পরিবহন সংকটে শ্রমিকরা
ইমরান আহমেদ
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১১:০৩ পিএম, ১৬ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার
করোনার দ্বিতীয় ধাপে সংক্রমণরোধে কঠোর বিধিনিষেধে বেসরকারি সব ধরণের প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জরুরী সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানসহ পরিবহন, ব্যাংক ও পোশাকশিল্প কারখানা চালু রয়েছে। এসব কারখানায় শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানার নিজস্ব পরিবহনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথাও বলা হয়েছে। তবে কর্মস্থলে পৌঁছাতে তাদের জন্য কোন পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়নি। যে কারণে অনেক শ্রমিককে পায়ে হেঁটে যেতে হচ্ছে কারখানায়। আবার বিকল্প পরিবহনে কারখানায় পৌঁছাতে অনেককে গুনতে হচ্ছে কয়েকগুন বেশী ভাড়া।
নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জে ছোট বড় মিলিয়ে মোট প্রায় ১ হাজার ৬শত ৪৫টি তৈরি পোশাক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় কাজ করছেন প্রায় ৫লক্ষ শ্রমিক। সর্বাত্মক লকডাউনে সরকারের ১৩ দফা নির্দেশনা অনুযায়ী এসব কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে কতৃপক্ষ। করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় শ্রমিকদের মাস্ক পরা, শরীর জীবাণুমুক্তকরণ, হাত ধোয়াসহ প্রত্যেক শ্রমিকের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে কর্মস্থলে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। তবে শ্রমিকদের স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় আনা নেয়ার বিষয়টি রয়েছে উপেক্ষিত। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রিকশা, অটোরিকশায় বেশী ভাড়া পরিশোধের মাধ্যমে ও পায়ে হেঁটে কারখানায় আসছেন শ্রমিকেরা।
বিসিক ১নং গেট এলাকার মমতাজ ফ্যাশন ওয়্যার লিমিটেড কারখানার নারী শ্রমিক তানিয়া আক্তার বলেন, করোনা মোকাবিলায় শরীরের তাপমাত্রা মাপা, হাত ধোয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও সামাজিক দূরত্বের জন্য মালিকপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমরা জীবন ও জীবিকার জন্য কারখানায় কাজ করতে চাই।
নারী শ্রমিক জুথি আক্তার বলেন, আমরা তো গার্মেন্টস শ্রমিক। এক কারখানায় প্রায় দুই থেকে তিন হাজার মানুষ কাজ করি। সবাই একেক জায়গায় ভাড়া থাকি। কারখানা ছুটি হইলে কোন গাড়ি পাই না। হাইট্টা হাইট্টা বাসায় যেতে হয়। আবার কোন সময় গাড়ী পেলেও দ্বিগুন ভাড়া দিতে হয়। কোম্পানীর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কোন পরিবহনের ব্যবস্থা করে নাই।
বিসিক ডায়মন্ড নিট ওয়্যার লি. পোশাক কারখানার ইমাম হোসেন বলেন, লকডাউন হলে আমাদের অফিস যেতে সমস্যা হয়। গাড়ি পাওয়া যায় না, রিকশাভাড়াও ডাবল হয়ে যায়। আমাদের খরচ বেড়ে যায় কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষ কিংবা সরকারতো এই টাকা আমাদের দেবে না।
এ বিষয়ে বিকেএমইএ’র সহসভাপতি এমএ হাতেম বলেন, কোভিডের শুরু থেকেই স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য আমরা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের যে নির্দেশনা দিয়েছিলাম তা আরো কঠোরভাবে পরিপালনের পরামর্শ ও অনুরোধ করেছি। পরিবহনের বিষয়ে আসলে কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের শ্রমিকরা গণপরিবহন ব্যবহার করে না। কারণ, তারা ১০-১৫ মিনিটের দুরত্বে ফেক্টরীগুলোর আশেপাশেই বসবাস করে থাকে। সুতরাং তারা পায়ে হেঁটেই চলে আসে।
তিনি আরো বলেন, একটু দূরে যারা থাকে তারা সাইকেল ব্যবহার করে। আর স্টাফরা যারা ঢাকা বা গাজীপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে আসে তাদের ফেক্টরীর নিজস্ব যাতায়াত ব্যবস্থা আছে। কারো নিজের মিনিবাস মাক্রোবাস বা গাড়ী আছে। সুতরাং গণপরিবহনের প্রয়োজন আমাদের স্টাফ বা শ্রমিকের নেই।