রোববার   ২৪ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১০ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিরল বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হল নারায়ণগঞ্জ

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৪৩ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ বৃহস্পতিবার

যুগের চিন্তা ২৪ : ১৭২ বছর পর দেখা মিলল বিরল সূর্যগ্রহণের। এটি বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণ। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ‘রিং অব ফায়ার’।

 

জানা যায়, এই সূর্যগ্রহণ পূর্ণগ্রাস নয়। এটিকে বলয়কার সূর্যগ্রহণকে ‘আগুনের বলয়’ও বলা হয়। পৃথিবী আর সূর্যের সঙ্গে এক সরলরেখায় চাঁদ এসে গেলে সেই ছায়া পৃথিবী পৃষ্ঠে পড়ে। একেই সূর্যগ্রহণ বলে। যদিও এবার চাঁদ পৃথিবী থেকে কিছুটা দূরে থাকায়  চাঁদের প্রচ্ছায়া পৃথিবীর উপরে পড়বে। এর ফলে সূর্যকে একটি বলয়ে মতো দেখাবে। এর আগে ১৭২ বছর আগে এ বিরল সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হয় পৃথিবীর মানুষ।

 

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) এ সূর্যগ্রহণ দেখতে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া শহিদ মিনার এলাকায় ভীড় জমায় উৎসুক জনতা। সূর্যগ্রহণ কেন্দ্র করে বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ নারায়ণগঞ্জ জেলার উদ্যোগে শহিদ মিনারে সকাল ৯টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত  পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়।

 

বিবর্তনের শুরু থেকে পৃথিবী জুড়ে এই সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ নিয়ে রয়েছে হাজারো জনশ্রুতি, কল্পকাহিনি ও কুসংস্কার। আমাদের দেশে অনেকে বলেন, গর্ভাবস্থায় কোনো নারী সূর্য অথবা চন্দ্রগ্রহণের সময় যদি কিছু কাটাকাটি করেন তাহলে গর্ভের সন্তানের নাকি অঙ্গহানি হয়। আসলে এগুলোর সবই এক শতভাগ কুসংস্কার। প্রকৃতির এক অনন্য, অনবদ্য ও খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা হচ্ছে এই সূর্য অথবা চন্দ্রগ্রহণ। এখানে ভিত্তিহীন গল্পগাথা বা কুসংস্কারের কোনো জায়গা নেই।

 

পৃথিবী ও চাঁদ একটি নির্দিষ্ট নিয়মে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এর ফলে সূর্যের বিপরীতে পৃথিবী এবং চাঁদের অবস্থান প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তন হতে হতে চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী যখন একটি নির্দিষ্ট ফ্রেমে অবস্থান নেয় তখনই হয় সূর্য অথবা চন্দ্রগ্রহণ। 

ব্যাখ্যা দিতে গেলে বলা যায় আমার মুখে যদি কেউ টর্চের আলো ফেলে আমার ছায়া পড়বে আমার পেছনে। আবার আমার পিঠে আলো ফেললে ছায়া পড়বে আমার সামনে। এভাবে চাঁদ যখন সূর্য ও পৃথিবীর মাঝখানে, সূর্য তখন চাঁদের ওপর সরাসরি আলো ফেলে। এর ফলে চাঁদের ছায়া সোজা গিয়ে পড়ে পেছনে থাকা পৃথিবীর ওপর। পৃথিবীর যে অংশে চাঁদের এই বিশাল ছায়া পড়ে, দিনের বেলাতেই সেই অংশ অন্ধকার হয়ে যায়। আর ওখান থেকে সূর্যের দিকে তাকালে মনে হবে যে সূর্য অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে।

 

 

আসলে সূর্য অন্ধকারে মিলিয়ে যাচ্ছে না বা কোনো রাক্ষসও সূর্যকে গিলে ফেলছে না। প্রকৃতপক্ষে এখানে চাঁদ সূর্যের বরাবর আসায় সূর্য চাঁদের আড়ালে চলে যায়। চাঁদের অবস্থানের ওপর নির্ভর করে কখনো চাঁদ পুরোপুরি অথবা কখনো আংশিকভাবে সূর্যকে আড়াল করে। একেই আমরা যথাক্রমে পূর্ণ ও আংশিক সূর্যগ্রহণ বলি।

 

সূর্য কিন্তু চাঁদের চেয়ে ৪০০ গুণ বড়। তবু আমাদের চাঁদ পুরো সূর্যকে আড়াল করে দিতে পারে। এটা সম্ভব হওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে, সূর্য যেমন চাঁদ অপেক্ষা ৪০০ গুন বড় ঠিক তেমনিভাবে সূর্য পৃথিবী থেকে চাঁদের চেয়ে ৪০০ গুণ দূরে অবস্থিত। এ কারণে পৃথিবী থেকে চাঁদ ও সূর্যের আকার আমাদের কাছে সমান মনে হয়। সূর্যগ্রহণের সময় সূর্য থেকে মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণ অতিবেগুনি রশ্মি ছড়ায়। তাই এই সময় খালি চোখে সূর্যের দিকে তাকালে চোখের ক্ষতি হওয়াটা খুবই স্বাভাবিক।