপির নতুন কমিটি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা গিয়েছিলো। কিন্তু সমাবেশকে উভয় নেতাকর্মীরা তাদের সাংগঠনিক দক্ষতায় সফল করেছেন। এবার জেলা বিএনপি ৩১ শে তাকিয়ে আছেন। এদিকে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিকে ৩১ সদস্যে উন্নীত করার জোর তাগিদ দিচ্ছে বিএনপির হাই কমান্ড। একই সাথে আগামী তিনমাসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলায় বিএনপির সকল ইউনিট কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন করে কমিটি করাসহ জেলা বিএনপির সম্মেলন করাও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এদিকে ৩১ সদস্যের প্রস্তাবিত তালিকায় কে থাকছে বা কে থাকছে না, সেই আলোচনায় বিএনপির নেতকর্মীরা। যদিও দলটির একটি সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির অধিনস্থ ১০টি ইউনিট কমিটি থেকে ২/৩ জন করে ২৬ জন ও বর্তমান কমিটিতে থাকা ৫ জন মোট ৩১ সদস্যের কমিটি আসতে পারে বলে জানা গেছে। যা নিয়ে ও রয়েছে নানা সংশয়। বর্তমানে অনেক্ েকমিটিতে স্থান পেতে নানাভাবে লবিং ও জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। দ্রুত জেলা বিএনপির ৩১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি আসতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এদিকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের সপ্তাহখানের মধ্যেই ১০টি ইউনিটের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠন করা হবে পরবর্তীতে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক সূত্র।
সূত্র বলছে, গত ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাহিরে ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থক এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও কোনঠাসা করে রাখে স্বৈরাচারী হাসিনার সরকারের দোসররা। একদিকে সরকার দলীয় ক্যাডারদের হামলা অন্যদিকে পুলিশি গ্রেফতারের কারনে অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতি। প্রায় দেড় যুগের এই সময়কালে নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করা ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে অবশেষে গত ৫ আগষ্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় স্বৈরাচারী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ জুড়ে যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়, সেই আনন্দ দ্বিগুন হয়ে ফিরে আসে বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। দীর্ঘ সময়ের আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতৃবৃন্দের মুখেও তৃপ্তির হাসি ভেঁসে উঠে, নতুন করে দেখতে শুরু করে স্বপ্ন। তাই এবার ত্যাগী ও প্রকৃত বিএনপি প্রেমিকদের দলে স্থান দেওয়ার বিষয়ের বিষয়ে তারা আশাবাদী।
তা ছাড়া কমিটি গঠনের কয়েকদিন পরপরই ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে ভার্চুয়ালি মিটিং করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ। এতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীও উপস্থিত ছিলেন। মিটিংয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা এবং যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের নানা দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। সেই মিটিংয়ে আলোচিত নানা বিষয়কে ফাইন্ড আউট করেই জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আসতে পারে বলে ধারনা করা যাচ্ছে। এদিকে প্রস্তাবিত তালিকায় ও ইউনিট কমিটি থেকে স্থান পাওয়াদের ২৬ জনের মধ্যে থাকতে পারে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান সদস্য জাহিদ হাসান রোজেল, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা অকিল ভূঁইয়া, রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমান হুমায়ূন, সাধারণ সম্পাদক বাছির উদ্দিন বাচ্চু, রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনোয়ার সাদাৎ সায়েম, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান আব্দু, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহম্মেদ, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, তারাবো পৌর বিএনপির সভাপতি তাসিক ওসমান, সোনারগাঁ পৌর বিএনপির সভাপতি শাহজাহানসহ ১০টি ইউনিটের আরো অনেকেই। এদের নেতৃত্বে আগামীতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি আরো গতিশীল ও শক্তিশালী হতে পারে বলে ধারনা করা যাচ্ছে।
৩১ সদস্য কমিটি বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ যুগের চিন্তাকে বলেন, কেন্দ্র আমাদেরকে এক সপ্তাহের মধ্যে ৩১ সদস্যে উন্নীত করার নির্দেশনা দিয়েছেন, আমরা সেই অনুযায়ীই কমিটি করে জমা দিয়ে দেবো। আমাদের চেয়ারম্যানের নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমরা নিজেরা বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সময় মতো সবই করবো, একটি রূপরেখা ঠিক করে নিবো।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব যুগের চিন্তাকে বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যোগ্য লোকদের নিয়ে আহ্বায়ক কমিটিকে ৩১ সদস্যে উন্নীত করার বিষয়ে আমাদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। আশা করছি রাজপথের আন্দোলন সংগ্রামের লড়াকু সৈনিকরাই কমিটিতে স্থান পাবে ইনশাআল্লাহ।