
বড় পদের ছিঁচকে চাঁদাবাজ হেলাল কোথায়
মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকিরুল আলম হেলাল। যাকে দলীয় নেতাকর্মীরা শহরের চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণকারী হেলাল হিসেবেই ডাকতেন। শহরের কয়েকটি পরিবহন স্ট্যান্ডের চাদাঁবাজি, চাষাড়া, কালিরবাজার, শহিদ মিনার, বালুর মাঠসহ শহরের বেশ কয়েকটি স্থানের ফুটপাত নিয়ন্ত্রণে ছিলেন এই হেলাল। এ ছাড়া ও বড় বড় সাইডের টেন্ডার, শহরে দোকান বসানোর নামে চাঁদাবাজি, জমি দখল, সবস্থানেই ছিলো এই জাকিরুল আলম হেলালের আধিপত্য। যার পিছনে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের সাবেক কুখ্যাত সন্ত্রাসী শামীম ওসমান। এ দিকে গত ৫ আগষ্টের পূর্বে ওসমান পরিবারের অন্যতম সদস্য সারাদেশে গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমান, তার বড় ভাই সেলিম ওসমান তাদের ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও অয়ন ওসমান মিলে নারায়ণগঞ্জে গত ১৬ বছরে বিশাল এক ওসমানীয় সম্রাজ্য গড়ে তুলেন।
তাদের এই সম্রাজ্য দিয়ে শহরে আনাচে কানাচে চাদাঁবাজি, টেন্ডারবাজি নিয়ন্ত্রণ করেছন। কোন সেক্টরে তারা চাদাঁবাজি করতে বাধ রাখেন নাই। নিজেদের গঠিত ওসমানীয় সম্রাজ্যের লোক দিয়ে জেলার ব্যবসয়ী সংগঠন থেকে শুরু করে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের টেন্ডার পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করেছেন। সেই সাথে শহরের পরিবহন সেক্টরের চাদাঁবাজি, নগরীর বিভিন্ন স্টান্ডে চাদাঁবাজির শিংহভাগের একটি অংশ পর্যন্ত ওসমানদের পকেটে যেত। আর এই সকল সেক্টর শামীম ওসমান তাদের লোকজনদের হাতে ভাগ করে দিয়েছিলেন। এরই মধ্যে শহরের নিয়ন্ত্রণ হিসেবে দায়িত্ব পান বড় পদের ছিঁচকে চাঁদাবাজ জাকিরুল আলম হেলাল।
জানা গেছে, নগরীর বঙ্গবন্ধু সড়কে হকারদের শেল্টার ও তাদের যত বিচার আচার সবই করতেন জাকিরুল আলম হেলাল। তিনি মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ হকার্স লীগের উপদেষ্টাও। এ ছাড়া সে সময় তার শেল্টারে শহরে ফুটপাতসহ নানা অপকর্ম করতেন হকার নেতা খ্যাত রহিম মুন্সী, আসাদ, সিরাজ, পলাশ, সোহেল সহ সকলেই এদিকে শুধু এরা নয় সকল হকার নেতারাই হেলালের আশির্বাদে পুষ্ট বলে জানা গেছে। শামীম ওসমানের যে কোনো সভা সমাবেশে এই হকার নেতাদের মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক হকার নেতাকর্মী উপস্থিত করতেন এই জাকিরুল আলম হেলাল। মূলত এ কারণেই পেছন থেকে হকারদের নেতৃত্ব ও শেল্টার দেন এরা। এই হেলাল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এছাড়া, প্রয়াত গোলাম সারোয়ার ও শহর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভুইয়া সাজনুর ভাই তিনি। শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ অনুসারীদের মধ্যে হেলালের অবস্থান ছিলো ৪র্থ। শাহ নিজাম, সাজনু ও নিপুর পরেই তার অবস্থান। যাকে ঘিরে হেলালের কারণেই মূলত শামীম ওসমান বারবার হকারদের পক্ষে অবস্থান নিতেন। যার ফলে মাসে হকার ও অবৈধ স্ট্যান্ড দিয়ে শহর থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতেন এই হেলাল।
এদিকে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সাবেক মেয়র আইভীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। দুই পক্ষের সংঘর্ষে আইভীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। জানা গেছে, এই ঘটনায় আইভীর উপরে হামলা করতে হকারদের আগে থেকেই নির্দেশ দিয়ে রেখেছিলেন এই হেলাল। সেই ঘটনায় হকার নেতা রহিম মুন্সি, আসাদুল ইসলাম ওরফে আসাদসহ আরো বেশ কয়েকজন হকার নেতার বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছিলেন। কিন্তু শামীম ওসমান ও হেলাল প্রকাশ্যে এদের আগলে রাখায় এরা পুলিশের গ্রেফতারে আসেনি। এর পর থেকেই শহরে বেপরোয়া হয়ে উঠে হেলালের এই হকার্সলীগ নেতারা। এরা সর্বশেষ হেলালের নির্দেশে ১৮, ১৯ জুলাই শামীম ওসমানের সাথে প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতার উপরে গুলি চালিয়েছিলেন যার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ওয়ালে রয়েছে। এদিকে বর্তমানে একে একে আওয়ামী লীগের নেতারা পুলিশের জালে আটকা পড়লে ও এই ছিঁচকে চাঁদাবাজ হেলালের খোঁজ কোথাও নেই। বিভিন্ন্ থানা ও উপজেলা ভিত্তিক আওয়ামী লীগের পাতি নেতারা গ্রেফতারের নাগালে আসলে ও শহর দাবড়িয়ে বেড়ানো এই হেলাল ও হকার্সবাহিনীর অনেকেই গ্রেফতারের বাহিরে রয়েছে। আবার অনেকের মাধ্যমে হেলাল বিগত দিনের মতোই চাঁদাবাজির ভাগ পাইছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।