শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৭ ১৪৩১   ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রেলওয়ের উচ্ছেদ : মনির হোটেলসহ বাকিদের সৌভাগ্য না দুর্ভাগ্য !

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ১০:৪৩ পিএম, ১৯ অক্টোবর ২০১৯ শনিবার

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) :  ডাবললেন রেললাইন প্রকল্পের জন্য উচ্ছেদ অভিযান রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। টানা দুইদিনের প্রথমদিন ১নং রেললাইন এলাকায় প্রায় ৯০০ অবৈধ স্থাপনা এবং দ্বিতীয়দিন ২নং রেলগেট এলাকা থেকে রেললাইনের দুইপাশে প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকার পূর্ব দিকে ২৮ ফুট এবং পশ্চিম দিকে ৪৫ ফুট পর্যন্ত জায়গা অবৈধ দখলদারদের স্থাপনা উচ্ছেদ করে রেলওয়ে।

 

তবে ওইদিন রেলওয়ে মার্কেটের একেবারে প্রথম সারিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠা মনির হোটেলসহ বেশ কিছু স্থাপনা উচ্ছেদের আগে ৩দিনের সময় দিয়ে যায় রেলওয়ে। তিনদিন সময় পেরিয়ে এখন দেখার বিষয় মনির হোটেলসহ রেলওয়ে মার্কেটের সামনের দিকের স্থাপনার বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে। রেলওয়ের চলমান উচ্ছেদ অভিযানে অনেক ব্যবসায়ীই নিঃস্ব হয়ে গেছেন বলে দাবি করেন।  
 
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের দুইনং রেলগেট থেকে উকিলপাড়া পর্যন্ত রেললাইনের দু’পাশে বাংলাদেশ রেলওয়ের বিশাল জায়গার মধ্যে গড়ে উঠেছিলো বাংলাদেশের বৃহত্তম থান কাপড়ের মার্কেট।

 

প্রথমে ১৯৯০ সনের দিকে একটি জলাশয় বালুদিয়ে ভরাট কওে ছোট পরিসরে থান কাপড়ের ব্যবসার সূচনা হলেও এরপর বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমির লিজ নিয়ে, সেই জায়গায় দোকান তৈরি করে পুরো দমে থান কাপড়ের ব্যবসায় নামে প্রায় ৫০০ জন ব্যবসায়ী। আর ২০১৯ সাল নাগাদ মার্কেটটিতে নিবন্ধিত ব্যবসায়ীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজারের বেশি এবং ব্যবসায়ী ও কর্মচারী নিয়ে সর্বমোট ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয় এখানে।

 

ত্রিশ বছরের পথচলায় ধীরে ধীরে স্থানীয় মার্কেট থেকে এটি পরিণত হয় আন্তর্জাতিক বাজারে। কাতার, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফিলিপাইন, ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশের ব্যবসায়ীরা কাপড় ক্রয় করতো এখান থেকে। পুরনো ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি অনেক নতুন ব্যবসায়ীরাও পা রেখেছিল এই থান কাপড়ের ব্যবসায়।

 

প্রত্যেক ব্যবসায়ীর আশা ছিলো বদল হবে নিজের ও পরিবারের ভাগ্য কিন্তু সেই ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! ঢাকা টু নারায়ণগঞ্জ রেললাইন ডাবললেন করার জন্য গত ১৭ই অক্টোবর সকাল ১১টা থেকে বিকেল পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়; থান কাপড়ের এই পুরনো মার্কেটটি। এতে একেবারে নিঃস্ব হয়ে যায়, বহু ব্যবসায়ী। কর্মসংস্থান হারায় হাজারো লোকজন। স্বপ্ন ভঙ্গ হয় অনেকের।
 
শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুই নং রেলগেট থেকে উকিলপাড়া পর্যন্ত  রেললাইনের দুপাশে’র প্রায় ৮০ ফুট জায়গার মধ্যে গড়ে উঠা সকল অবৈধ দোকান গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে সেখানে তৈরী হয়েছে এক বিশাল ধ্বংস স্তুপ। সেই ধ্বংস স্তুপ থেকেই নিজেদের প্রয়োজনীয় মালামাল ও জিনিসপত্র খুঁজে নিচ্ছে অনেক ব্যবসায়ীরা। 


এসময় কথা হয় মোক্তার হোসেন নামে এক থান কাপড়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে। উচ্ছেদের সময় তাঁর নিজের একটি দোকান ভেঙে দেয়া হয়। তিনি বলেন, ৩ বছর আগে নগরীর দিগুবাবুর বাজারের সবজির আড়ত ছেড়ে দিয়ে ১৪ লাখ টাকায় অন্য এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে  দোকান ক্রয় করে এখানে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করি। তখনও জানা ছিলোনা যে এইদিকে উচ্ছেদ হবে।

 

ভেবেছিলাম এখানে ব্যবসা করে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের মতো আর্থিকভাবে আরো সাবলম্বী হতে পারবো কিন্তু রেলওয়ে দোকান ভেঙে দেয়ার পর একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেলাম। সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।


মোহাম্মদ রাজু নামে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, কয়েক বছর আগেই সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই) থেকে এসে অগ্রীম তিন লাখ টাকা বাবদ অন্য এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি দোকান ভাড়া নেই ব্যবসার জন্য। কিন্তু রেলওয়ের উচ্ছেদে আমার দোকানসহ আশেপাশের বহু দোকান ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন আর ব্যবসা করবো কিভাবে?


অনেকের এখন অভিযোগ, উকিলপাড়া থেকে দুই নং রেলগেট পর্যন্ত দুইপাশের সকল দোকান ভেঙে দেয়া হলেও অস্বাভাবিক কারণে ভাঙা হয়নি রেলওয়ে মার্কেটের একেবারে প্রথম সারিতে অবৈধ ভাবে গড়ে উঠা মনির রেস্তোরা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেকে জানান, থান কাপড়ের মার্কেটে উচ্ছেদ চলাকালে  পূর্ব দিক থেকে ২৮ ফুট ও পশ্চিম দিক থেকে ৪৫ ফুট করে গুঁড়িয়ে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তবে পূর্ব দিকে মনির রেস্তোরা ও হোসেন ট্রেডার্স বাদ দিয়েই সকল দোকান ভাঙা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক থানকাপড়ের ব্যবসায়ী বলেন, মনির রেস্তরার মালিক নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির ও তাঁর ভাই হোসেন মিয়া (হোসেন ট্রেডার্সের মালিক) উচ্ছেদ চলাকালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও রেলওয়ের উপ-সচিব নজরুল ইসলামের সাথেই ছিলো।

 

এ সময় নাকি তাঁদেরকে তিন দিনের সময় দেয়া হয় দোকান সরানোর জন্য কিন্তু এই মার্কেটের অধিকাংশ দোকান ভেঙে ফেলা হলেও মনির রেস্তোরাসহ আরো বেশ কয়েকটি দোকানদারকে সময় দেয়া হলো। আমাদের কোন সময় দেয়া হয় নাই।