মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১২ ১৪৩১   ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে কাঠের ব্যবসা

স্টাফ রিপোর্টার

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৩:২৩ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২১ বৃহস্পতিবার

এককালে কাঠের আসবাবপত্র ছিলো বাসা বাড়িতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য। কিন্তু ক্রমাগত কাঠের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মধ্যবিত্তের কাছে তা হয়ে উঠেছে সৌখিন ও বিলাসী পন্যে। নতুন করে পারটেক্স ও প্লাস্টিকের আসবাবপত্র সহজলভ্য ও হাতের নাগালে চলে আসায় লুফে নিতে শুরু করেছেন সকলে। আর এতে করে ভাটা পরেছে কাঠের ব্যবসায়। একদিকে কাঠের চাহিদা কম অন্যদিকে করোনায় ব্যবসা মন্দাভাব। সব মিলিয়ে দিন দিন হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন কাঠের কারবারিরা।


নারায়ণগঞ্জ শহরের চারারগোপ ও মাছঘাট এলাকায় কাঠের ব্যবসা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবী প্রায় ৪০ বছর ধরে চলছে এই কাঠের ব্যবসা। তবে বছর পাঁচেক ধরে এই ব্যবসায় ক্রমাগত লাভের পরিমান কমে আসছে। এর অন্যতম কারন পারটেক্স কাঠের আসবাবপত্র এবং প্লাস্টিকের ব্যবহার বলে দাবী করছেন ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতিতে কিভাবে উত্তরণ ঘটবে ব্যবসার তাও জানেননা কেউ। পাশাপাশি শহরের সবচেয়ে বড় কাঠের আড়ৎ কোন স্থায়ী জায়গা না থাকায় এই ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের চারারগোপ পোর্ট রোডের প্রবেশ পথের অন্তত ৫০০ মিটার এলাকা জুড়ে রয়েছে কাঠের ব্যবসা। এর কিছু অংশ রয়েছে মাছঘাট সংলগ্ন এলাকাতেও। তবে অধিকাংশই পণ্য খালাস হয় চারারগোপ ফলের আড়ৎ সংলগ্ন ঘাটে। প্রতিদিন অন্তত ৫ থেকে ৬টি ট্রলার এসব ঘাটে কাঠ নিয়ে আসে। সেখান থেকে আড়ৎদারেরা তাদের নিজেদের কর্মচারী দ্বারা কাঠ নামিয়ে রাখেন সড়কের পাশে। এভাবে কাঠ স্তপ করে রাখতে রাখতে সড়ক হয়ে পড়েছে সংকুচিত। তবুও বিকল্প কোন স্থান না থাকায় এখানে রেখে দিতে হচ্ছে কাঠগুলো।


বরিশালের মূলাদী থেকে আগত কাঠ ব্যবসায়ী গনি মিয়া বলেন, নারায়ণগঞ্জে যারা কাঠ আনে তারা সবই আমাদের বরিশাল থেকে আসে। কেউ কেউ আবার খুলনা থেকেও কাঠ নিয়ে আসে। তবে বরিশাল, মুলাদী, ভোলা, পটুয়াখালী এই অঞ্চল থেকেই বেশী কাঠ নিয়ে আসি আমরা। চাঁদপুরের আড়ৎদারেরা তো বরিশালের কাঠ ছাড়া কোন কাঠই নিতে চায় না। এখন চাঁদপুরের অবস্থা অত ভালো না। এখানে কাঠ বিক্রি করি ৮/১০ দিন অপেক্ষা করে। আগে অবশ্য এতদিন লাগতো না, এখন ব্যবসার অবস্থা কারই ভালো না।


এক ট্রলারে কি পরিমান কাঠ নিয়ে আসেন জানতে চাইলে বলেন, কাঠের মান অনুযায়ী আমাদের দাম দর নির্ধারন হয়। যদি গড় হিসেব করা হয় তাহলে প্রতি ট্রিপে অন্তত ১০/১২ লাখ টাকার কাঠ নিয়ে আসা হয়। কিন্তু এই ব্যবসা বেশীরভাগ চলে বাকিতে। তাই অত লাভ আসেনা সরাসরি। টাকা অনেক ধীরে ধীরে আমাদের হাতে পৌঁছায়।


ঘাটে থাকা কাঠের আড়ৎদার মোশাররফ হোসেন বলেন, করোনায় আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। যেই কাঠ ২৫০ টাকায় বিক্রি হতো সেসব এখন ২০০ টাকাতেও কেউ নিতে চায় না। অনেকে কাঠ চায়না তাকেও সেধে সেধে দিতে হয়। বাকি বিল তো আছেই। সেসব টাকাও উঠেনা। আমরা মূলত ১০% কমিশন পায়। এখানে ট্রলারে করে কাঠ নিয়ে আসে। আমরা সেসব কাঠ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় সাপ্লাই দেই। বিনিময়ে আমরা ১০% কমিশন পাই। কিন্তু এই ১০% এর ৫% ও ইদানিং টেকে না। এখন কোন এক জায়গায় কাঠ পাঠাবো, সেখানে ১০ থেকে ১৫ বার যাওয়া লাগে। যাতায়াত ভাড়া, লেবার খরচ দিয়ে খুব বেশী লাভ থাকেনা এখন আর। এখন কোন রকম পেট বাঁচায়া চলি। 


ঘাট থেকে কি পরিমান পণ্য বেচাকেনা হয় জানতে চাইলে বলেন, আগে অনেক বেচাকেনা হইতো। আমরা ৭/৮ জন আড়ৎদার আছি এখানে। মাসে আমাদের ৮০, ৯০ লাখ কাঠ টাকার কেনাবেচা চলত। এখানে রেইনট্রি, মেহগনি, আকাশি, গামারি, গর্জন, চাম্বল, সেগুণ কাঠের ব্যবসা ছিলো জমজমাট। আর এখন মাসে ৫০ লাখ টাকাও এই পুরো ঘাট থেকে বেচা হয়না। করোনার কারনে তো আরও কমে গেছে। তার উপর নিমতলা, জিমখানা, আদমজী সহ অনেক এলাকার স’ মিল ভাইঙ্গা ফেলসে। তার উপর কাঠের বিকল্প হিসেবে আসছে পারটেক্স কাঠ। মানুষ ওই কাঠের খাট কিনে আট, দশ হাজার টাকায়। আর কাঠ দিয়ে খাট বানাইতে গেলে মজুরিই লাগে ১ট হাজার টাকা। এজন্য কাঠের ব্যবসা মন্দার দিকে।


সড়কের দখল করে কেন কাঠের ব্যবসা চলছে জানতে চাইলে আরেক আড়ৎদার বলেন, আমরা একবার বিআইডব্লিউটিএ’র কাছে জায়গা চেয়েছিলাম বরফকলের দিকে। আমরা তার জন্যে টাকাও দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেই জায়গায় এখন করা হয়েছে চৌরাঙ্গি পার্ক। এই রাস্তা হচ্ছে সিটি করপোরেশনের। মেয়র চাইলে আমাদের এখান থেকে উঠিয়ে দিতে পারে। কিন্তু এতে এই কাজের সাথে জড়িত প্রায় এক হাজার পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়বে। গরীব মানুষরা কাজ করে খেতে পারবে না। এই জায়গায় আমরা একই সাথে নদী পথে কাঠ আনতে পারি আবার ট্রাকেও কাঠ তুলে দিতে পারি। এই জায়গাটা আমাদের জন্য পারফেক্ট। মাঝখানে কিছুদিন আমরা রেলের জায়গায় কাঠ রাখতাম, বিনিময়ে অবশ্য কিছু টাকাও তাদের দেয়া হতো। কিন্তু এখন তারা তাদের জায়গা নিয়ে গেছে, রাস্তায় কাঠ রাখা ছাড়া আমাদের বিকল্প কোন পথ নেই।