উদ্ধারের অপেক্ষায় ফতুল্লা ফায়ার সার্ভিস স্টেশন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১২:২৮ পিএম, ১২ জুলাই ২০১৮ বৃহস্পতিবার
স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ‘দুর্যোগ-দুর্ঘটনায় জীবন ও সম্পদ রক্ষার মাধ্যমে নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তোলা’ এ মিশনকে সামনে রেখে কাজ করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিভেন্স। ‘অগ্নিকান্ডসহ সকল দুর্যোগ মোকাবেলায় এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হিসেবে সক্ষমতা অর্জন করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফতুল্লা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটিই রয়েছে উদ্ধারের অপেক্ষায়।
গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর রাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল উদ্বোধন করেন শিল্পনগরী বিসিক এলাকার ফতুল্লার ফায়ার স্টেশনটি। কিন্তু বর্তমানে এ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি ৩-৪ ফুট পানিতে ডুবে আছে। গাড়ি ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বিসিক ১ নং গেট মসজিদের পাশে অদূরে খোলা আকাশের নিচে জরুরী ডাকের অপে¶ায় বসে আছেন। সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটু পানিতে ডুবে যায় অপরিকল্পিতি ভাবে তৈরি করা এই ফায়ার স্টেশন। পানি নিষ্কাশনের কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার ফলেই এ জলাবদ্ধতায় ডুবে আছে স্টেশনটি। মূলত আশপাশে ডোবা নালা বালি দিয়ে ভরে ফেলায় পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই ফতুল্লা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা|
স্থানীয়রা জানান, এই ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের চার পাশে রয়েছে বিসিক শিল্পনগরীর শত শত কলকারখানা। যেকোনো বিপদ ও দুর্ঘটনায় সর্ব প্রথম এগিয়ে আসে ফায়ার সার্ভিস। সেই ফায়ার সার্ভিস যদি বিপদে পড়ে তা হলে বিপদগ্রস্থ মানুষের কী হবে? এমন ঘটনা ঘটেছে ফতুল্লা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে। এ স্টেশনটি ছাড়াও আশপাশের কয়েক হাজার বাসা বাড়ির মেঝেও রয়েছে পানির নিচে তলিয়ে। আশপাশের বাড়িগুলোতেই বিসিকে কর্মরত শ্রমিকরা বসবাস করেন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বিসিকসহ আশপাশের এলাকায় মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আশপাশে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের ফতুল্লা স্টেশনের সহযোগিতা তাৎ¶নিক পাওয়াও সম্ভব নয় বলে স্থানীয়দের দাবী।
ফতুল্লা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র রায়হানুল আশরাফ তাদের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে বলেন, জলাবদ্ধতা শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই। গত এক সপ্তাহ যাবৎ ফতুল্লা ফায়ার সার্ভিসটির নিচতলায় পুরোপুরি জলাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। আমাদের অপারেশন কার্যক্রম, গাড়ি, জনবল সবকিছু রয়েছে বিসিক মসজিদের সামনে। মসজিদের দোতলায় ফায়ার সার্ভিসের লোকজন অবস্থান করছেন। ফায়ার স্টেশন থেকে পানি নামা না পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করবেন। আরো দুুই তিন দিনের মধ্যে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার আশা প্রকাশ করছে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন।
ফায়ার সার্ভিসের আজকের এ জলাবদ্ধতার পেছনেও রয়েছে একটি বিশাল কারণ। এ স্টেশনটির জলাবদ্ধতার প্রথম ও প্রধান কারণ হচ্ছে নির্মাণ ত্রæটি। যেটা করেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। গণপূর্তের খামখেয়ালিপনায় এ নির্মাণ ত্রæটির কারণে সরকারের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে। গণপূর্তের তত্ত¡াবধানে যখন এ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটির গ্রাউন্ড ফ্লোর তৈরীর সময় ওয়াটার লেভেল মেনে তারা এটি বানায়নি। বিসিকের সমস্ত ভবন উঁচু থাকলেও ফতুল্লা ফায়ার স্টেশনটি করা হয়েছে নিচুঁ মেঝেতে। গণপূর্ত তার মনের মতো ঠিকাদার দিয়ে কাজ করানোয় সঠিক কাজটি না করাতে পারায় আজ ফতুল্লা ফায়ার সার্ভিস পানির নিচে। এতো অল্প পানিতে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনটি ডোবার কথা না।
শুকনো মৌসুমে ওভাবে এ সমস্যাটি বোঝা যায় নি। বর্ষার মৌসুম আসার আগেই বিষয়টি সমস্যা ধরা পড়েছে। এ সমস্যাটি টেকনিক্যাল। গণপূর্তের খামখেয়ালিপনার কারণেই আজ আমাদের এ দুর্ভোগ।
জলাবদ্ধতার সম্মুখীন হওয়ার পরপরই আমরা আমাদের যন্ত্রপাতিগুলো ভবনের দোতলায় তুলে নিয়েছি। কিন্তু নিচ তলায় যত জানালা দরজা আছে, যত ইলেকট্রিক লাইন আছে, রং বার্নিশ সবই মোটামুটি দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে আমরা গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের, বিসিক শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি, ডিজি মহোদয়কে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান বলেন, ফতুল্লা ফায়ার সার্ভিসের জলাবদ্ধতা নিরসনে বিসিকের সাথে ফায়ার সার্ভিসের একটি মিটিং হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিসিকের ওউনার্স এসোসিয়েশন নিজ খরচে ফায়ার সার্ভিসের পুরো চত্তরটি নিজ খরচে উঁচু করে দেবেন। তারা উদ্যেগ নিলেও বৃষ্টির জন্য কাজটি শুরু করতে পারে নি তারা। আমরা সেখানে আমাদের টেকনিক্যাল এসিট্যান্ট দেবো সেখানে।
নির্মাণ কোন ত্রæটি নেই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, আসলে এ সাইডটিতে লেভেলটি একটু নিচু করে করা হয়েছিলো। এর পেছনের দিকে একটি খালের মতো ছিলো ড্রেনেজ সিস্টেমের জন্য। কিন্তু খালটি তারা বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে এটি হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে এখনকার যে উদ্যেগ নেয়া হয়েছে তাতে স্থায়ীভাবেই সমাধান পাবে ফতুল্লা ফায়ার সার্ভিস এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক মামুনুর রশিদ যুগের চিন্তা ২৪কে জানান, জলাবদ্ধতা নিরসনে বিসিকের তরফের থেকে আমাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে আমাদের স্টেশনটির কম্পাউন্ডটি, সামনের রাস্তাটি ২ থেকে আড়াইফুট উঁচু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পানি শুকিয়ে গেলে তারা হয়তো কাজ শুরু করবে। এটি হলে হয়তো সমস্যা অনেকটা সমাধান হয়ে যাবে। ভারী বর্ষায় এটি সমস্যা হবে কিনা সেটা পরবর্তীতে বোঝা যাবে।