বুধবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৪ ১৪৩১   ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ কচুরিপানায় পরে মাটি চাপা দিয়ে গুম(ভিডিও)

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৬:৩২ পিএম, ৭ জুন ২০১৯ শুক্রবার

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : সোনারগাঁয়ে মিনু আক্তার (৩৫) নামের এক নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ গুমের রহস্য উদঘাটন করেছে র‌্যাব।

ঘটনার ১৭ দিন পর শুক্রবার দুপুর বারোটায় উপজেলার কাঁচপুর মঞ্জিলখোলা এলাকার বিলের মাঝখানে একটি পরিত্যক্ত জায়গার মাটি খুঁড়ে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এ হত্যাকান্ডে জড়িত অভিযোগে র‌্যাব নিহত নারীর সাবেক স্বামী জুনায়েদকে আটক করেছে। 

নিহত মিনু আক্তারের মা মদিনা বেগম জানান, ব্রক্ষণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর এলাকার জুনায়েদ আহমেদ কাচঁপুরের কুতুবপুরের অলম্পিক ব্যাটারী ফ্যাক্টরীতে কাজ করার সুবাদে কুতুপুরের আব্দুল হাসেমের দ্বিতীয় মেয়ে মিনু আক্তারের সাথে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুত্রে ধরে তাদের মধ্যে প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠে। পরে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।  


এটি ছিলো জুনায়েদ আহমেদর দ্বিতীয় এবং  মিনু আক্তারের পঞ্চম বিয়ে। মিনুর পুর্বের সংসারে তিন ছেলে রয়েছে। কিন্তু জুনায়েদের সংসারে কোন ছেলে মেয়ে হয়নি। এক বছর আগে জুনায়েদ দ্বিতীয় স্ত্রী মিনুকে তালাক দেয়। কিন্তু স্ত্রীর পাওনা টাকা পরিশোধ না করায় মিনু আক্তারের সাথে জুনায়েদের বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে জুনায়েদের সাথে মিুনুর কয়েক দফা ঝগড়াঝাটিও হয়। 


নিহতের মা আরো জানান, গত ২১ মে রাতে মিনুকে মোবাইল ফোনে কে বা কারা বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকেই মিনু নিখোঁজ হন এবং তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। সকালে মিনুর কোন কোন হদিস না পেয়ে তার মা ও তিন বোন বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। এক পর্যায়ে জুনায়েদের বাড়ি গিয়ে মিনুর খবর জানতে চাইলে জুনায়েদ তার বর্তমান স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যায়। 


এ ঘটনার পরদিন মিনুর মা বাদি হয়ে সোনারগাঁ থানায় সাধারণ ডায়েরি করে। পরে পুলিশ জুনায়েদের বাসা থেকে রক্তমাখা লুঙ্গি ও নারীর মাথার লম্বা চুল জব্দ করে। কিন্তু পুলিশ জোনায়েদকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ২৩ মে ওই জিডির কপি নিয়ে মদিনা বেগম র‌্যাব-১১ কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি মেয়ের হত্যাকারী জোনায়েদের ফাঁসির দাবি করেছেন। 


র‌্যাব-১১ সিও লেফটেনেন্ট কর্ণেল কাজী শামসের উদ্দিন জানান, মিনুর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসার পর পরই র‌্যাব বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নিয়ে তদন্ত শুরু করে। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে মিনু আক্তারের সাবেক স্বামী জুনায়েদ আহমেদকে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল থেকে গত (৬ জুন) বৃহস্পতিবার মধ্য রাতে গ্রেফতার করে। 


র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জুনায়েদ সাবেক স্ত্রীকে হত্যা ও লাশ গুমের কথা স্বীকার করেন। পরে তার দেখানো মতে মঞ্জুরখেলা বিল থেকে বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করে এবং জোনায়েদের ভাড়া বাড়ির পাশের পুকুর থেকে জামা কাপড় উদ্ধার করে র‌্যাব। এসময় এলাকার শত শত মানুষ ঘটনাস্থলে এসে ভীড় জমান। 


জুনায়েদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে র‌্যাবের সিও আরো জানান, প্রথম স্ত্রীর অনুপুস্থিতিতে জুনায়েদ ২১ মে রাত আনুমানিক তিনটার দিকে সাবেক স্ত্রী মিনু আক্তারকে মোবাইল ফোনে বাসায় ডেকে এনে তার সাথে বিবাহ বহির্ভুত অনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। 


পরে মিনু আক্তার ঈদের মধ্যে কাপড়ের ব্যবসা করার জন্য জুনায়েদের কাছে ২ লাখ  টাকা দাবি করলে জুনায়েদ মিনু আক্তারকে চড়-থাপ্পড় দেয় এবং এক পর্যায়ে জুনায়েদ ঘরের মধ্যে থাকা একটি বাশের লাঠি দিয়ে মিনু আক্তারকে মাথায় আঘাত করে। মিনু আক্তার ঘরের মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে গেলে জুনায়েদ মিনু আক্তারের বুকের উপরে বসে গলা টিপে শ¡াসরুদ্ধ করে হত্যা করে।  


হত্যার পর ভোরে মিনু আক্তারের বুকে রশি বেধে বিবস্ত্র অবস্থায় ঘর থেকে টেনে হেঁচড়ে বাড়ীর পাশের পুকুরের কচুরীপানার নীচে লুকিয়ে রেখে জুনায়েদ ঘরে ফিরে আসে। পরবর্তীতে জুনায়েদ সকালের দিকে তার কর্মস্থলে চলে যায়। 


এর পরদিন (২৩ মে) গভীর রাতে পুকুরের কচুরিপানা থেকে মিনু আক্তারের মৃতদেহ উঠিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে পাশের ড্রেজারে বালি ফেলার স্থানে নিয়ে গিয়ে গর্ত করে মাটির নীচে চাপা দিয়ে লাশ গুম করে। পরবর্তীতে মিনুর খোঁজে তার মা জুনায়েদােদর ভাড়া বাসায় আসলে জুনায়েদ কৌশলে পালিয়ে যায়। 


র‌্যাব জানিয়েছে, এ হত্যাকান্ডের সাথে জুনায়েদের স্ত্রী বা আরো কেউ জড়িত আছে কিনা সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের সহ জুনায়েদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে রেকর্ড করার প্রক্রিয়া চলছে।