বুধবার   ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪   পৌষ ৪ ১৪৩১   ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পুরোনো রূপে ফিরছে নারায়ণগঞ্জ

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৩:১৫ পিএম, ৮ নভেম্বর ২০১৯ শুক্রবার

স্টাফ রিপোর্টার (যুগের চিন্তা ২৪) : নারায়ণগঞ্জের বাতাসে ফের পুরোনো বাতাস বইতে শুরু করেছে। বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে আবারো হকার বসতে শুরু করেছে। একই সাথে অবৈধ স্টান্ড, অবৈধ পার্কিং এ নগরের সড়কগুলোতে বাড়ছে যানজট। একদিকে পুলিশ আর হকারদের সাথে চোর পুলিশ খেলা চলে। অন্যদিকে পুলিশের সামনেই অবৈধ পার্কিং এ আবারো ভোগান্তিতে নগরবাসী।


বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সরেজমিন বঙ্গবন্ধু সড়ক, ২নং গেট সহ একাধিক সড়ক ঘুরে দেখা যায়, হকার, অবৈধ স্টান্ড ও অবৈধ পার্কিং এর রাজত্ব। বঙ্গবন্ধু সড়কের দুইপাশে হরেকরকম পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকার্সরা। তবে পূর্বে চৌকি বা টেবিলের উপর পণ্য নিয়ে বসলেও এখন তারা বের করেছেন পন্য বিক্রির জন্য চাকা ওয়ালা একটি বিশেষ ভ্যান গাড়ি। গাড়িটি ছোট হওয়ায় সহজেই ফুটপাতে রেখে পন্য বিক্রি করা যায়।

 

অন্যদিকে এই গাড়ির বিশেষত্ব পুলিশ এলেই দ্রæত ফুটপাত থেকে সড়ে যাওয়ার এই গাড়ি দিয়ে পন্য বিক্রি করা হয়। ফুটপাতের একদিকে নয় দুইদিকেই পণ্য নিয়ে বসে তারা। তাকে প্রতিদিন বিকালের সময় ফুটপাতে হকারের সংখ্যা বাড়তে থাকে কিন্তু আজ সকাল থেকেই ফুটপাতে হকারদের বশে সমাগম দেখা যায়। সড়কের ফুটপাতের বেশির ভাগ জায়গাজুড়ে হকাররা বেচাকেনা শুরু করেন। ফুটপাতে পথচারীদের চলাচলে ব্যাপক  ভোগান্তিতে পড়তে হয়। একসাথে একজনের বেশি দুইজন পথচারীর চলাচলের পথ খালি নেই।


আবার বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতের উপরে নিচে দুইদিকেই অবৈধ পার্কিং। নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক, নবাব সিরাজদ্দৌল্লাহ সড়কে অবৈধ স্টান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এরফলে নগরে সড়কে প্রতিদিনই যানযট বাড়ছে।


২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু সড়কের ফুটপাতে হকার্স উচ্ছেদ করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন। এরপর শহরে হকাররা সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, স্মারকলিপি ও সড়ক অবরোধের কর্মসূচী পালন করে। ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি সলিমুল্লাহ সড়কে হকারদের সমাবেশে সাংসদ শামীম ওসমান বিকাল ৫ টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত হকারদের বসার নির্দেশ দেন। বিকল্প ব্যবস্থা না করে হকার্স উচ্ছেদ চলবে না বলে জানান।

 

পরদিন ১৬ জানুয়ারি ফুটপাতে হকার বসার বিষয়কে কেন্দ্র করে সাংসদ শামীম ওসমান সমর্থক ও হকারদের সঙ্গে মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে মেয়র আইভী, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক সহ উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এই ঘটনার পর কিছুদিন ফুটপাতে হকাররা না বসলেও পুনরায় আবার হকাররা বসা শুরু করে।

 

পরবর্তীতে ২ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে পুলিশ সুপার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন আলোচিত সদ্য সাবেক হয়ে যাওয়া পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ। তিনি এসে হকার উচ্ছেদ করে  ফুটপাত ফাঁকা করে দেয়। এবং কঠোর ভাবে পুলিশ টহলের নির্দেশ দেন। একই সাথে ২নং গেটের হকার, মীরজুমলা সড়কেও কঠোরভাবে হকার উচ্ছেদ করেন।

 

আবার অন্যদিকে অবৈধ পার্কিসহ যানজট নিরসনে বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেন। এরফলে গত দুই ঈদে তেমন যাজট হয়নি। এছাড়াও যানজটের মাত্রা অনেকটাই হ্রাস পায়। এসব কার্যক্রমে তিনি  নগরবাসীর কাছে ব্যাপক প্রশংসিত হন। কিন্তু সম্প্রতি এসপি হারুনকে পুলিশ অধিদপ্তরের টিআর (ট্রেনিং রিজার্ভ) শাখায় বদলি করা হয়েছে।

 

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুরে জেলা পুলিশ লাইনে তাকে বিদায়ী সংবর্ধনা দেয় জেলা পুলিশ।  তবে তার হঠাৎ বদলির সংবাদে পুরোনো রুপে ফিরতে শুরু করছে নারায়ণগঞ্জ। হকাররা স্বস্তিতে পুনরায় পণ্য বেচাকেনা করছে। পুলিশ টহলের কোন চিন্তা নেই। আবার বিভিন্ন সড়ক জুড়ে যানবাহনের অবৈধ পার্কিং ও স্টান্ডের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট।   

 

পথচারী আরিফুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন নগরবাসী হকারমুক্ত ফুটপাতে স্বস্তিতে হাঁটছে। কিন্তু কয়েকদিন যাবৎ আবারো ফুটপাতে হকারের সংখ্যা বাড়ছে। হকারাদের কারণে ফুটপাত দিয়েও শান্তিতে চলতে পারি না। আবার অবৈধ স্টান্ডের কারণে আমরা ফুটপাত ছেড়ে সড়কের পাশ দিয়েও চলতে পারি না।  ফুটপাতে হকার না থাকায় নগরে যানজটও ছিল কম। কিন্তু এখন যানজট বাড়ছে। আমরা নগরবাসী হকার মুক্ত ফুটপাত ও যানজট মুক্ত চাই।