মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাধারণ মানুষের পাশে নেই সিটি কাউন্সিলররা

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৬:০১ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০২১ শনিবার

বাংলাদেশে প্রথম করোনা প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর লকডাউন ও মানুষের সেবায় নিজেদের নিয়োজিত করে প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা। করোনার এপিসেন্টার হিসেবে নারায়ণগঞ্জ যখন চিহ্নিত হয়েছিল, তখন জনপ্রতিনিধিদের মানবসেবার বিষয়টিও দেশব্যাপী আলোচনায় এসেছিল।

 

তবে করোনার দ্বিতীয় ওয়েভের কারণে দেয়া লকডাউন এবং সর্বাত্মক লকডাউনে সেভাবে মানবসেবায় নামেননি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলররা। একমাত্র নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের নেতৃত্বে গঠিত টিম খোরশেদই তাদের সেবা অব্যাহত রেখেছে।  


সূত্র জানিয়েছে, করোনার প্রথম ওয়েভে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ, প্যানেল মেয়র-১ আফসানা আফরোজ বিভা, কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, শওকত হাশেম শকু, শফিউদ্দিন প্রধান, নাজমুল আলম সজল, রুহুল আমিন, ওমর ফারুক, কবির হোসেন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর আয়শা আক্তার দিনা মানবসেবায়  প্রথমসারির কাউন্সিলরদের মধ্যে নিজেদের নিবেদিত করেছিলেন।

 

সিটি করপোরেশন প্রদত্ত সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে তো বটেই নিজ উদ্যোগেও মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। রাত-বিরাতে নানামুখী সেবা নিয়ে মানুষের জন্য কাজ করে গেছেন। যার কারণে সিটি করপোরেশন এলাকায় করোনার রোগীর মারাত্মক সংক্রমন বেশি হওয়ার পরও জনপ্রতিনিধিদের এই নিবেদিত কাজ মানুষের মনে সাহস যুগিয়েছিলো। তবে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এবার করোনার দ্বিতীয় ওয়েভে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর থেকে নিজেদের কিছুটা দূরে রেখেছেন কাউন্সিলররা। 


নাসিক ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু মনে করেন, গতবার লকডাউনে মানুষের অবস্থা যে পরিমাণ খারাপ হয়েছিলো, এবার তারচেয়ে কিছুটা ভালো। যদিও এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোন ধরণের সহযোগিতা কিংবা ত্রাণের বিষয় আসেনি। গতবার আমি বলেছিলাম, আমার ওয়ার্ডে কেউ না খেয়ে থাকবেনা। এখনো সেই কথাই বলি। লকডাউন এবং সর্বাত্মক লকডাউনেও আমার ব্যক্তিগত অবস্থান থেকে মানুষের জন্য কাজ করছি। বড় পরিসরেও প্রস্তুতি রয়েছে, অবস্থা যদি খারাপের দিকে যায় তবে সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবো।

 
কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবুর মতো প্রায় একই উত্তর নাসিক ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর ফারুকের। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে এখনো সহযোগিতার ব্যাপারে কোন দিক-নির্দেশনা দেয়া হয়নি। লকডাউনে সবচাইতে অসহায় অবস্থায় পড়েছেন নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের। গতবার আমি আমার ওয়ার্ডে ফোন কলের মাধ্যমে গোপনে এসব পরিবারকে সহযোগিতা করার একটি বিষয় চালু করেছিলাম, এবারও সেটি অব্যাহত আছে। কেউ কোন সমস্যায় পড়ে আমাকে জানালে অবশ্যই তাদের সহযোগিতা করা হবে। সিটি করপোরেশন থেকে যদি কোন সহযোগিতা করা হয় তবে সেক্ষেত্রেও স্বচ্ছভাবে পৌঁছে দেয়া হবে। আমার ব্যক্তিগত সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। 


এব্যাপারে ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শওকত হাশেমের স্ত্রী দীপা হাশেম যুগের চিন্তাকে জানান, আসলে গতবার রমজানের আগে লকডাউন পড়েছিল। ফলে কিছুটা প্রস্তুতি নিয়ে আমরা গোটা পরিবার মানুষের সেবায় নিয়োজিত হয়েছিলাম। রমজানের কারণে এবার কিছুটা শ্লথ কার্যক্রম। আশা করি দু’একদিনের মধ্যেই আরো অনেক মানুষকে সহযোগিতার হাত বাড়াতে পারবো।


তবে ভিন্ন যুক্তি নাসিক প্যানেল মেয়র-১আফসা আফরোজ বিভা’র। তিনি বলেন, ‘আসলে গতবার লকডাউনে আমরা মানুষের কাছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে দ্রুত পৌঁছাতে পেরেছিলাম। মানুষ ছিল আতঙ্কিত, কিন্তু এবার তেমনটি নেই। মানুষ অযথা লকডাউন অমান্য করছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে করোনায় আক্রান্ত লাশ দাফনেও কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সেটিই আমরা ফলো করছি। তবে এবার খাদ্যসামগ্রী কিংবা আর্থিক সহযোগিতার তেমন কোন নির্দেশনা আসেনি। গতবার আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেক মানুষকে সহযোগিতা করেছিলাম এবার এখনো করিনি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে মানুষকে সহযোগিতা করবো আশা করছি।’ 


সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর আয়েশা আক্তার দিনা বলেন, ‘গতবার আমিসহ আমার পুরোপরিবার মানুষের সহযোগিতায় দিনরাত কাজ করেছি। তবে আমার পরিবারে শোক চলছে। আমার ভাতিজাটা মারা গেছে। আমার স্বামীও করোনা পজিটিভ। সেকারণে পরিবারের অন্য সদস্যরাও আইসোলেশনে আছে। কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। আর কয়েকটি দিন গেলে আবারো মানুষকে সহযোগিতা করতে নামবো।’


এদিকে ১৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কবির হোসেন দাবি করেছেন, তাঁর ওয়ার্ডে একজন করোনা আক্রান্ত রোগী নেই। গতবার ১৬-১৭জন করোনা রোগীর কথা তিনি জানতে পেরেছিলেন ফলে তৎপরতা বেশি ছিল। এখন তিনি  যা করছেন তা হলো, ওয়ার্ডের বিভিন্ন অলি-গলিতে জীবানুনাশক স্প্রে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু  যেসব গলিতে গাড়িগুলো ঢুকছে সেগুলো বাদ পড়ছে। এছাড়া মশা নিধনের জন্য স্প্রে করা হচ্ছে। সিটি করপোরেশন থেকে যদি কোন আর্থিক এবং খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কর্মসূচি আসে তখন সেটি নিয়ে তিনি কাজ করবেন বলে জানান। আপাতত মধ্যবিত্ত এবং নিম্ববিত্তদের সহযোগিতায় কোন কাজ হচ্ছেনা। 


নাসিক ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান বলেন,  ‘রমজানের কারণে মানুষের পাশে গতবারের মতো দাঁড়াতে পারছিনা। তবে মাইকিংসহ সচেতনামূলক প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত কেউ সাহায্যের জন্য আসেনি। আর কয়েকদিন পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে মানুষের সেবায় অবশ্যই কাজ করবো।’ 


এদিকে গতবার সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের দেখে সম্ভাব্য প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। এবার কাউন্সিলরদের নীরব ভূমিকাতেও তারাও অনেকটা নীরব। সত্যিকার অর্থে  কে মানবসেবার জনপ্রতিনিধি নাকি লোকদেখানো মানবসেবার জনপ্রতিনিধি তা নির্বাচন করতে প্রতিটি ওয়ার্ডের মানুষও সচেতনভাবেই সিদ্ধান্ত নেবেন এমন মত বিশ্লেষকদের।