মশার কামড়ে অতিষ্ট নগরবাসী, বাড়ছে রোগের ঝুঁকি
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১০:৩৭ এএম, ৯ মার্চ ২০১৮ শুক্রবার | আপডেট: ১২:৪৭ পিএম, ৯ মার্চ ২০১৮ শুক্রবার
স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪ ডটকম) : মশার কামড়ে রীতিমতো অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। শীত শেষ হওয়ার পরপরই নারায়ণগঞ্জ নগরীতে মশার অত্যাচারে অস্থির হয়ে উঠেছে নগরবাসী। দিন নেই, রাত নেই প্রতিমুহুর্তেই চলছে এর অত্যাচার। বাসাবাড়ি, অফিস, খেলার মাঠসর্বত্রই মশা আর মাছির উপদ্রব। মশার অত্যাচারে বাদ যাচ্ছে না হাসপাতালগুলোও।
এবার মশার উৎপাত এত বেশি যে কয়েল, স্প্রে , মশা মারার ব্যাট কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। মশার কামড়ে যেমন অতিষ্ট নগরবাসী। তেমনি বাড়ছে মশাবহিত রোগের ঝুঁকিও। ফলে আবারও চিকুনগুনিয়ার পুনরায় আগমন ঘটবে কিনা তা নিয়ে বিরাজ করছে নগরবাসীর মনে আতঙ্ক। গত বছর আশঙ্কাজনকভাবে দেখা দিয়েছিল এর প্রার্দুভাব। এ রোগে অনেকের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।
যদিও এখন যেসব মশা কামড়াচ্ছে, সেগুলো সাধারণত কিউলেক্স মশা। কিন্তু এডিস মশার উপদ্রপ যে আবারও শুরু হবে না তাঁর কোনো নিশ্চয়তা পাচ্ছে না নগরবাসী। দেওভোগের পাক্কা রোডের বাসিন্দা রায়হান উদ্দীন। চার মাস আগে তিনি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয় তিনি। কিন্তু চার মাস অতিবাহিত হলেও এখনো সে চিকুনগুনিয়ায় প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারে নি। তিনি জানান, চার মাসে আগে রোগে আক্রান্ত হই। কিন্তু এখনো চিকুনগুনিয়ার প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এখনো প্রায়ই শরীরে যন্ত্রণা হয়।
মাঝে মাঝে জ্বরে ও পড়তে হয়। মশাবাহিত রোগ নিয়ে কয়েকজন চিকিৎসকের সাথে সাথে কথা হলে তারা জানান, মশা প্রাণীটি ক্ষুদ্র হলেও খুবই মারাত্মক। মশার কামড়ে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া, গোদ রোগসহ বিভিন্ন মারাত্মক রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে। বিশেষ করে সদ্যজাত শিশুগুলোর বিভিন্ন রোগের আশঙ্কা থাকে। সম্প্রতি মশার উপদ্রবটা বেড়েছে।
এক জায়গায় বসলেই একসাথে অগনিত মশা ঘিরে ধরে। একটা মারছি তো আরেকটা কামড়াচ্ছে। রোগের আশঙ্কা বাড়ছে। তবে যদিও মশার উপদ্রব তীব্রমাত্রায়। সেগুলো হল কিউলেক্স নামক মশা। যদিও এ মশা কামড়ালে রোগের সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু এখনতো কোনটি কিউলেক্স আর কোনটি এডিস, কোনটি স্ত্রী, কোনটি পুরুষ খালি চোখে আর বোঝার উপায় নেই।
ফলে কোনটা এডিস মশা আর কোনটার কামড়ে চিকুনগুনিয়া ,কোনটার কামড়ে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া,পীত জ্বর বা জিকা ভাইরাস সংক্রমিত হবে তা বোঝার উপায় নেই। তাই অবশ্যই মশা কামড় থেকে যতদূর সম্ভব নিজেদের বিরত রাখা উচিত। নিজেদের বাড়ির আশে পাশে থাকা আঙিনা, নর্দমা, ডোবা, ফুলের টব, ছাদের বাগান,ভবনের চৌবাচ্চা আর যদি ঝোপঝাড় থাকে সে সকল স্থানগুলো পরিস্কার রাখতে হবে। এদিকে মশার কামড়ে রীতিমত অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে নগরবাসী। নগরবাসীর অভিযোগ কিছুতেই মশার উপদ্রব কমছেনা। বরং আগে রাতে কামড়াতো এখন দিনেও। অনুসন্ধানে জানা যায়, নগরীর ২৭টি ওয়ার্ডের সর্বত্রই এখন মশার উৎপাত। মশার যন্ত্রনায় শান্তিতে কাজকর্ম করা তো দুরের কথা ঠিকমতো স্থির হয়ে বসা পর্যন্ত সম্ভব হচ্ছেনা। এদিকে গত ১ই মার্চ নারায়ণগঞ্জের সকল ওয়ার্ডে থেকে দ্বিতীয় দফায় মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন। দ্বিতীয় দফায় শুরু হওয়া সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কর্মসূচীতে ১ মার্চ ১৮ নং ওর্য়াড, ৩ মার্চ ১৭ নং ওর্য়াড,৪ মার্চ ১৬নং, ৫মার্চ ১৫ নং ওর্য়াডসহ প্রতিটি ওয়ার্ডে পর্যায়ক্রমে মার্চের ৩১ তারিখ পর্যন্ত মশক নিধন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া ১৬নং ওয়ার্ডের চারকলা ডাম্পিং স্পটগুলোতে ১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে কীটনাশক ও এলডিও ছেটানো হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ১ মার্চ থেকে সিটি কর্পোরেশন জোনাল অফিস, ৩ মার্চ থেকে জেলা প্রশাসকের অফিস, ৪ মার্চ থেকে জেলা প্রশাসকের বাসভবন, ৫ মার্চ ম্যাজিস্ট্রট কোয়ার্টার, ৬ মার্চ র্যাব অফিস,পুরাতন কোর্ট, ৭ মার্চ এসপির বাসভবন, ৮ মার্চ জেলা জজের বাসভবন, ১০ মার্চ জেলা কারাগার এবং ১১ মার্চ পঞ্চবটি সিটি পার্ক এ মশার কীটনাশক ছেটানো হবে বলে ও জানা গেছে।
কিন্তু নাসিকের এত তোড়জোড়েও মশাবাহিনীর হাত থেকে নিস্তার মিলছেনা। এমনটাই অভিযোগ নগরীর সাধারণ মানুষের। তারা বলছে, মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিকাল হলেই দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। তারপর মশার হাত থেকে নিস্তার নেই। কয়েল, স্প্রে তো থাকেই। এখন আবার মশা মারার জন্য ইলেকট্রিক ব্যাটও ব্যবহার করছি তাতেও রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না মশার উপদ্রব। এখন তো সিটি কর্পোরেশনও মাঠে নেমেছে। কিন্তু তাঁতেও তো মশার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে কথা হয় নাসিকের পরিচ্ছন্ন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন হিরণের সাথে তিনি জানান, আসলে এ বছর মশার উপদ্রবটা একটু বেশি। তবে আমরা মশক নিধনে আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তবে একটা কথা কী হঠাৎ করে তো আর একেবারে মশার এ উপদ্রবটা কমানো সম্ভব না। তবে কমবে আশা করছি। আমাদের কার্যক্রম অব্যহত রয়েছে।