
মুক্তি পাবেন এমন বিশ্বাসে উচ্ছ্বসিত জাকির খানের সমর্থকরা
নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে এক আলোচিত নাম জাকির খান। দীর্ঘ ২১ বছর সিনেমার কাহিনীর মতোই তাকে নিয়ে নানা মুখরোচক চর্চা হতে দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জে সর্বমহলে। যিনি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি পদ থাকাকালিন সময়ে ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করনে। দীর্ঘদিন জাকির খান যাতে দেশে ঢুকতে না পারে একের পর এক মামলা মোকাদ্দমা দিয়ে তাকে দমিয়ে রাখার পেছনে কুখ্যাত ওসমান পরিবারও নীলনকশা চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ জাকির খান সমর্থকদের।
কিন্তু সর্বশেষ আলোচিত সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় চলতি বছরের ৭ জানুয়ারি জাকির খান সহ তার তিন ভাই খালাস পান। নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মমিনুল ইসলাম এ রায় ঘোষণা করেন। এরপর জাকির খানের আইনজীবী অ্যাডভোকেট রাজিব মন্ডল জানান, জাকির খানের বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা ছিল। এরমধ্যে ৩০টিতে তিনি খালাস পেয়েছেন। বাকি দুটি মামলায় জামিনে আছেন। আদালতের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছেছে, তাই তার মুক্তিতে আর কোনো বাধা নেই।
কিন্তু এর মধ্যে একটি মামলার সাজা থাকায় তিনি মুক্তি পাচ্ছিলেন না। যাকে ঘিরে জাকির খানের মুক্তি নিয়ে চিন্তিত হয়ে পরেছিলেন সমর্থকরা। ইতিমধ্যে সাজাপ্রাপ্ত মামলার সাজা ভোগ প্রায় শেষ। যাকে ঘিরে আগামী (১৩ এপ্রিল) সকাল ৮ টায় নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে জাকির খান মুক্তি পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন তার সমর্থকরা।
যা নিয়ে ইতিমধ্যে জাকির খান শিবিরে উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তা ছাড়া গত এক সপ্তাহ যাবৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে জাকির খানের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে নানান স্ট্যার্টাস লক্ষ্য করা যায় যেমন-আলহামদুলিল্লাহ, লিডার আসছেসহ নানা স্ট্যাটাস দেখা যায়।
এদিকে সর্বশেষ গতকাল রাত সাড়ে ৮ টায় জাকির খান নামে একটি ফেসবুক পেইজে একটি স্ট্যাটাস লক্ষ্য করা যায় যেখানে উল্লেখ রয়েছে, অবশেষে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর, নারায়ণগঞ্জের মাটি ও মানুষের নেতা, জননেতা জাকির খান আগামী ১৩ এপ্রিল, সকাল ৮টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। বিগত ২২ বছর তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাসিত ছিলেন এবং গত আড়াইবছর ধরে স্বৈরাচারের কারাগারে বন্দী ছিলেন। নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান হতে চলেছে। আমরা বিশ^াস করি, তিনি তাঁর কর্মকাণ্ডে আরো শক্তিশালী হয়ে সমাজসেবা, মানুষের অধিকার এবং নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নে অগ্রনী ভূমিকা পালন করবেন। এই আনন্দের মুহূর্তে আমরা সবাই তাঁর পাশে আছি এবং তাঁর সামনে নতুন দিগন্ত উন্মোছিত হোক, এই কামনা করি। পরবর্তীতে বিষয়টি যাচাইয়ের লক্ষ্যে জাকির খানের চাচা মনির খানসহ জাকির খান সমর্থকদের কয়েকজনের সা
থে যোগাযোগ করা হলে তারা আগামী ১৩ এপ্রিল জাকির খানের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন এবং তারা সকলেই এই আনন্দে উচ্ছ্বাসিত বলে জানান।
এদিকে ২২ বছর নারায়ণগঞ্জ থেকে নির্বাসিত ও আড়াই বছর ধরে কারাবন্দী এ নেতার মুক্তির খবরে শুকরিয়া আদায় করে যাচ্ছে সমর্থকরা। এদিকে ২০০৩ সালের চারদলীয় জোট সরকার আমলে ১৮ ফেব্রুয়ারি শাব্বির আলম খন্দকার হত্যা পর থেকে নারায়ণগঞ্জ ছাড়েন জাকির খান। দীর্ঘ সময় বিদেশ দেশে পলাতক থাকা অবস্থায় আওয়ামীলীগ সরকার আমলে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জাকির খানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১১। এর পর টানা আড়াই বছর ধরে কারাবন্দী থাকেন তিনি। বর্তমানে তার মুক্তির আভাসে উচ্ছ্বাসিত হয়ে হয়ে উঠেছে নেতাকর্মীরা।
এদিকে বিগত দিনে বিশেষ করে গডফাদার হিসেবে পরিচিত শামীম ওসমান, সেলিম ওসমানসহ গোটা ওসমান পরিবার এই জাকির খানকে শুধু আতঙ্ক মনে করতো। ছাত্রদলের সাবেক এই নেতার বিশাল জনপ্রিয়তা রয়েছে। কর্মীসমর্থকদের বিশাল এই সমর্থনকেই সবসময় আতঙ্ক ভোগ করতো ওসমান পরিবার। সামনের দিনগুলোতে জাকির খান যদি বিএনপির মূল ধারার রাজনীতিতে নিজেকে ও তার কর্মীবাহিনীকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে আগামীর রাজনীতিতে এই জাকির খানই বিএনপির অন্যতম ভরসার কান্ডারি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ বিএনপির যেই নেতৃত্বশুন্যতা দীর্ঘদিন ধরে চলছে তা জাকির খানের মাধ্যমেই সেই অভাব ঘুচতে পারে। দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রোষানলে ও নিজ দলের কিছু কুচক্রীমহলের ষড়যন্ত্রে কারাভোগ
করলে গত মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় দীর্ঘদিন যে হত্যা মামলায় তিনি কর্মী সমর্থকদের ছেড়ে কারাগারে ছিলেন সেই নারায়ণগঞ্জের আলোচিত ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন জাকির খান। জাকির খানের সেই মামলা খালাসে আনন্দে উল্লাসিত হয়ে উঠেছিলেন জাকির খান ও বিএনপির কর্মী সমর্থকরা। কিন্তু একটি মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় শীগ্রই ঈদের আগেই বেগড় হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে তার। যাকে ঘিরে সকলেই বর্তমানে প্রিয় নেতা জাকির খানের মুক্তির প্রহর গুনছেন। শীগ্রই নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির ময়দানে জাকির খানের প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিএনপির ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
এদিকে জাকির খানের অনুসারীরা বলছেন, সাজাপ্রাপ্ত মামলার সাজা ভোগ প্রায় শেষ। আগামী ১৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্তি পেতে পারেন জাকির খান। কারাগার থেকে তাকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। জাকির খানের উপস্থিতি কেউ কোন অপরাধে জড়িয়ে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সকলে এলার্ড থাকবে। এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন সেক্টরে জাকির খান নাম ভেঙ্গে তার সমর্থকরা আধিপত্য বিস্তারে জড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সেসকল বিষয়ে জাকির খান কোন মতেই অবগত নয়।
মুক্তির বিষয়ে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাকির খানের চাচা মনির খান যুগের চিন্তাকে বলেন, আগামী ১৩ এপ্রিল জাকির খানের মুক্তির বিষয়টি সঠিক। কারণ বর্তমানে তার কোন মামলা নেই। সবই খালাস হয়ে গেছে, একটি ভূয়া মামলা ছিলো যা ইতিমধ্যে শেষ বর্তমানে তার মুক্তিতে কোন প্রকারের বাধা নেই।
মুক্তির বিষয়ে জাকির খান মুক্তি পরিষদের সাবেক আহ্বায়ক সলিমুল্লাহ সেলিম যুগের চিন্তাকে বলেন, আলহামদুলিল্লাহ আগামী ১৩ এপ্রিল সকল মিথ্যা মামলা থেকে খালাস পেয়ে জাকির খান সাহেব কারামুক্তি হতে যাচ্ছেন যা আমাদের জন্য খুশির বিষয়। তার মুক্তিতে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি বিগত দিন থেকে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল হবে বলে আমরা মনে করছি।