
ফিরতে মরিয়া পুরনোরা
নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে ধর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিবার এবং বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ হিসেবে খ্যাতি অর্জনের প্র্যাক্কালেই একসময়ের বিএনপির প্রভাবশালী নেতারা নিজেদের ড্যাম কেয়ার রাজনীতি এবং ক্ষমতার পিছনে ছুঁটতে গিয়ে অনেকেই হারিয়ে ফেলেছেন নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান ও নিয়ন্ত্রণ। যার ফলে বিএনপির সুসময়ের বাতাসে আবারও উড়তে আসার পথ হিসেবে ফের লাইমলাইটে আসার নানা পরিকল্পনা এবং কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন বিএনপির রাজনীতি নিজেদের হারিয়ে ফেলা নেতারা।
সূত্র বলছে, নারায়ণগঞ্জ বিএনপিতে রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হচ্ছেন মরহুম জালাল হাজীর সুযোগ্য পুত্র নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সাংসদ এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কালাম। আবুল কালাম রাজনীতির শুরুর দিকে বিএনপি ক্ষমতাকালীন সময়ে সাংসদ হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন।
এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি হিসেবে মহানগর বিএনপিকে দীর্ঘদিন নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু তার জনপ্রিয়তা সমন্বত থাকলেও রাজনীতিকে থেকে বিরতি জনসম্মুখের রাজনীতি দূরে চলে যাওয়ায় তাদের জনপ্রিয়তা অনেকটাই লোপ পেয়ে যায়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সভাপতি থেকে পদচ্যুত এবং তার সমর্থক বা পরিবারের পক্ষ থেকে মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে না থাকায় তার রাজনীতিতে ধস আরও দীর্ঘায়িত হয়ে যায়। বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামের প্রথম দিকে রাজপথ থেকে নেতৃত্ব দিলেও আওয়ামীলীগের পতনের পূর্বে রাজনীতি থেকে বিরত থাকায় তার পরিবার ও সমর্থকদের ব্যাপকভাবে রাজপথে সক্রিয় রাখার চেষ্টা করেছিলেন আন্দোলন সংগ্রামে।
কিন্তু ৫ই আগস্টে আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর আবুল কালাম খোদ নিজেই তাদের দীর্ঘদিনের রাজনীতি থেকে বিরতি থাকা নিয়ে কথা বলছেন এবং তার কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে সরাসরি মতবিনিময় করছেন। এছাড়া গণমাধ্যমের বরাতে আবারও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি এবং নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে তার গ্রহণযোগ্য এবং প্রয়োজনীয়তা দলীয় চাহিদা প্রচার করছেন।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক থেকে বহিষ্কার হয়ে বিএনপি ভাঙার মিশন হিসেবে গঠিত কিংস পার্টি হিসেবে বিভেচিত তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার তিনি বিএনপি রাজনীতিতে এসে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে বহু নেতাকর্মীদের প্রতিষ্ঠিত করলেও রাজনীতিতে তার ক্ষমতার লোভে বিএনপি থেকেই তিনি ছিঁটকে পড়েন নয়ত তাকে বিএনপির একজন সম্মানিত বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে পারতেন।
সূত্র মতে, ২০১১ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে তৈমুর আলম খন্দকার দলীয় নির্দেশে মেয়র প্রার্থীতা থেকে নির্বাচনের কয়েক ঘন্টা আগে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের মাধ্যমে বলির পাঁঠা হিসেবে খেতাব পান। এর পরবর্তীতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং জেলা বিএনপিতে একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে বিএনপিতে প্রতিষ্ঠিত করে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টার মত পদ তুলে দেয়া হয়।
তারপরও নানা প্রলোভনে ২০২২ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নিলেও বিএনপির সিদ্ধান্তকে প্রধান্য না দিয়ে হাতি প্রতীকে নারায়ণগঞ্জের গডফাদার শামীম ওসমানের ইশরায় প্রার্থী হন তৈমুর আলম খন্দকার এমন তকমা নিয়ে নির্বাচন করে শেষতক নির্বাচনের কয়েকদিন আগে শামীম ওসমান তার অবস্থান পরিষ্কার করলে তৈমুর আলম খন্দকার ২০২২ সালের নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও বিপুল ভোটে পরাজিত হয়ে হোঁচট খান। এরপরই বিএনপি থেকে বহিষ্কার হন তৈমুর আলম খন্দকার। তারপরও বিএনপির ব্যানারে রাজনীতি করলেও ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর তৈমুর আলমের ছোট ভাই সাব্বির আলম হত্যা মামলার আসামী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানকে গ্রেফতার হলে তৈমুর আলমের রাজনীতিতে নয়া মেরুকরণ তৈরী হয়।
জাকির খান বিচার কার্যের আদালতের সম্মুখীন করা হলে তিনি বেশ বড় গলায় ছোট ভাই সাব্বির আলম হত্যা মামলার অন্যতম আসামী হিসেবে জাকির খানকে আখ্যায়িত করেন। এরমধ্যেই হঠাৎ আওয়ামীলীগের প্রেসক্রিপশনে বিএনপি ভাঙার পরিকল্পিত কিংস পার্টির মত দল তৃণমূল বিএনপিতে যোগদান করে মহাসচিব পদে দায়িত্ব নেন এবং নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অংশ নিয়ে শেখ হাসিনার আর্শিবাদে সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে নির্বাচনে অংশ নেন। সেসময় সরকারের সাথে তার ব্যাপক সখ্যতা থাকায় জাকির খানের বিচার কার্যে দাপট দেখানোর চেষ্টা করে। এরমধ্যেই আওয়ামীলীগ থেকে আর্শিবাদপুষ্ট না হয়ে ফের ব্যর্থতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়ে জামানত হারিয়ে জাতির কাছে হাস্যরশে পরিণত হন।
এরপর থেকেই জাকির খানের বিচার কার্যে বা তার ছোট ভাই সাব্বির আলমের হত্যার বিচারের দাবিতে কোন প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ট করতে পারেনি তৈমুর। এরমধ্যেই গত ৫ই আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতন ঘটলে আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মত তৈমুর আলমের গ্রেফতারের বিষয়টি আলোচিত হতে থাকে।
এরপরই রাজনীতি এবং তার আইনজীবী পেশা থেকে আত্মগোপনে চলে যান। কিন্তু ফের বিএনপির সুবাতাসের ঘ্রাণে বিএনপিতে প্রবেশের নানা চেষ্টা চলমান রেখেছেন বলে জানিয়েছে সূত্র। এদিকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল বিএনপির মহানগর অর্থাৎ শহর এলাকায় তার অনেক অবদান থাকলেও তৈমুর আলমের সাথে লোভনীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে ২০২২সালের সিটি নির্বাচনে তৈমুর আলমের নির্বাচনে অংশ নিয়ে তৈমুর আলমের সাথে তিনিও বিএনপি থেকে গত ৫ই আগস্টে বহিষ্কার হন। পরবর্তী বিএনপি রাজনীতিতে সক্রিয় না হওয়ার চেষ্টা করে দেশত্যাগ করে এখনো দেশের বাহিরে অবস্থান করছেন।
কিন্তু আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমের বরাতে বিএনপির রাজনীতি থেকে বহিষ্কার বা দেশত্যাগ করে বিদেশের মাটিতে অবস্থান করার বিষয়ে নানা ব্যাখ্যা নানা মন্তব্য করে ফেরার লাইমলাইটে ফেরার চেষ্টা করছেন।