নারায়ণগঞ্জের লজ্জা ঢাকলেন শামীম ওসমান
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:২৪ পিএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৯ শুক্রবার
স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডটি নারায়ণগঞ্জবাসির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কেননা এই সড়ক দিয়েই প্রতিদিন রাজধানীতে যাতায়াত করছে হাজার হাজার মানুষ। তেমনি ঢাকা থেকেও নারায়ণগঞ্জমুখি ভিভিআইপি ব্যক্তিরা এই পথটিকেই বেছে নেন। বিশেষ করে অল্প সময়ে নির্জঝঞ্জাট যাতায়াতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের জুড়ি নেই।
কিন্তু এই রোডের জালকুড়ি এলাকায় গতকাল প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়ায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। অনেকের মধ্যেই প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে কেন এই কাপড়। গাড়িতে যেতে যেতে অনেকেই নাকে কাপড় দিয়ে প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়িয়েছেন।
যাত্রীরা বলাবলি করেছেন এখানে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) প্রতিদিন টনে টনে ময়লা ফেলে পরিবেশ বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এটাতো নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য লজ্জাজনক। সেই লজ্জা ঢাকতেই গতকাল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান লিংক রোডের প্রায় আধা কিলোমিটার এলাকা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানাগেছে, এই রোড দিয়ে গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে নারায়ণগঞ্জে ছুটে এসেছিলেন আমেরিকার পাঁচজন সিনেট সদস্যসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। উদ্দেশ্য নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্ট শিল্পের উন্নয়ন পর্যবেক্ষণসহ একটি মতবিনিময় সভায় যোগ দেওয়া।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের জালকুড়ি এলাকায় এসে মার্কিন সিনেটররা যেন ময়লার ভাগাড় দেখে বিব্রত বোধ না করেন, নারায়ণগঞ্জ তথা নারায়ণগঞ্জবাসী সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ না করেন সেটা রোধ করতেই শামীম ওসমান সাদা কাপড় দিয়ে ময়লার অংশটুকু ঢেকে দিয়েছিলেন। তাতে দুর্গন্ধ রোধ করতে না পারলেও নারায়ণগঞ্জবাসীর লজ্জা হয়তো কিছুটা ঢেকে দিতে পেরেছেন।
জানাগেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলে সিনেটরদের মধ্যে ছিলেন- লুইস আর সেপুল ভেদা, জেমস স্কৌফিস, জন সি লিউ, কেভিন এস পার্কার এবং লেরয় কমরি। এবারই প্রথমবারের মতো তারা বাংলদেশে পরিদর্শনে এসেছেন।
নারায়ণগঞ্জে এসে জঙ্গিবাদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স, মাদক নিয়ন্ত্রন এবং দূর্ণীতি রোধে দেশের চলমান শুদ্ধি অভিযানের কারনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ সিনেটরের প্রতিনিধি দল।
শুক্রবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় নাসিম ওসমান মেমোরিয়াল পার্কের কনভেনশন হলে গার্মেন্টস শিল্পের উন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিনিধি দলটি তাদের মতামত ব্যক্ত করেন।
সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ মতবিনিময় সভায় বিকেএমইএ, চেম্বার অব কমার্স, বিএমএ, বার এ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও নানা শ্রেনীপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
মত বিনিময় শেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটররা ফতুল্লার বিসিক শিল্পনগরীর বেশ কয়েকটি আধুনিকমানের রপ্তানিমূখী গার্মেন্টস শিল্প কারখানা পরিদর্শন করেন। এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের নানা সুযোগ সুবিধার কথা জেনে তারা খুশি হয়েছেন এবং দেশের গার্মেন্ট শিল্পের প্রশংসাও করেছেন। বাংলাদেশের শিল্প খাতকে আরো এগিয়ে নেয়ার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাতে আরো ভালো ভূমিকা রাখতে পারে সে ব্যাপারে নিজ দেশের শীর্ষ পর্যায়ে সুপারিশ করবেন বলেও তারা আশ্বাস দেন।
এদিকে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, নিজেদের কোন ডাম্পিং স্টেশন না থাকায় নারায়ণগঞ্জ শহরের গৃহাস্থলীর ময়লা আবর্জনা অপসারণ নিয়ে কয়েক বছর ধরেই টালবাহানা করছে সিটি কর্পোরেশন।
ফতুল্লার পঞ্চবটী এলাকায় (মেথর খোলা) সাবেক পৌর আমল থেকেই শত বছরের ডাম্পিং স্টেশন থাকলেও সেখানে অর্থনৈতিক লাভের আশায় বেসরকারী পার্ক ও মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। কোন অনুমতি না নিয়েই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের জালকুড়িতে ময়লা ফেলছে।
সেখানে রাস্তার দু’পাশে প্রায় অর্ধ কিলোমিটার জায়গায় সিটি কর্পোরেশনের বিশাল ময়লার ভাগারের কারণে আশপাশের কয়েক হাজার অধিবাসীকে অবর্ননীয় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশেই ফতুল্লা খান সাহেব ওসমান আলী ক্রিকেট স্টেডিয়াম।
এই ভেন্যুতে প্রায়শই বিদেশী খেলোয়াররা আসার পথে ওই ময়লার স্তুপের সম্মুখীন হয়ে নাকে কাপড় চেপে ধরতে বাধ্য হন। এতে করে তাঁরা আমাদের দেশ তথা নারায়ণগঞ্জ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন তাঁরা। এইভাবে রাস্তার পাশে ময়লা ফেলা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত।
এদিকে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর ফতুল্লা স্টেডিয়াম সংলগ্ন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে ময়লা ফেলা প্রসঙ্গে গণমাধ্যমে নাসিকের পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক শ্যামল পাল স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের স্থায়ী ডাম্পিং গ্রাউন্ড না থাকার দৈনিক উৎপাদিত বর্জ্য ইতোপূর্বে জালকুড়ি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে পরিত্যক্ত জায়গায় সাময়িকভাবে ফেলা হতো। কিন্তু ২০১৭ সাল হতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের আলামিন নগরের পতিত জায়গায় ডাম্পিং করা হয়। তখন থেকেই অদ্যাবধি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পার্শ্বে কোন বর্জ্য ফেলে না।
বিবৃতিতে আরো উল্লেখ করা হয়, খান সাহেব ওসমান আলী ষ্টেডিয়াম সংলগ্ন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ে কে বা কারা ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। এ নিয়ে প্রায়শই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে দোষারোপ করা হলেও প্রকৃতপক্ষে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন হতে কোন বর্জ্য সেখানে ফেলা হয় না। কিন্তু বাস্তব বিষয়টি অনুধাবন না করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনকে দায়ী করে নানাবিধ অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যা সচেতন নাগরিক হিসেবে কারো কাম্য নয়।