
দীর্ঘ ১৭ বছর আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে সক্রিয় থাকা দল বিএনপিতে পটপরিবর্তনের পর ভিন্ন দশা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপিতে এখন নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা যায় না। সদর-বন্দরে, ওয়ার্ডে- ইউনিয়নে যেখানেই যাই না কেন কেবল নেতা আর নেতা! পোস্টার, ব্যানার, দেয়াল এমনকি গাছগাছালি পর্যন্ত রক্ষা নেই, সবখানে কেবল নেতাদের ছবি। প্রশ্ন জাগে, নেতাদের এই যে ক্রমবর্ধমান বিস্তার এর শেষ কোথায়? এদিকে শহরের বিভিন্নস্থানে তাকালেই দেখা যায়। সদর থানা বিএনপি নেতা, সদর থানা যুবদল নেতা, ফতুল্লা থানা বিএনপি নেতা, রূপগঞ্জ,বন্দর, সোনারগাঁসহ বহু বিএনপি নেতাদের ব্যানার লক্ষ্য করা যায়। ইতিমধ্যে সারা দেশের ন্যায় নারায়ণগঞ্জে অনেক নেতা তৈরি হচ্ছে, পটপরিবর্তনের পর খুব দ্রুত অনেকেই নেতা হয়ে যাচ্ছেন, তবে নেতার মধ্যে যদি নেতৃত্বের গুণাবলী না থাকে তাহলে এ ধরনের অসংখ্য নেতার উৎপাদন যেকোনো দলের জন্য অশনিসংকেত বলে মনে করেন দলটির তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। এদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে যেন উভয় সংকটে পড়েছে বিএনপি।
টানা ১৭ বছর ক্ষমতায় থাকা কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ‘সুদিনে ফেরার পথে’ও নতুন নতুন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে দলটি। এদিকে বর্তমানে দলটিতে নেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে একের পর এক অপকর্ম। এদিকে গত বছরের প্রথম মাসে ও বিএনপিতে নেতা বা কর্মীর সংখ্যা এতোটা লক্ষ্য যায়নি। আন্দোলন সংগ্রামে শুধু ত্যাগীরাই রাজপথ কাঁপিয়েছে কিন্তু বর্তমানে যারা বিগত দিনে আওয়ামী লীগের এজেন্টা বাস্তবায়ন করেছে এরা ও বিএনপির ত্যাগী নেতা হিসেবে এখন সুবিধা নিতে চাইছে। এদিকে বর্তমানে আওয়ামী লীগের নাম গন্ধ না থাকায় বিএনপির শত্রু বিএনপিই হয়ে উঠেছে। সেইসঙ্গে দৃশ্যমান হয়ে উঠছে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল (গ্রুপিং)।
তা ছাড়া বিগত দিনে ও গ্রুপিংয়ের কবলে পরে রাজনীতিকে হ-য-ব-র-ল অবস্থায় পরিণত করেছিলেন বিএনপি। যাকে ঘিরে গত কয়েক ট্রাম্পে বিশাল বিশাল আন্দোলন হলে ও তার কোন প্রভাব পরতে দেখা যায়নি রাজনীতিতে। কিন্তু পটপরিবর্তনের পর ফের বিএনপির গ্রুপিং লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যার প্রভাব শুধু জেলা, মহানগর বা থানা কেন্দ্রিক সমীবদ্ধ নয় এটা ছড়িয়ে পরেছে ওয়ার্ড-ইউনিয়ন জুড়ে। বর্তমানে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ৩/৪টি করে গ্রুপ রয়েছে যারা বিএনপির অমুক-তমুক ভাইয়ের লোক হিসেবে পরিচিত। এদিকে বিগত দিনে আওয়ামী লীগের সাথে আতাঁত করে যারা রাজনীতি টিকিয়ে রেখেছিলেন ও যারা আন্দোলন সংগ্রামে জীবনের মায়া ত্যাগ করে মাঠে ছিলেন এদের মধ্যে সেই হাইব্রিড যারা আওয়ামী লীগের সাথে আতাঁত করে মোটা তাজা হয়েছেন এরাই বর্তমানে বনে যাচ্ছেন বড় নেতা। তা ছাড়া ও বর্তমানে কোন কমিটিতে স্থান না পেয়ে ও অমুক ওয়ার্ড, ইউনিয়ন বা থানা বিএনপি নেতা হিসেবে বড় বড় ব্যানার লাগাচ্ছে বিএনপির একাংশ বিতর্কিত নেতারা। তা ছাড়া বিএনপির কিছু কথিত নেতারা হাইকামান্ডের কথা অমান্য করে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মীদের পাশে দাড়াচ্ছে আবার অনেকে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বিভিন্ন্ পদে পদায়ন করছেন, অনেকে সুবিধা দিচ্ছেন, সুবিধা নিচ্ছেন।
এমন পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতির মাঠে এখন বিএনপির প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে বিএনপিই। জেলা ও মহানগর বিএনপির বিভিন্ন উপজেলায় একাধিকভাবে বিভক্ত হয়ে কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন নেতার অনুসারীরা। ফলে দিন যতই গড়াচ্ছে ততই বাড়ছে বিভাজন। এদিকে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টার সাথে কয়েক দফায় আলোচনা করলে ও প্রথমমতো সম্ভাব্য তারিখ দেওয়া হয়েছিলো চলতি বছরের ডিসেম্বর মাস। এর পর গত বুধবার বিএনপির মহা-সচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলগীর প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনের সম্ভাব্য তারিখ জানতে চাইলে তিনি ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে বললে তার কথায় সন্তুষ্ট হয়নি বিএনপির হাইকামান্ড। যাকে ঘিরে দ্রুত নির্বাচনের দাবিতে নতুন কর্মসূচি বা ফের আন্দোলন নামতে পারে বিএনপি সেই আলোচনা করলে ও বর্তমানে দলের মধ্যে যে গ্রুপিং বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জে যা বিএনপির জনপ্রিয়তাকে ধ্বংস করবে। এমতা অবস্থায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ আসছে না বলে দাবি অনেকের। তা ছাড়া বর্তমানে ভাইয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত অনেকেই লন্ডভন্ড করছে বিএনপির ভবিষ্যৎ।
এদিকে জানা গেছে, গত ১৭ ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে বিএনপি। এ সময় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা মামলা-হামলায় নাস্তানাবুদ হয়ে পড়েন। অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। এরই জেরে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার জনরোষে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের নিপীড়িত নেতাকর্মীরা ‘আলহাদুলিল্লাহ’ নিজ বাসায় থাকতে ও নিজের থাকা ব্যবসা বানিজ্যেতে মন দিতে শুরু করেন। এমতা অবস্থায় বিএনপির কিছু কথিত মহল মিথ্যা ও বানোয়াটভাবে বিএনপির না বিক্রি করে ১৭ বছরের লোকসান পুষিয়ে নিতে এবং এলাকায় আধিপত্য ধরে রাখতে বিভিন্ন এলাকায় মহড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন শিল্পকারখানায় নিজেদের অবস্থান জানান দিতে থাকেন। সেই ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের ফেলে যাওয়া সেই অপকর্মের স্থানগুলোতে এখন সেই নামধারী বিএনপি নেতাদের হাতই রয়েছে। তা ছাড়া বিগত দিনে বিভিন্ন স্থানে শামীম ওসমান বা তাদের পরিবারের সদস্যদের ছায়াতলে থাকা তাদের নাম বিক্রি করা অনেকেই বর্তমানে বিএনপির বহু নেতাকর্মীদের শেল্টার নিচ্ছেন ও তাদের নাম বিক্রি করছেন। যা বিএনপির জন্য দূর্নাম প্রায়। এদিকে বর্তমানে কোন কমিটি বা পদে না থেকে ও বিএনপি নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করা নেতার সংখ্যাই বর্তমানে সবচাইতে বেশি। যাদের চাপে হারিয়ে যাচ্ছে বিএনপির প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মীরা।