আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল
আলোচনায় নারায়ণগঞ্জের ৮ নেতা
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১১:৫৭ এএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার
যুগের চিন্তা ২৪ : আওয়ামী লীগের আগামী কেন্দ্রীয় কমিটিতে তরুণ নেতৃত্ব প্রাধান্য পাচ্ছে। জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব গড়ে তুলে দলকে আরও গতিশীল করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এ প্রক্রিয়ায় বিদায়ী কমিটির নিষ্ক্রিয় ও বিতর্কিত নেতাদের বাদ দিয়ে মেধাবী, স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির তরুণ নেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি গঠন করা হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
এমন উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় ক্ষমতাসীন দলের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ পেতে ইচ্ছুক নারায়ণগঞ্জের বেশ কয়েকজন নেতার নামও আলোচনায় আসছে।
নেতৃত্বে উঠে আসবেন এমন সংগঠকদের তালিকায় মন্ত্রিসভা ও জাতীয় সংসদের তরুণ সদস্য এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক ও সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাদের নামও রয়েছে।
দলসমর্থক ও সমমনা বিভিন্ন পেশাজীবী, নারী ও যুব সংগঠনের নেতারাও পদ পেতে দলের নীতিনির্ধারক নেতাদের নজরে আসার চেষ্টা করছেন। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয় ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পদপ্রত্যাশী এসব নেতার পদভারে মুখর হয়ে উঠেছে।
আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিল হবে রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বর্ণাঢ্য আয়োজনে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের সরকারি ও দলীয় পরিকল্পনার কারণে এবারের কাউন্সিল অনেকটাই সাদামাটাভাবে হতে যাচ্ছে।
জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর দিন আগামী বছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ পর্যন্ত বছরজুড়ে সারাদেশে এই ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপিত হবে। এর মাস তিনেক আগে অনুষ্ঠেয় জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে দলীয় নেতৃত্বে কী পরিবর্তন আসে-তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে সব মহলেই।
তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দিয়ে দলকে এগিয়ে নেওয়ার এমন প্রচেষ্টা অবশ্য আওয়ামী লীগে আগে থেকেই চলে আসছে। বিশেষ করে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী প্রেক্ষাপটে দল ক্ষমতায় আসার পর অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সব ক’টি জাতীয় কাউন্সিলেই এর প্রতিফলন দেখা গেছে। ২০০৯, ২০১২ ও ২০১৬ সালের তিনটি কাউন্সিলেই অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাদের ঠাঁই মিলেছে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে।
বয়সে প্রবীণ নেতাদের দলের উপদেষ্টা পরিষদে নিয়ে তাদের জায়গায় নতুন নেতৃত্ব আনা হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদে ভূমিধস বিজয়ের পর গঠিত টানা তৃতীয় মেয়াদের সরকারেও অপেক্ষাকৃত নবীন ও তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
কয়েকজন নেতা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদ শুরুর এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানের প্রেক্ষাপটে দলে তরুণ নেতৃত্ব গড়ে তোলার ধারাবাহিক সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হয়েছে।
শুদ্ধি অভিযানের মধ্যে অনুষ্ঠিত দলের সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সব সম্মেলনেই পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তির তরুণ নেতারা শীর্ষ নেতৃত্বে উঠে এসেছেন। সর্বশেষ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলেও এর প্রতিফলন ঘটতে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজেও তরুণদের দিয়ে দলকে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত করে তোলার বিষয়ে বিশেষভাবে আগ্রহী।
আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের প্রতিটি কাউন্সিলেই নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ত্যাগী ও দক্ষতাসম্পন্ন তরুণদের গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই আগে থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়ার প্রত্যাশায় আছেন অনেকেই।
এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপটে আয়োজিত কাউন্সিলে সেই প্রত্যাশা তাদের আরও বেড়েছে। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা এবার তাদের যথাযথ মূল্যায়ন করবেন বলেই তাদের বিশ্বাস।
আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে ঘোষিত ৮১ জনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী ছিলো মাত্র ১৫ জন। দলটি লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ পিছিয়ে। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
১৪ সদস্যের সভাপতিমন্ডলীতে তিন নারী হলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী ও সাহারা খাতুন। ৩১টি সম্পাদকীয় পদের মধ্যে নারীরা পেয়েছেন মাত্র ৫টি।
তাঁরা হলেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, নারীবিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা, শিক্ষা ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা এবং স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা।
২৮ জন সদস্যের মধ্যে নারী পাঁচজন। ২০২০ সালের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব স্তরের নেতৃত্বে ৩৩ শতাংশ নারীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে সেটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসরন করা হবে বলে জানিয়েছে সূত্র।
আর এবারের সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক ) ডা.সেলিনা হায়াৎ আইভীর নামও জোরেসোরে আলোচনা হচ্ছে। কমিটির প্রভাবশালী যে কোন পদে আইভী থাকতে পারেন বলে একটি গুঞ্জন রয়েছে।
এছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক কিংবা মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক পদে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী এবং নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ গোলাম দস্তগীর গাজীর (বীর প্রতিক) নাম আলোচনায় রয়েছে।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিভিন্ন পদে আসতে পারেন এমন সম্ভাব্য কয়েকজন নেতার নামও আলোচনায় আসছে। পদপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছে।
এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বাবু, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি শামীম ওসমান, সাবেক সহসভাপতি এএইচ মাসুদ দুলাল রয়েছেন বলে জানিয়েছে সূত্র।
এছাড়া আলোচনায় রয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনও। এই কাউন্সিলে তিনিও কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদকমন্ডলীর যে কোন পদে আসলে অবাক হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছে সূত্র। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাইয়ের নামও তাঁর বন্ধুমহলে আলোচনায় রয়েছে।
এছাড়া আলোচনায় রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির অন্যতম সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এড.আনিসুর রহমান দিপু।
এই প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলীয় ফোরামের একাধিক বৈঠকে বলেছেন, আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর কমিটিসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে সম্পূর্ণ নতুন মুখ এসেছে।
কেন্দ্রীয় কমিটিতেও অনেক নতুন মুখ আসবে। আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল মানেই নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে নতুন নেতৃত্ব গড়ে ওঠা।