Logo
Logo
×

রাজনীতি

৪৫ দিনেও আভাস নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির

Icon

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশ: ২০ মার্চ ২০২৫, ১২:০০ এএম

৪৫ দিনেও আভাস নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির

৪৫ দিনেও আভাস নেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির

Swapno

 জেলা বিএনপির নবাগত আহ্বায়ক কমিটিকে দ্রুত ৩১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে রূপান্তর করার কেন্দ্রীয় নির্দেশ থাকলে ও দীর্ঘ ৪৫ দিন অতিবাহিত হলে ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কোন আভাস নেই। এদিকে ৭ দিনের মধ্যে কমিটির তালিকা কেন্দ্রে জমা দেওয়া ক্ষেত্রে বেধে দেওয়া হয়েছিলো সর্ত। যেন প্রতিটি ইউনিট থেকে ২ জন করে নেতা নিয়ে কমিটির তালিকা বানাতে হবে। যা নিয়ে ইতিমধ্যে বহু ইউনিট পর্যায়ের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পরছেন জেলার বর্তমান নেতারা।

এদিকে জেলা বিএনপির একজন নেতার সাথে আলোচনা করলে জানা যায়, পট পরিবর্তনের পূর্বে যখন কমিটিতে নাম না দেওয়া নিয়ে প্রতিযোগীতা চলতো। সেই তেমনই ভাবে বর্তমানে আন্দোলনে সক্রিয় ও নিস্কিয় উভয় নেতারাই কমিটিতে স্থান পেতে প্রতিযোগীতা ও দৌড়ঝাঁপ শুরু রয়েছে। আর যেহেতু এটা নারায়ণগঞ্জের জনগণের আস্থার জেলা বিএনপির কমিটি সেই ক্ষেত্রে এটা পূর্ণাঙ্গ এর লক্ষে একটু ধীরগতি হওয়াটাই স্বাভাবিক। এদিকে গতকাল বুধবার (১৯ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের মিশনপাড়ায় হোসিয়ারি সমিতি মিলনায়তনে জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাদের সাথে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় নেতৃবৃন্দের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে জেলা বিএনপির ৩১ সদস্য পূর্ণাঙ্গ কমিটির আলোচনা আসলে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল ঈদের পরপরই জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আশ^াস দিলে ও এটা কতটা বাস্তবায়ন হবে তা নিয়েই ভাবছে নেতাকর্মীরা। ইতিপূর্বে জেলা বিএনপির কমিটির কয়েক ট্রাম্পে আংশিক কমিটি দিয়ে জেলা বিএনপি আসলে ও কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুত তার পূর্ণাঙ্গ এর নির্দেশ থাকলে ও তা হতে দেখা যায়নি।



জানা গেছে, চলতি বছরের (২ ফেব্রুয়ারি) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৫ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক সুপার ফাইভ কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে ও ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভুঁইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব, শরীফ আহমেদ টুটুল এবং সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিনকে। এর ফলে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়। এদিকে জেলা বিএনপির কমিটিতে আরো গতিশীল করতে গত (১০ ফেব্রুয়ারী) নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। এতে বলা হয়েছিল, সাত দিনের মধ্যে জেলা বিএনপির ৩১ সদস্যের একটি আহবায়ক কমিটির তালিকা প্রস্তুত করে কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দিতে হবে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে (২৬ ফেব্রুয়ারীর) মধ্যে দফতরে তালিকাটি জমা দেওয়ার তারিখ রয়েছে। এদিকে সারাদেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি কেন্দ্রীয় ঘোষিত নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, দ্রুত নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও ফ্যাসিবাদ মোকাবিলার দাবিতে জনসমাবেশের তারিখ ঘোষণা পরেন (২৫ ফেব্রুয়ারী) যা জেলা বিএনপির নতুন কমিটি চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখা গিয়েছিলো। কিন্তু সমাবেশকে উভয় নেতাকর্মীরা তাদের সাংগঠনিক দক্ষতায় সফল করেছে। এর পরপরই জেলা বিএনপিকে ৩১ সদস্য করার জোর দাবী চললে ও ৪৫ দিন অতিবাহিত হয়ে যায় কিন্তু কোন প্রকারের উদ্বেগ দেখা যায়নি। তা ছাড়া অনেকেই বলছে কেন্দ্রে তালিকা জমা পেড়েছে দ্রুত কমিটি আসতে পারে।



সূত্র বলছে, গত ২০০৬ সালে ক্ষমতা ছাড়ার পর দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাহিরে ছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জেও বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থক এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যদেরও কোনঠাসা করে রাখে স্বৈরাচারী হাসিনার সরকারের দোসররা। একদিকে সরকার দলীয় ক্যাডারদের হামলা অন্যদিকে পুলিশি গ্রেফতারের কারনে অনেকটাই কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতি।  প্রায় দেড় যুগের এই সময়কালে নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করা ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে অবশেষে গত ৫ আগষ্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যায় স্বৈরাচারী সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা। হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশ জুড়ে যে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়, সেই আনন্দ দ্বিগুন হয়ে ফিরে আসে বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে। দীর্ঘ সময়ের আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতৃবৃন্দের মুখেও তৃপ্তির হাসি ভেঁসে উঠে, নতুন করে দেখতে শুরু করে স্বপ্ন। তাই এবার ত্যাগী ও প্রকৃত বিএনপি প্রেমিকদের দলে স্থান দেওয়ার বিষয়ের বিষয়ে তারা আশাবাদী। তা ছাড়া কমিটি গঠনের কয়েকদিন পরপরই ঢাকার কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে ভার্চুয়ালি মিটিং করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দ। এতে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভীও উপস্থিত ছিলেন। মিটিংয়ে সাংগঠনিক তৎপরতা এবং যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিটি গঠনের নানা দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্রটি। সেই মিটিংয়ে আলোচিত নানা বিষয়কে ফাইন্ড আউট করেই জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি আসতে পারে বলে ধারনা করা যাচ্ছে। এদিকে আরো জানা গেছে, গত কয়েক দশকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যতগুলো সম্মেলন হয়েছে সবগুলোই হয়েছে একই পদ্ধতিতে, একই কায়দায়। কোন কমিটিই সম্মেলনের মাধ্যমে হয়নি।



খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এদিকে ১৯৭৮ সালে বিএনপি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির প্রথম সভাপতি হিসেবে আব্দুল মতিন চৌধুরীকে নির্বাচিত করা হয়। একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম। এরপর ১৯৯২ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন রোকন উদ্দিন মোল্লা। রূপগঞ্জের মুড়াপাড়ায় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এই কমিটিরও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যুদ্ধকালীন কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম। ২০০৪ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় চাষাঢ়াস্থ শহীদ জিয়া হলে। এই সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন অধ্যাপক রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক হন অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারবাদী হিসেবে অধ্যাপক রেজাউল করিমের নাম আলোচনায় থাকায় ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর শহরের আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে জেলা বিএনপি'র সর্বশেষ সম্মেলনে তাকে বাদ দেয়া হয়। সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি'র সাধরণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারায় ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ না দেখায় সাড়ে ৩ বছর পর জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে পুনরায় অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে আহবায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। নির্দেশনা ছিল ৩ মাসের মধ্যে থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও এই আহবায়ক কমিটি সবগুলো ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি। এর মধ্যে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে মেয়র নির্বাচন করায় তৈমূর আলমকে আহবায়কের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক করা হয় মনিরুল ইসলাম রবিকে। দুই বছরের মাথায় একই বছরের ১৫ নভেম্বর মনিরুল ইসলাম রবি ও মামুন মাহমুদের আহবায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে আহবায়ক ও জেলা যুবদলের আহবায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি'র আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। 


২০২৩ সালের ১৭ জুন জেলা বিএনপির সভাপতি হন মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এবং সাধারণ সম্পাদক হন গোলাম ফারুক খোকন। গত ২৪ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুকের নেতৃত্বাধীন আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কমিটি বিলুপ্তির প্রায় দেড় মাস পর (২ ফেব্রুয়ারী)  নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদকে আহবায়ক করে ৫ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন প্রথম যুগ্ম আহবায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, যুগ্ম আহবায়ক মাশুকুল ইসলাম, শরীফ আহমেদ ও মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। এ দিকে প্রস্তাবিত তালিকায় ও ইউনিট কমিটি থেকে স্থান পাওয়াদের ২৬ জনের মধ্যে থাকতে পারে জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান সদস্য জাহিদ হাসান রোজেল, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মাজেদুল ইসলাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা অকিল ভূঁইয়া, রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাহফুজুর রহমান হুমায়ূন, সাধারণ সম্পাদক বাছির উদ্দিন বাচ্চু, রূপগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি আনোয়ার সাদাৎ সায়েম, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান আব্দু, আড়াইহাজার উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল আহম্মেদ, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, তারাবো পৌর বিএনপির সভাপতি তাসিক ওসমান, সোনারগাঁ পৌর বিএনপির সভাপতি শাহজাহানসহ ১০টি ইউনিটের আরো অনেকেই। এদের নেতৃত্বে আগামীতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি আরো গতিশীল ও শক্তিশালী হতে পারে বলে ধারনা করা যাচ্ছে।

Abu Al Moursalin Babla

Editor & Publisher
ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন