জেলা জুড়ে অবাধে ব্যবহার হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন : জনজীবন বিপর্যস্ত
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১২:১৭ পিএম, ৮ মে ২০১৮ মঙ্গলবার | আপডেট: ০৫:০৫ পিএম, ১৯ মে ২০১৮ শনিবার
স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : জেলার যত্রতত্র অবাধে ব্যবহৃত হচ্ছে নিষিদ্ধ পলিথিন। ফলে ড্রেনেজ ব্যবস্থায় পলিথিন আটকে পরিবেশের ভারষম্য নষ্ট হয়ে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এ ছাড়াও পরিলথিনের জমাটবদ্ধতায় মাটির উবর্রতা শক্তি ক্রমশ কমাসহ উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা তৈরি করছে। পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেয়ে ক্যান্সার ও চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে অনেকেই।
পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে। এছাড়াও উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্থ ও চর্মপ্রদাহের সৃষ্টি হয়। তাছাড়া মাটিকে উত্তপ্ত করা ও গাছের মূল মাটির গভীরে প্রবেশে বাধার সৃষ্টি করে পলিথিন। নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে পলিথিন ব্যাগের অবাধ ব্যবহার কমাতে প্রশাসনের তেমন কোন ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জবাসীর প্রধান প্রধান সমস্যার মধ্যে একটি হলো জলাবদ্ধতা। তবে শহরের চাইতেও এ সমস্যাটি প্রকট হয়েছে ডিএনডি এলাকায়। তাই গত ২ দশকেরও বেশি সময় ধরে এলাকাটিতে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার। আর এ জলাবদ্ধতার অন্যতম কারন হচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ পলিথিন ব্যাগ।
ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলার জনজীবন ব্যবস্থা। এর উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চলছে পলিথিন ব্যাগের অবাধ ব্যবহার। জেলাটিতে এমন এলাকা পাওয়া দুষ্কর, যেখানে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার নেই। প্রকাশ্যে এখন এর ব্যবহার চলছে। সহজলভ্য ও ব্যবহারে সুবিধা বিধায় ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ই অভ্যস্ত এটি ব্যবহার করতে। অভিজাত রেষ্টুরেন্ট, মুদির দোকান, কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে ফুটপাতের প্রায় সব দোকানের পণ্য বহনে ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ। নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার তলদেশ থেকে যে সব বর্জ্য অপসারণ হয় তাতে দেখা যায় যে, উত্তোলনকৃত বর্জ্যরে অধিকাংশই পলিথিন ব্যাগ। আগে থেকে সর্বনাশা পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হলে নদীর তলদেশ থেকে বর্জ্য উত্তোলনের জন্য কোটি কোটি টাকার বাজেট করতে হতো না। শুধু শীতলক্ষ্যাই নয় বরং নারায়ণগঞ্জের চারদিক দিয়ে প্রবাহিত সকল নদীর তলদেশেই পলিথিনের দূষণ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড চলছে লাগামহীনভাবে। নদী থেকে শুরু করে শাখা নদী ও ছোট ছোট খাল বিল জলাশয়ের তলদেশেও রয়েছে পলিথিন ব্যাগের মোটা স্তর। নষ্ট হচ্ছে পানির প্রাকৃতিক গুণ। পলিথিন ব্যাগ সূর্যের আলোকে ফসলের গোড়ায় পৌঁছতে বাধা দেয়। ফলে মাটির ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মরছে না বলে কৃষিজমিতে উৎপাদন কমে আসছে।
পর্যালোচনাক্রমে জানা গেছে, পূর্বে পলিথিন ব্যাগে হাতল ছিল, এখন হাতল ছাড়া পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে। এভাবে প্রকাশ্যেই আইন ভঙ্গ করে পলিথিন ব্যবহার করে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আর এই অসচেতনতার কারণে বর্তমান বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ জেলা গুলোর মাঝে অন্যতম নারায়ণগঞ্জকে ধরা হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের পয়ঃনিষ্কাশনের ৮০ ভাগ ড্রেন পলিথিন ব্যাগ কর্তৃক জমাট বেঁধে আছে। আর তাই সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরতলী সহ ডিএনডিতে দেখা দিয়ছে অসহনীয় জলাবদ্ধতা। বৃষ্টির সময় অনেক ম্যানহোল থেকে শত শত পলিথিন ভেসে উঠতে দেখা যায়। পলিথিন ড্রেনেজ ও বর্জ্য ব্যবস্থাকে সর্বদাই অচল করে রাখছে। পরিবেশ বিশষজ্ঞদের সাথে আলোচনা করলে তাঁরাও এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করে বলেন, পুকুরের তলদেশে জমে থাকা পলিথিন মাছ ও জলজ প্রাণীর অস্তিত্ব সঙ্কট সৃষ্টি করে। বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা নদীর তলদেশে জমে থাকা কয়েক ফুট পলিথিনের স্তর নদীর তলদেশের পলি আটকিয়ে শুধু নদীর নাব্যতাই নষ্ট করছে না বরং মাছ ও জীববৈচিত্র ধ্বংস করে পানিতে স্বাভাবিক অক্সিজেনের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস করছে। কৃষি পলিথিন ব্যাগ জমির উৎপাদন মতা কমিয়ে দিচ্ছে। মূলত পলিথিন ব্যাগের সহজ প্রাপ্তি এবং সস্তা হওয়ার কারণে পাটের ব্যাগ ব্যবহারের প্রতি মানুষকে আগ্রহী করা যাচ্ছে না।
এ কারণে কমে গেছে পাটের ব্যবহার। ফলে চতুর্মুখী সমস্যা তৈরি হয়েছে। ব্যাঙের ছাতার মতো বাড়ছে পলিব্যাগ ফ্যাক্টরির সংখ্যা। মানুষকে সচেতন করা এবং কঠোর দিকনির্দেশনার মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ৯০ ভাগ মানুষ পাটের ব্যাগ ব্যবহার করছে। অথচ বংলাদেশে নিষিদ্ধ পলিথিন ফিরে আসার কারণে পাটের ব্যবহার কমে গেছে। জালকুড়ির বন্ধ হয়ে যাওয়া পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানার এক ব্যক্তি জানান, এ সকল কারখানা পরিচালনা করতে পুলিশ ও প্রশাসন সহায়তা করেন। প্রতিমাসে পুলিশ প্রশাসনকে মাসোয়ারা দিয়ে সহজেই বিভিন্ন স্থান থেকে কাঁচামাল ক্রয় করে কারখানার উৎপাদন অব্যাহত রাখা সম্ভব হচ্ছে।