শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নতুন লেখকের জন্ম না হলে বাংলা সাহিত্য বাঁচবেনা

লতিফ রানা :

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৬:৫০ পিএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ মঙ্গলবার

বাংলাসাহিত্যে নতুন লেখকের জন্ম না হলে এই সাহিত্যকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবেনা বলে মনে করেন সাহিত্যিক সাদত আল মাহমুদ লেখক লিজা কামরুন্নাহার।

 

যুগের চিন্তা’র আয়োজনে মোশতাক আহমেদ শাওনের সঞ্চালনায় রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত ফেসবুক লাইভ টক শো ‘আলাপন’ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তারা এই মতামত ব্যক্ত করেন। এসময় তারা বই প্রকাশের সংখ্যার উপর জোর না দিয়ে বইয়ের লেখার মানের উপর জোর দেয়ার মত প্রকাশ করেন।

 

বই পড়া থেকেই লেখার উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে কথাসাহিত্যিক সাদত আল মাহমুদ বলেন, যখন আমরা কোন কিছু লিখতে চেষ্টা করি তখন তা আমাদের মস্তিস্কে একটা কল্পনার সৃষ্টি করে। তখন আমাদের মনে হয় আমরা সেই পরিবেশেই চলে গেছি।

 

তিনি বলেন, সাহিত্যের অঙ্গনে নবীণ লেখকদের প্রচুর পরিমানে আসতে হবে। শুধু মাত্র ফেসবুকে নির্ভরশীল না হওয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যারা লেখা লেখির সাথে জড়িত হতে চান তারা সাহিত্যের বিভিন্ন আলোচনা করেন, পাড়া মহল্লায় সহিত্য আসর করেন, একজনের ভুল আরেকজন ধরিয়ে দেন, বই গিফ্ট করেন, সাহিত্য আড্ডা করেন, পাঠাগার আন্দোলন করেন। এই মাধ্যমগুলো থাকতে হবে। নাহলে আমাদের সমাজে এই লেখার কোন কাজে আসবেনা। তাই ফেসবুক ছাড়াও এইসব মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। তাহলে জাতি কিছু পাবে।

 

এসময় তিনি নিজের নামের প্রচারের দিকে জোর না দিয়ে তার লেখার প্রচারের দিকে জোর দিতে বলেন। এতে করে বইটা প্রচার হলে লেখকের নাম এমনিতেই প্রচার হবে। তিনি বলেন, অনেকে বলে আমিতো পঞ্চাশটি বই লিখেছি কেউ বলে আমিতো একশত বই লিখেছি। আসলে কতটি বই লিখলেন তা বড় কথা নয়। আপনি যদি একটা বই লেখার মতো লিখেন তাহলে সেই একটি বই আপনাকে অনেক দিন সাহিত্যের মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে পারবে।

 

তিনি বলেন, আমাদের দেশে মান সম্মত লেখকদের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য তিনটি উপাদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। লেখক, প্রকাশক এবং পাঠক। এই তিনটি মাধ্যমের সমন্বয় থাকলে মান সম্মত লেখকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। নতুন লেখকদের লেখার মানের দিকে নজর দিতে হবে, বই প্রকাশ ও বিক্রী’র দায়িত্ব নিতে হবে প্রকাশকদের, তেমনি পাঠকদেরও নতুন লেখকের বই কেনার মন মানসিকতা থাকতে হবে।

 

শুধু পুরানো লেখকদের বই কিনবেন আর নতুনদের বইয়ে অনীহা প্রকাশ করবেন তাহলে আমাদের বাংলাদেশের সাহিত্যের খুবই ক্ষতিগ্রস্থ হবে। নতুন লেখকের লেখাতেও এমন কিছু থাকতে পারে যেটা গোটা সমাজটাকেই পরিবর্তন করে দিতে পারে। এসময় তিনি তার নিজের লেখা কয়েকটি বইয়ের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেন।

 

লেখক লিজা কামরুন্নাহার বলেন, আমি লিখবো এমনটা ভেবে কখনো লেখা শুরু করেনি। যেকোন লেখার পেছনে প্রথম যে জিনিষটা কাজ করে তা হলো লেখার খোরাক। আমি স্কুল কলেজে যখন পড়তাম তখন অনেক বেশী বই পড়তাম। পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন লেখকের বই পড়তাম। আমার লেখালেখির অনুপ্রেরণা আমার দুই ছেলে এবং আমার মা।

 

তাছাড়া ফেসবুকে অনেকে লিখতো আমি তা পড়তাম এরপরই ধীরে ধীরে আমি দুই চার লাইন করে লেখা শুরু করি। আমার শুভাকাঙ্খিরাও আমাকে উৎসাহ দিতে শুরু করে। তিনি বলেন, সৃজনশীল বইয়ের কোন বিকল্প নেই। তাই বর্তমান প্রজন্মকে শুধু পাঠ্য বইয়ে আবদ্ধ না রেখে তাদের কবিতা গল্পসহ বিভিন্ন জ্ঞানভিত্তিক বইয়ের যোগান দিতে হবে তাদের পরিবার থেকে।

 

এসব থেকে তারা কিছুটা হলেও ম্যাসেজ পাবে। আর্থাৎ আমাদের সন্তানদের একটা নির্দিষ্ট বিষয়ে জ্ঞান অর্জন না করে সারা পৃথিবী সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। আলাপনে লিজা তার লেখা বেশ কয়েকটি কবিতা আবৃত্তি ও কয়েকটি বইয়ের বিষয়বস্তু আলোচনা করেন।