Logo
Logo
×

রাজনীতি

না.গঞ্জে জাতীয় পার্টির ছিল না কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৪ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

না.গঞ্জে জাতীয় পার্টির ছিল না কোন স্বতন্ত্র অস্তিত্ব

যুগের চিন্তা ফাইল ছবি

Swapno

# বক্তব্যে দলীয় প্রধানের কথা না বলে আওয়ামী লীগের গুণগান করতেন
# জাতীয় পার্টির হাত ধরেই ফকির থেকে আবারও বিত্তশালী হয় ওসমান পরিবার
# আজমেরীর হোন্ডাবাহিনী এবং অয়নের ছাত্রলীগ বাহিনী দিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করতেন

 


বাংলাদেশের রাজনীতির গত ১৫ বছরের আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের অন্যতম দোসর ছিল বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (এরশাদ)। এই সময়ে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সাথে হয় জোট কিংবা সমঝোতার মাধ্যমে আসন ভাগাভাগি করে বিরোধী দলের নামকরণের মাধ্যমে সরকার দলীয় সুযোগ সুবিধা নিয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির হিসেবটা সম্পূর্ণই ভিন্ন। এখানকার প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের মধ্যস্থতায় চলতো জাতীয় পার্টির কার্যক্রম। তাই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় পার্টিকে আলাদা করাটাই সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে ছিল না। এখানকার জাতীয় পার্টির কর্ণদ্বারদের কোন আলোচনা সভা বা জন সভার বক্তৃতায় নৌকা-মুজিব এবং শেখ হাসিনার তোষামদী করে যতক্ষণ কথা বলতেন তার সিকিভাগও ছিল না জাতীয় পার্টির দলীয় বক্তব্য।



আর তাইতো নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির কিং খ্যাত ওসমান পরিবারের সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান গর্ভের সাথেই আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে কথাবার্তা বলে বেড়াতেন। সর্বশেষ ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একেবারে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সেলিম ওসমান কোন্ দলের মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচন করবেন তা শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীই নয়, তিনি নিজেও সন্দেহে ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের দয়া আশীর্বাদ ও বিজয়ের নিশ্চয়তা নিয়ে জাতীয় পার্টির নামে একটি সাজানো ইলেকশন করে এমপি হন। তাইতো সর্বশেষ আওয়ামী লীগের পালিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে অর্থাৎ কোন সময় না নিয়েই পরিবারসহ পালিয়ে যায় নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির কর্নদ্বার হিসেবে লেবাস লাগানো সেলিম ওসমান।



 
বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে এক সময়ে অর্থ-বৈভব ও দাপটের চূড়ায় থাকা ওসমান পরিবার ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর পরই চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। ওসমান পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন বক্তব্য অনুসারে সে সময় থেকে এই পরিবারটি এতোটাই অভাব অনটনের মধ্যে পড়ে যে, অর্থাভাবে সংসার চালানো থেকে শুরু করে লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়াটাও ছিল কঠিন ব্যাপার। তবে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে থাকে সাবেক স্বৈরাচারী সরকার হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ জাতীয় পার্টি নামক দলটি গঠন করার পর। ওসমান পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের বড় ছেলে নাসিম ওসমান এই জাতীয় পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়ে ১৯৮৬ সালে প্রথম তার ছোট ভাই শামীম ওসমানের ক্যাডার বাহিনী ব্যবহার করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এরপর থেকে এই পরিবারের আর কাউকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তৎসময়ে নারায়ণগঞ্জ শহর-বন্দর ও সোনারগাঁয়ে নিজেদের বিশাল এক ক্যাডার বাহিনী তৈরি করা হয় এই দুইভাইয়ের নেতৃত্বে।



এরপর ১৯৮৮ সালের অনুষ্ঠিত হওয়া এক পাতানো নির্বাচনেও সংসদ সদস্য হন নাসিম ওসমান। এরপর নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন আর্থিক সংশ্লিষ্ট কোম্পানী কিংবা সংগঠন থেকে চাঁদাবাজি, লুটপাট ও দখল বাণিজ্যে লিপ্ত হয়ে অঢেল অবৈধ অর্থের মালিক বনে যায় এই পরিবার। ফলে এক সময়ে নিজেকে মুরগী বিক্রি করে কিংবা বাস চালিয়ে সংসার চালাতেন বলে ঘোষণা দেওয়া সেলিম ওসমানই হয়ে যান নারায়ণগঞ্জের সকল ব্যবসা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একক নিয়ন্ত্রক। নারায়ণগঞ্জের আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাসহ একাধিক চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলায় উঠে আসে এই ওসমান পরিবারের সদস্যদের নাম।



 
২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল তৎকালীন সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন থেকে উপ নির্বাচনে সাংসদ হন তার ছোট ভাই সেলিম ওসমান। এরই মধ্যে আলাদা আলাদা ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলে তাদের পরবর্তী প্রজন্মরাও। একদিকে নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে একটি বাহিনী গড়ের উঠে যা হোন্ডাবাহিনী নামে পরিচিত। অন্যদিকে শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নামধারী আলাদা একটি ক্যাডার বাহিনী গঠন করা হয়। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৎকালীন আওয়ামী বিরোধী দলগুলোর নেতা কর্মী ও সমর্থকদের উপর এসব ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের প্রকাশ্যে নির্যাতনের স্টীম-রোলার চালাতে দেখা যায়। এই সময়ের মধ্যে তারা জাতীয় পার্টির হয়ে কোন কর্মসূচী না দিলেও আওয়ামী লীগের সকল কর্মসূচীতেই আজমেরী ওসমানের ক্যাডারদের দেখা যেতো।



 
গত কয়েক বছরের আজমেরী ওসমানের এসব হোন্ডা বাহিনীর ক্যাডাররা প্রকাশ্যে প্রশাসনের সামনে দিয়ে হোন্ডা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ত্রাস সৃষ্টি করতো। যার মধ্যে ছিল মতের বাইরে থাকা পরিবারের সদস্যদের তুলে নিয়ে তার টর্চার সেলে টর্চার করে খুন করতো। বিভিন্ন কিলিং মিশনে ছিল আজমেরী বাহিনীর সদস্যদের নাম। তাদের বিরুদ্বে সংবাদ প্রকাশ করায় প্রকাশ্যে দিবালোকে পত্রিকা অফিসেও তান্ডব চালায় তারা। এরই মধ্যে বন্দরে এক সময়ের তাদের দলীয় এবং পারিবারিক সম্পর্ক থাকা প্রয়াত চেয়ারম্যান রাইসুল হকের পরিবারের সদস্যদের উপর দুপরে বেলা হোন্ডা বাহিনী নিয়ে গুলি চালিয়ে এবং অগ্নি সংযোগ করে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আজমেরী বাহিনী।



যেসব কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন ফুটেজে উঠে আসে সাবেক জাপা নেতা পিজা শামীম, সাবেক কমিশনার আজহার, সাবেক যুবলীগ নেতা কাজী আমির, নীট কনসার্নের ময়নাল হোসেন মোল্লা, বন্দরের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মুকিত, চাঁদাবাজ বান্টিসহ একাধিক নাম। এসব ক্যাডারদের আলাদা আলাদা কমিটি করে বিভিন্ন এলাকায় ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল বলে গোপন সূত্রে জানা যায়। যারা গত বছরের শেষ দিকেও অগ্নি সন্ত্রাস নির্মূলের নামে শহর-বন্দর-সোনারগাঁয়ের বিভিন্ন এলাকায় তাণ্ডব চালিয়ে যায়।



 
স্থানীয়দের মতে নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির আলাদা কোন অস্তিত্ব ছিল না। নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ বিশেষ করে ওসমান পরিবারের বলয়ের লেজুরবৃত্তি করে অস্তিত্ব খুঁজে নিতো নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টি।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন