শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মমতার চাপে আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদকের পদত্যাগ

ডেস্ক রিপোর্ট

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:৩৩ পিএম, ১ জুন ২০২০ সোমবার

কলকাতাভিত্তিক ভারতের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার সম্পাদক অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের ঘটনার আগে তাকে কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় ডেকে নিয়ে প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। খবর ডয়েচেভেলে।


সূত্রের বরাতে ডয়েচেভেলের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত এপ্রিলে বাংগুর হাসপাতাল নিয়ে একটি সংবাদকে কেন্দ্র করে করা এফআইআরের ভিত্তিতে তাকে ডাকা হয়েছিল থানায়। বর্তমানে বার্তা সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা ঈশানী দত্ত রায় পত্রিকাটির নতুন সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।


পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এর আগে টুইট করে জানান, ‘আমি স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে জানতে চেয়েছি, কেন সম্পাদক অনিবার্ণকে পুলিশ নোটিশ পাঠিয়েছে? সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে কোনো আলোচনা চলতে পারে না। এটা গণতন্ত্রের মেরুদণ্ড এবং সংবিধান স্বীকৃত।’


তার ওই টুইটের পর জানা যায় ওই সম্পাদককে ছয় ঘণ্টা ধরে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে পুলিশ সূত্র জানাচ্ছে অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায় একটা চিঠি দিয়ে পুলিশকে জানান তিনি প্রবীণ নাগরিক। করোনার সময়ে তাকে প্রকাশ্য স্থানে যেতে চিকিৎসকরা মানা করে দিয়েছেন।


আনন্দবাজারের মতো সর্বাধিক প্রচারিত বাংলা দৈনিকের সম্পাদককে একটা খবরের ভিত্তিতে থানায় ডেকে পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তা অভিযোগ করার ৫০ দিন পর। আরও প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি করোনা ও আম্ফান পরবর্তী সময়ে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে?


তবে আনন্দবাজার পত্রিকার ঘটনাটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সংবাদ নিয়ে এরকম আরেকটি অভিযোগ উঠেছিল কলকাতার একটি বাংলা নিউজ চ্যানেলের বিরুদ্ধেও। সেখানে অবশ্য সংবাদ বিভাগের প্রধান ও সাংবাদিককে থানায় যেতে হয়েছে এবং জেরার মুখে পড়তে হয়েছে।


সেই সঙ্গে আরও অভিযোগ উঠেছে, প্রকাশিত খবর শাসকের পছন্দ না হলেই কাগজে বা চ্যানেলে রাজ্য সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয়া হয়। করোনা মহামারি আগে সেখানকার একটি প্রথম সারির বাংলা সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপন কয়েক মাস বন্ধ ছিল।


কলকাতার প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডয়চেভেলেকে বলেছেন, ‘সরকারের অপছন্দ হলে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে এই চাপ সৃষ্টি করার প্রবণতা আগেও ছিল। আগে আমরা দেখেছি, বামেদের কঠোর সমালোচক বা বিরোধী কাগজগুলো বিজ্ঞাপন অনেক কম পেতো, কিন্তু একেবারে পেতো না এমন নয়।’


তিনি বলেন, এখন দেখছি, সরকারের বিরোধিতা করলে বিজ্ঞাপন পুরো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরেও এটা হচ্ছে বলে শুনেছি। বিজ্ঞাপন তো জনগণের পয়সা থেকে দেয়া হয়। সেখানে একটা নীতি থাকা দরকার। প্রচারের সংখ্যার মতো কিছু মাপদণ্ডের ভিত্তিতে তা ঠিক করা উচিত।’
শুভাশিস মৈত্রের প্রশ্ন, ''কেন বিজ্ঞাপন শাসক দলের খেয়ালখুশির ওপর নির্ভর করবে? একটা নিয়ম থাক। তার ভিত্তিতে কেন্দ্র ও সব রাজ্য সরকারগুলি বিজ্ঞাপন দিক। আর এই যে থানায় ডেকে পাঠানো, সেটাও সংবাজদপত্রকে শাসন করার রকমফের।''


সিপিএম নেতা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘শাসকের মধ্যে স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা বাড়লে প্রথমে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হয়। তারপর গণমাধ্যমের।সরকার চায়, শুধু তাদের কথাই মানুষের কাছে পৌঁছাক, বিরোধীদের কথা নয়। এতে কখনোই শেষরক্ষা হয় না।’ (সূত্র: জাগোনিউজ২৪.কম)