মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলাম (ভিডিও)
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:৪৩ পিএম, ৩ মার্চ ২০২১ বুধবার
বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান মাত্র ১৪ বছর বয়সেই অংশগ্রহণ করেছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। ভারত থেকে ট্রেনিং নিয়ে এসে বাংলাদেশর নোয়াখালীসহ বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলের এই মুক্তিযোদ্ধা। এরপর তার চোখের সামনেই বাংলাদেশ থেকে বিদায় হয়েছিলো পাক-বাহিনীর সেনারা। স্বাধীন হয়েছিল সোনার বাংলা।
বুধবার (৩ মার্চ) সন্ধ্যায় যুগের চিন্তার বিশেষ আয়োজন ফেসবুক লাইভ টকশো “হ্যালো নারায়ণগঞ্জ” অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমানের স্বাক্ষাৎকার নিয়েছে সিনিয়র সাংবাদিক ইউসুফ আলী এটম।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে তিনি মিজানুর রহমান বলেন, আমি ৭ই মার্চে প্রথমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শুনতে যাই রেসকোর্স ময়দানে। সেখানে বঙ্গবন্ধুর ভাষণে শুনেই মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নেই। তখন আমার বয়স মাত্র ১৪ বছর। এরপর আমাদের এলাকার এক মামাসহ আমরা কয়েকজন চিন্তা করি যে, কিভাবে ভারতে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং’র জন্য যাওয়া যায়! তখন আমরা একটা ম্যাপ সংগ্রহ করে চাঁদপুর হয়ে বর্ডার দিয়ে ভারতে ঢুকে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা প্রথমে অবস্থান নেই বেলুনিয়া নামক একটি ক্যাম্পে। এবং সেই ক্যাম্প থেকে আমিসহ তিনজন আগরতলা চলে যাই। আগরতলায় আমার সঙ্গে বর্তমান বাংলাদেশের বহু বিশিষ্ট ব্যাক্তিদের সাথে পরিচয় হয়। কিন্তু আগরতলায় বেশিদিন আমার থাকা হয়নি। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের বেশকিছু তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেনিং’র জন্য আগলতলা থেকে প্লেনে করে আসামের তেজপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তেজপুরে ভারী অস্ত্রের সাথে ইন্ডিয়ান আর্মিরা আমাদের প্রায় আড়াই মাস ট্রেনিং করিয়েছে। এবং একপর্যায়ে তাঁরা আমাদের বলে যে, এখন তোমাদের বাংলাদেশ যেতে হবে। তখন আমরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিলাম! কারণ অনেকদিন ভারতে থাকার পরে, আমরা নিজে মাতৃভূমিতে যাওয়ার সংবাদ পেয়েছিলাম।
তিনি বলেন, আমরা ভারত থেকে বাংলাদেশ আসার পথে আমরা প্রথম ভৈরব টিলার ইন্ডিয়ান বর্ডারের সামনে পাকিস্তানি আর্মিদের আক্রমণের শিকার হই। সেখানে আমরা মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছিলাম! সেদিন ভারতীয় আর্মিরাও আমাদের সাপোর্ট দেয়নি। সেখানে আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধাই শহিদ হয়েছিলো। তাঁদের লাশ আমারা সেখান থেকে নিয়ে আসতে পারি নাই। তাই তাঁদের সেখানেই কবর দেয়া হয়েছিলো।
তিনি বলেন, এরপর আমরা সেখান থেকে এসে নোয়াখালীর বজরা এলাকায় অবস্থান নেই। নোয়াখালীতে এতে আমাদের বাংলাদেশের আরো একটি মুক্তিযোদ্ধা দলের সাথে দেখা হয়। তাঁরা আমাদের বললেন, ভাই আমরা অনেক দিন ধরে যুদ্ধ করছি কিন্তু পাক-আর্মিদের সাথে তো পেরে উঠছিনা! তখন আমরা তাঁদের যায়গাতে গিয়ে পাকিস্তানি আর্মিদের সাথে যুদ্ধ শুরু করলাম। সেখানে আমাদের কাছে দুইটা এল.এম.জি ছিলো যা দিয়েই আমরা ওদের সাথে যুদ্ধ করেছিলাম। সেখানে যেটা দেখেছি যে, নোয়াখালির লোকজন অনেক হেল্পফুল। তাঁরা আমাদের খাবারসহ বিভিন্ন দিক দিয়ে সাহায্য করত। আর নোয়াখালিতেই আমাদের কাছে প্রায় ৬৫ জন পাক আর্মি আত্মসমর্পণ করে। এরমধ্যে রাজাকারও রয়েছে।