রূপগঞ্জে করোনা উপসর্গ নিয়ে ৮ জনের মৃত্যু, বাড়ছে আতঙ্ক
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১১:৫২ এএম, ১১ এপ্রিল ২০২০ শনিবার
ডেস্ক রিপোর্ট : দেশে মহামারী করোনা ভাইরাস শনাক্তের পর গত ২৮ মার্চ থেকে আজ (শনিবার) অবধি রূপগঞ্জ উপজেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে মোট ৮ নারী পুরুষ মারা গেছেন। মাত্র একজনের দাফন নিয়মের মাঝে হলেও অন্য ৭ জনের দাফন হয়েছে স্বাভাবিক নিয়মে। মৃত পরিবারগুলোতে নেই বাড়তি সতর্কতা। দায়িত্বশীল মহল অনেকটা আড়ালে থাকছেন উপসর্গকে কেন্দ্র করে মৃত্যুর ঘটনায়। এ কারনে রূপগঞ্জে করোনা ভাইসারে মহামারীর আশংকা তৈরী হয়েছে।
তথ্যানুসারে জানা যায়, গত ২৮ মার্চ করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভার চরপাড়া এলাকার সাহাজউদ্দিন দেওয়ানের ছেলে ইতালী ফেরত প্রবাসী মোতালেব দেওয়ান (৪৮) মারা যান। তিনি শ্বাসকষ্ট ও জ্বর ঠান্ডায় আক্রান্ত ছিলেন। পরিবারের সদস্যরা তাকে কিডনী রোগে আক্রান্ত দাবি করে সেদিনই দাফন সম্পন্ন করে ফেলে। ৩০ মার্চ রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালে মারা যান উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পূর্নবাসন কেন্দ্রের ৮ নং ওয়ার্ডের মৃত মজিবর রহমান পেদার ছেলে হাবিবুর রহমান পেদা (৫৫)।
তাকে আঞ্জুমানের লোকজন আক্রান্ত নিয়মে সাধারনজনদের অনুপস্থিতিতে দাফন করেন। ৭ এপ্রিল দাউদপুর ইউনিয়নের পুটিনা দক্ষিপাড়া এলাকার সালমান (৪০) একই উপসর্গ নিয়ে মারা যান। তিনি নবমুসলিম ছিলেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানায়, তিনি চাঁদপুর পুরানবাজার এলাকার চিত্তরঞ্জনের ছেলে। তার সাবেক নাম দিপক চন্দ্র দাস। সে ১৫ বছর যাবত দাউদপুরে বসবাস করতেন। তাকেও স্বাভাবিক নিয়মে দাফন করা হয়।
৮ মার্চ কাঞ্চন পৌরসভার আফরের টেক এলাকার আবদুল্লাহর স্ত্রী আছমা (২২)প্রচন্ড জ্বর ও শ্বাসজণিত কষ্ট নিয়ে হাসপাতালে যাবার পথে মারা যান। পরে পরিবারের লোকজন মৃতদেহ ফিরিয়ে এনে স্বাভাবিক নিয়মেই দাফন করেন। একই দিন কাঞ্চন মায়ারবাদি বাইপাস সড়কের পাশে শ্বাসপ্রশ্বাস বেড়ে মারা যায় ভোলাব ইউনিয়নের আলাপুর এলাকার মোহাম্মদ আলীর মাসনিক প্রতিবন্ধী মেয়ে গোলনাহারের। ৯ মার্চ করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা যান রূপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আলমপুরা গ্রামের আমীর আলীর স্ত্রী আলাতুন নেছা (৪৯)। শ্বাস কষ্ট ও ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি । তবে নিহতের ছেলে আলআমিনের দাবি তার মা অতিরিক্ত ধুমপান করতো বলে শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হয়। তাকেও পরিবারের লোকজন একই নিয়মে দাফন করে।
গতকাল (১০) এপ্রিল বিকেলে কাঞ্চন পৌরসভার কালাদী বড়বাড়ি গ্রামের আব্দুল মজিদের ছেলে ওসমান মিয়া (৪৬) জ্বর ও শ্বাসকষ্ট ও ঠান্ডাজনিত রোগে মৃত্যুবরণ করেন। তাকেও পরিবারের লোকজন স্বাভাবিক নিয়মে দাফন করেছে। সর্বশেষ আজ (১১ এপ্রিল) শনিবার ভোররাতে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট জ্বর ও ঠান্ডা কাশিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আব্দুল জলিল প্রধান (৫৫) তিনি তারাবো পৌরসভার রূপসী প্রধানবাড়ি এলাকার মৃত কুদরত আলী প্রধানের ছেলে। পরিবারের লোকজন মৃত্যুর ৪ ঘন্টার মধ্যে তড়িগড়ি লাশ দাফন করে ফেলে।
৮ জন নারী পুরুষের করোনার মৃত্যুর সংবাদ স্থাণীয় গণমাধ্যেমকর্মী অথবা অন্য মাধ্যেমে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন জানতে পারলেও তারা গ্রহণ করেনি কোন পদক্ষেপ। নূন্যতম পরিবারের সদস্যদের নেয়া হয়নি আইসোলেশনের অধীনে। কিংবা মৃতজনের নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয়নি আইইসিডিআরএ। এ কারনে জানাও যাচ্ছে না মৃত ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত ছিলেন কি না। অপরদিকে পরিবারগুলোর খোলামেলা চলাফেরার কারনে বাড়ছে আক্রান্তের ঝুকি। এসব মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জ উপজেলা জুড়ে মহামারীর আশংকাও করছেন অনেকে।
এ ব্যাপারে রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাঈদ আল মামুন জানান, সবগুলো মৃত্যুর সংবাদ আমরা জানি। তবে করোনার উপসর্গ সবার ছিল না। কেউ কেউ সাধারন ফ্লুতে বা অন্য রোগেও আক্রান্ত ছিলেন। আর নমুনা সংগ্রহের ব্যাপারে আমরা আইডিসিআরের সাথে কথা বলে সাড়া পাইনি বিধায় লোকাল অথরিটির অনুমতিতে তাদের দাফনের ব্যবস্থা করেছি। তবে মৃত পরিবারগুলোর সদস্যদের স্যাম্পল কালেকশন করা হচ্ছে অথবা হয়েছে। তাদের রিপোর্ট এখনো হাতে আসেনি। রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে মৃত ব্যক্তিগণ অথবা তাদের পরিবারের কোন সদস্য করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কিনা।
(সূত্র : মানবজমিন)