‘করোনায় বেতন নাই, একবেলা খাওন খাওয়াই’
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১০:৩৩ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার
একবছর পূর্বে রমজান মাস জুড়ে ব্যবসায়ীদের আয়রোজগারে ধ্বস নামিয়েছিলো করোনা। ক্ষতি পুষিয়ে না উঠতেই আবারও সেই করোনার ছোবল। দ্বিতীয় ওয়েভে নতুন করে লকডাউন পরেছে রমজানের প্রথমদিন থেকেই। অন্যান্য সকল ব্যবসায়ীদের মত মৌসুমী ইফতার বিক্রেতাদেরও মাথায় হাত। তবুও ক্রেতার আসায় পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা। মাছি তাড়ানো ছাড়া আর কোন কাজই খুঁজে পাচ্ছেন না তারা।
রমজানে নারায়ণগঞ্জে বিকেলের চিত্র ছিল একেবারেই অচেনা। যেখানে প্রতিবছর মানুষের ইফতার আয়োজনের ব্যস্ততা আর বিক্রেতাদের দম ফেলবার সুযোগ মিলতো না। এবার সেখানে অলস সময় কাটাচ্ছেন সকলেই। ফাঁকা সড়কে নেই মানুষের চিরচেনা ব্যস্ততা। অথচ বাঙালির কাছে রমজানের ইফতার মানেই অন্যরকম উৎসব।
দোকানে ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, জিলাপি, বুন্দিয়া, চপ, বেগুনি, হালিম, হরেক রকমের মিষ্টান্নসহ আরও কত পদের খাবার থাকে ইফতার আয়োজনে। শহর ও শহরতলীর সকল অলি-গলিতে মৌসুমী ব্যবসায়ী আর রেস্তোরার সামনে বসে বাহারি ইফতারের আয়োজন। এবারও রেস্তোরা ব্যবসায়ীরা সেই আয়োজন নিয়ে বসেছেন। কিন্তু মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সাহস দেখাননি। কারন ক্রেতাশুন্য পুরো শহরজুড়ে।
বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শহরের চাষাঢ়া বঙ্গবন্ধু সড়ক ঘুরে দেখা মেলে ইফতার বাজারের এমন চিত্র। ইফতারের পসরা সাজিয়ে বসলেও ক্রেতাদের দেখা নেই। মিষ্টান্নের লোভে আগত মাছি তাড়ানো ছাড়া আর কোন কাজ নেই বিক্রেতাদের। চেয়ার পেতে বসে আছেন ক্রেতার সন্ধানে। কথা বলতে এগিয়ে গেলেই ভাবেন এই বুঝি ক্রেতা এলো। তবে প্রতিবেদকের প্রশ্ন শুনে একরাশ হতাশা প্রকাশ করেন।
শহরের মার্ক টাওয়ারের পাশে অবস্থিত একটি রেস্তোরায় আলাপকালে দোকানি বলেন, ‘ভাই আমাগো ব্যবসা শ্যাষ। গতবারও এমন করুন দশা হইসে, এবারও একই অবস্থা। সব কিছু বানাইয়া বইসা আছি কিন্তু কিনার মানুষ নাই। মার্কেট সব বন্ধ, দোকান থেকে কিনবো কে? সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মাত্র ৩০০ টাকার ইফতার বেচছি। ইফতারের আগ পর্যন্ত ১২০০ টাকা বেচাকিনা হয় নাকি সন্দেহ। অথচ অন্যান্য বছর ৫/৭ হাজার টাকা ডেইলি লাভ হইত’।
করোনার প্রাদুর্ভাবে দোকান কর্মচারীদের বেতন কিভাবে দেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, ‘করোনায় কোন বেতন নাই। বেচাকিনা না থাকলে বেতন দিব কইথিকা? সবাই এখানে বিনা পয়সায় খাটে। বিনিময়ে এক/দুই বেলা খাইতে পারে। বাসায় কারও মন বসে না। তাই সবাই একসাথে এখানে কাজ করে। আমাগো ব্যবসা একদম শ্যাষ হইয়া যাইতাছে’।
মূলত লকডাউনের কারনে অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ থাকায় জমেনি রোজার এই ইফতার উৎসব। এছাড়া মসজিদে ২০ জনের বেশী জমায়েত হবার সুযোগ না থাকায় মসজিদে মসজিদে যে ইফতার আয়োজন হতো এবার তাও হচ্ছে না। ফলে ইফতার বিক্রেতাদের অসহায় ভাবে ক্রেতার অপেক্ষায় থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার নেই।