শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৮ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সত্যজিৎ রায়ের জন্মদিন আজ

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৩:৩৩ পিএম, ২ মে ২০২০ শনিবার

ডেস্ক রিপোর্ট: গুপী গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘গুপী বাঘা ফিরে এলো’, ‘অশনি সংকেত’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ও ‘ফটিকচাঁদ’-কালজয়ী এ বাংলা চলচ্চিত্রগুলোর প্রসঙ্গ এলেই যে নামটি চলে আসে তিনি হচ্ছেন এগুলোর নির্মাতা সত্যজিৎ রায়। তিনি এমন এক উজ্বল নক্ষত্র যিনি বাংলা চলচ্চিত্র তো বটেই এমনকি পুরো উপমহাদেশের চলচ্চিত্রকে এক অভিন্ন মাত্রা দিয়েছিলেন। কিংবদন্তি এই চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্মদিন আজ। ১৯২১ সালের ২রা মে তিনি কলকাতার বিখ্যাত রায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫২ সালে সত্যজিৎ রায় বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পথের পাঁচালি’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে ছবিটির নির্মাণ সম্পন্ন হয় এবং সে বছরই এটি মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর ‘পথের পাঁচালি’ ব্যাপক দর্শকনন্দিত হয়। এমনকি ভারতবর্ষের বাইরেও ছবিটি দারুণ জনপ্রিয়তা পায়।


‘পথের পাঁচালী’ মোট ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট’ পুরস্কার। সত্যজিৎ রায় পরবর্তীতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’ নামে আরো দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এ তিনটি চলচ্চিত্র একত্রে ‘অপু ট্রিলজি’ হিসেবেই পরিচিত।


এছাড়াও সত্যজিৎ রায় ‘পরশপাথর’ নামের হাস্যরসাত্মক ছবি, জমিদারি প্রথার অবক্ষয় নিয়ে নির্মিত ‘জলসাঘর’, বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে ‘দেবী’, ‘তিন কন্যা’ এবং ‘অভিযান’ ও ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ নামে রঙিন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ১৯৬৪ সালে সত্যজিৎ নির্মাণ করেন ‘চারুলতা’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘নষ্টনীড়’ অবলম্বনে নির্মিত এ ছবিটিতে উনিশ শতকের এক নিঃসঙ্গ বাঙালি বধূ চারু ও ঠাকুরপো অমলের প্রতি তার অনুভূতির কাহিনী বাস্তব জীবনের নিরিখে নির্মাণ করা হয়েছে। ‘নায়ক’ (১৯৬৬), ‘প্রতিদ্বন্ধী’ (১৯৭০), ‘সীমাবদ্ধ’ (১৯৭১) ও ‘জন অরণ্য’ (১৯৭৫) ছবিও তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে অগ্রগণ্য। বাংলা চলচ্চিত্রের বাইরে সত্যজিৎ রায় ১৯৭৭ সালে ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ নামের হিন্দি ও উর্দু সংলাপ নির্ভর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এটিই ছিল বাংলা ভাষার বাইরে অন্য ভাষায় নির্মিত এ নির্মাতার প্রথম চলচ্চিত্র। পরবর্তীতে সত্যজিৎ প্রেমচাঁদেও গল্পের ওপর ভিত্তি করে ‘সদগতি’ নামের হিন্দি ভাষায় এক ঘণ্টার একটি ছবি বানিয়েছিলেন। সত্যজিৎ রায়ের বাবা সুকুমার রায় এবং পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী দুইজনেই বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি থানার মসূয়া গ্রামে।


সমৃদ্ধশালী রায় পরিবারে জন্ম হলেও সত্যজিৎ রায়ের শৈশব  মোটেও সুখকর ছিল না। মাত্র তিন বছর বয়সে তার পিতৃৃবিয়োগ ঘটে। মা সুপ্রভা দেবী বহু কষ্টে তাকে বড় করেন। ১৯৪০ সালে মায়ের ইচ্ছায় তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হলেও লেখাপড়া শেষ না করে ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপনী সংস্থা ডি জে কিমারে মাত্র ৮০ টাকা বেতনে ‘জুনিয়র ভিজুঢালাইজার’ পদে চাকরি শুরু করেন। চিত্রসজ্জা বা ভিজুয়াল ডিজাইন সত্যজিৎ রায়ের পছন্দের বিষয় হওয়ায় তিনি সুনামের সঙ্গে  সেখানে কাজ করেন। ১৯৪৭ সালে সত্যজিৎ রায় ও চিদানন্দ দাসগুপ্ত কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ সালে সত্যজিৎ রায় তার দীর্ঘদিনের বান্ধবী বিজয়া দাসকে বিয়ে করেন। সত্যজিৎ-বিজয়া দম্পতির ঘরে ছেলে সন্দীপ রায়ের জন্ম হয়, যিনি নিজেও একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালক।


সত্যজিৎ রায় ১৯৮৩ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর তার কাজের গতি একেবারে কমে আসে। স্বাস্থ্যের অবনতির ফলে ছেলে সন্দীপ রায়ের সহায়তায় ১৯৮৪ সালে সত্যজিৎ ‘ঘরে বাইরে’ ছবিটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি তার বাবা সুকুমার রায়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। তার শেষ তিনটি ছবি প্রথম দিকের ছবিগুলোর চেয়ে বেশি সংলাপ নির্ভর ছিল। ছবিগুলো হচ্ছে ‘গণশত্রু’ (১৯৮৯), ‘শাখা প্রশাখা(১৯৯০) ও ‘আগন্তুক’ (১৯৯১)। সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ‘ফেলুদা’ কিংবা ‘প্রোফেসর শঙ্কু’ এখনো সমান জনপ্রিয়। ১৯৯২ সালের ২৩শে এপ্রিল হৃদযন্ত্রের জটিলতায় বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী ব্যাপক সৃজনশীল এই চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রয়াত হন। প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় তিনি ১৩ তম স্থান লাভ করেছিলেন। (সুত্র: মানবজমিন)