শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ৯ ১৪৩১   ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ছোট বউ বলে শিউলিকে ডাকতেন খোরশেদ

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৩:৫৬ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২১ বৃহস্পতিবার

# শহরজুড়ে আলোচনায় শিউলি-খোরশেদের বিয়ে কাহিনী
# কখনো ডাকতেন পাগলী বলে, আবার কখনোবা নিশু
# স্বীকৃতি নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা, সবাই আশ্চর্য্য নতুন খোরশেদকে দেখে

 

সারাদিন ফোন দেয়ার উপরেই থাকতেন, ছোট বউ, ছোট বউ বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলতেন। ব্যবসায়িক গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়েও যেতে পারতেন না। বলতেন, বড় বউ লুনার যন্ত্রণায় তিনি বড্ড অসহায়, বড় বৌ তাকে সারাদিন কঠোর চাপে রাখে, শত বদনাম করতেন কাউন্সিলর খোরশেদ। কখনো আমাকে খোরশেদ ডাকতনে পাগলী বলে আবার কখনো বা ডাকতেন নিশু বলে। আর সেই খোরশেদই কিনা বড় বউ জেনে যাওয়ার পর ছোট বউকে স্বীকারই করছেনা।

 

কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে সুদূর দুবাই থেকে জানান করোনার বীর কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের স্ত্রী দাবি করা বাংলাদেশ সিএনজি অনার্স এসোসিয়েশন নারায়ণগঞ্জ-মুন্সিগঞ্জের সভাপতি, এফবিবিসিআই এবং বিজিএমইএ’র সদস্য সায়েদা শিউলি। তার এসব কথার সত্যতা মিলেছে তাদের ব্যক্তিগত মেসেঞ্জার এবং ভিডিও কলের সূত্র ধরে। এখানেই শেষ নয়, শিউলি দাবি করেছেন, গত বছরের আগস্টের ২ তারিখ কাঁচপুর এসএস সিএনজি পাম্পে বিয়ে করেন তারা, কাজী নিয়েছিলেন খোরশেদ। এছাড়া খোরশেদ তাকে নিয়ে গাড়িতে করে ঘুরতে যেতেন মুন্সিগঞ্জ, ঢাকায়।

 

সাহেদা শিউলি বলেন, ফেসবুক লাইভে এসে আমাকে কতটা অসম্মান করে কথা বলেছে, মানুষের চোখে আমাকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেছে। আমার পরিচয়টা পর্যন্ত দেয়নি, আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করেছে।  এই বছরের ২১ জানুয়ারি খোরশেদের প্রথম স্ত্রী লুনা আপা জেনে যাওয়ার পর থেকেই এমন করছে খোরশেদ। আমাকে ছোট বউ ছাড়া কথাই বলতোনা সে, এছাড়া নিশু বলেও ডাকতো খোরশেদ, ভিডিও কলে না আসলে রাগ করতো।

 

আমার চানমারীর বাসায় নিয়মিত যাতায়াতের সময় একবার ট্যাক্সিস্ট্যান্ডের লোক চিনে ফেলায় মিথ্যা কথা বলেও পার পায়নি সে। তখন থেকে আমার বাড়িটিকে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের লোকেরা বাড়ির নাম দিছে খোরশেদের ছোট বউ এর বাড়ি। এখন আমি তো সবই হারিয়েছি, আমার কিছু হারানোর নেই। আমি তাকে বলেছি, আমার পরিবার, সমাজ, ড্রাইভার, গার্ড সবার কাছে সম্মান হারিয়েছি। খোরশেদ যেহুতু শুরু করেছে আমি সবকিছ এবার সামনে নিয়ে আসবো।

 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাথে খোরশেদের পরিচয়  নিয়ে খোরশেদ মিথ্যাচার করেছে সেটি এখন প্রমাণিত। খোরশেদ চাইলেই বলতে পারতেন তার বন্ধু মামুনের ছোট বোন ওই নারী। তিনি সেই পরিচয় ফেসবুক লাইভে গোপন করেছেন। এদিকে সাহেদা শিউলিও স্বীকার করেছেন, ‘১৯৯০ সালের দিকে যখন তিনি গভর্মেন্ট গার্লস স্কুলে পড়তেন তখন থেকেই কাউন্সিলর খোরশেদকে চিনতেন তিনি। তার ভাই মামুন কাউন্সিলর খোরশেদের বন্ধু ছিলেন। দীর্ঘদিন গ্যাপ থাকলেও  গতবছর বারবার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ম্যাসেজ এবং করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর কাউন্সিলর খোরশেদের সাথে ঘনিষ্টতা বাড়ে। এবং পরে গত ২ আগস্ট কাঁচপুরে এসএস ফিলিং  স্টেশনে  তাদের বিয়ে হয়। যেখানে কাজী নিয়ে গিয়েছিলেন কাউন্সিলর খোরশেদ।’ তিনি বলেন, জানুয়ারির ২১ তারিখের পর থেকে সবকিছু ওলটপালট হয়। আমার ধারণা, আমার ড্রাইভার ও খোরশেদের ড্রাইভার তার প্রথম স্ত্রী লুনার কাছে সব বলে দিয়েছে।এরপরই লুনা খোরশেদের উপর চড়াও হয়। আর কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে খোরশেদ এমনটা করছে।

 

 
সূত্র বলছে, সাহেদা শিউলি ফতুল্লার ১৫নং মধ্য ইসদাইর এলাকার মৃত জহিরুল হকের মেয়ে। এলাকায় তাকে খুকু মনি হিসেবে চেনেন। কাউন্সিরর খোরশেদ  মামুনের বন্ধুত্বের সুযোগে শিউলিদের ইসদাইরের বাড়িতে নিয়মিত যেতেন, এলাকার মুরুব্বিরা খোরশেদকে ওই এলাকার ছাদেও আড্ডা মারতে দেখতেন। এছাড়া শিউলী যখন গভর্মেন্ট গার্লস স্কুলে পড়তেন তখন খোরশেদ তাকে ফলো করতো। বিষয়টি টের পেয়ে শিউলির পরিবার তাকে দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেয়। এসবের তিন দশক পর আবারো শিউলির পেছনে লাগেন খোরশেদ। ক্রমাগত ফেসবুক মেসেঞ্জারে নক দিয়ে এক পর্যায়ে শিউলির সাথে পুরনো সম্পর্ক সচল করেন খোরশেদ।

 

করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর শিউলির নিয়মিত সেবা করতেন খোরশেদ। একপর্যায়ে ভালোবাসার ফাঁদ পেতে শিউলির এসএস সিএনজি ফিলিং স্টেশনে কাজী নিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন খোরশেদ। তাদের শর্ত মোতাবেক, তাদের ছেলেমেয়ে যথেষ্ট বড় থাকায় সামাজিক মর্যাদার বিষয়টি মাথায় রেখে তারা এটি গোপন রেখেছিলেন। তবে খোরশেদের প্রথম স্ত্রী লুনা জেনে যাওয়ার পর চাপে ভেঙে পড়েন কাউন্সিলর করোনা বীর খোরশেদ। এরপর সুবোধ স্বামী সেজে এড়িয়ে যেতে থাকেন শিউলিকে। যতদিন শিউলি দেশে ছিলেন এনিয়ে খোরশেদ কিংবা তার প্রথম স্ত্রীর পরিবার মুখ খোলেননি। কিন্তু গত ২০ এপ্রিল শিউলির বড় বোন মারা যাওয়ার পর জরুরি ব্যবসায়ীক কাজে দুবাই যান শিউলি। এই সুযোগকেই মোক্ষম হিসেবে কাজে লাগান কাউন্সিলর খোরশেদ। প্রথম স্ত্রী লুনাকে নিয়ে ফেসবুক লাইভে এসে পুরো ঘটনার দায় চাপান শিউলির উপর।

  
এদিকে শহরজুড়ে আলোচনার বিষয়বস্তু এখন করোনা বীর কাউন্সিলর খোরশেদ। কয়েকদিন আগে ফেসবুক লাইভে এসে এক নারী তাকে বিয়ের জন্য ব্ল্যাকমেইলিং করছে এমন তথ্য জানানোর জন্য জনসাধারণের সহানুভুতি কুড়ালেও এখন ঘটনা ভিন্ন। সায়েদা শিউলি নামের ওই  নারীও পাল্টা ফেসবুক লাইভে এসে আসল গোমড় ফাঁস করে দিয়েছেন। এছাড়া গণমাধ্যমে এনিয়ে খোঁজখবরে আরো তথ্য বেরিয়ে আসছে। এসব তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানোর পর তারা বলছেন, এক হাতে কখনো তালি বাজেনা, আর সেই কথায় শেষ পর্যন্ত সত্য হয়েছে।

 

খোরশদ কিভাবে ওই নারীর সাথে সম্পর্কে জড়ান এবং অত্যন্ত ঘনিষ্ট কথোপকথনোর বিষয়টি এখন অনেকেই জানতে পারছেন। প্রথমে ওই নারীকে একতরফা দোষারোপ করলেও থলের বেড়াল বেড়িয়ে আসছে। তারা বলছেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন নারী কেন অযথা কাউন্সিলর খোরশেদের পেছনে লাগবে। আর ওই নারী এখনো তার কাছে অর্থবিত্তের কোন প্রস্তাব দেয়নি। ওই নারী দাবি করছেন, স্বীকৃতি। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন নারী কেনই বা খোরশেদকে স্বামী দাবি করবেন। করোনা বীর হিসেবে কাউন্সিলর খোরশেদ যে কাজ করেছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার, কিন্তু একজন নারীকেও অপবাদ দিয়ে সমাজের চোখে হেয় করা এটাও কিন্তু অন্যায়।

 
দীর্ঘদিন পরে খোরশেদের সাথে পুনরায় যোগাযোগের ব্যাপারে ব্যবসায়িক কাজে দুবাইতে অবস্থান করা সায়েদা শিউলি বলেন, ১৯৯০ সালের দিকে নারায়ণগঞ্জ গার্লস স্কুলে পড়াকালীন সময়েই খোরশেদকে চেনেন তিনি। তিনি তার ভাইয়ের বন্ধু। কিন্তু সেসময় পরিবার ব্যাপারটি জেনে যাওয়ায় দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেন তাকে। যদিও তার এক মেয়ে এবং খোরশেদের এক মেয়ে নারায়ণগঞ্জ আইডিয়েল স্কুলে পড়াশোনা করে তবে সেখানে তাদের দেখা সাক্ষাত হয়নি।

 

করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর হঠাৎ খোরশেদ অনবরত তার ফেসুবকে রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে নক করতে থাকেন। কয়েকমাস সফল না হলেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে যখন তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন, করোনা বীর খোরশেদ তখন ওই নারীর বাড়িতে যান, সেবা যত্ন করেন, এবং পরবর্তীতে যোগাযোগ তৈরি করেন। তিনি নিজে নন, খোরশেদই তাকে নিয়মিত ভিডিও কল ও মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করতেন। এসংক্রান্ত অজস্র প্রমাণ তার কাছে আছে বলে দাবি করেন ওই নারী।

 

সাহেদা শিউলি দাবি করেন, ব্যবসায়ীক কাজে আমি ব্যস্ত থাকলে প্রথম প্রথম খোরশেদ আমার উপর রাগ করতো। বিয়ের পর গতবছরের আগস্টে মাঝামাঝি সময়ে তাঁর বাড়ির নিচতলায় অফিস গার্মেন্ট ব্যবসায়ী রাহুল শেখের জালকুড়ির বাসায় আমরা দেখা করতাম। খোরশেদ যখন আমাকে এভোয়েড করা শুরু করে তখন রাহুল আমাকে অনেকভাবে বুঝিয়েছে। খোরশেদের স্টাফ নাঈম ও খোরশেদের গাড়ির ড্রাইভার সেলিম সবসময় আমরা যখন দেখা করতাম পাহারায় থাকতো। তাদের দুজনকে নিয়েও খোরশেদ আমার বাসায় আসতো।


শিউল আরো জানান, খোরশেদের ফেসবুক লাইভের পর আমার পরিবারের লোকজন আত্মহত্যার হুমকিও দিচ্ছে। আমি আমার ইজ্জত ও সম্মান ফেরত চাই। আমি চাই সে আমাকে অস্বীকার করছে সেটি সবার সামনে স্বীকার করুক। অর্থনৈতিক যে সুবিধাগুলো সে আমার কাছ থেকে নিয়েছে সেগুলোও আমি সামনে আনবোনা। আমি চাই নারী হিসেবে আমার যে সম্মানহানি হয়েছে সেটি পুনুরুদ্ধার হোক, ন্যায় বিচার চাই।

 

তিনি জানান, আমি বারবারই বোঝানোর চেষ্টা করেছি, যেভাবেই এটা হয়ে গেছে, হয়ে গেছে। এটা কীভাবে মিউচ্যুয়েল করা যায়, সেটিই দেখেন। কেননা,এটা দুই পরিবারের জন্যই সম্মানের প্রশ্ন। আজ সবার কাছে আমাকে ছোট করছে। মার্চের ১ তারিখে বসার কথা থাকলেও সে আসেনি। তার ছেলেমেয়েও আমার ছেলেমেয়ের সাথে নানাকটুক্তি করছে। তবে দেশে ফিরেই দুই-একদিনের মধ্যে সব খোলাশা করবেন বলে জানান সাহেদা শিউলি।


শিউলির বক্তব্যের রেশ ধেের ইসদাইর এলাকার বাসিন্দা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এর নারীর ভাই শামীমের সাথে ৭/৮ বছর আগে আমার একটা গ্যাঞ্জাম হয়েছিল। ওই নারীর এক স্বামী সৌদীআরবে মারা গেছেন। শামীমের সাথে একটা গ্যাঞ্জাম হয়েছিলো। ওই নারীর এক ভাই মামুন অস্ত্র মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলো। মামুন এখন অস্ট্রেলিয়া থাকেন। আর এই মামুন হচ্ছে খোরশেদের বন্ধু। ফেসবুক লাইভে যখন খোরশেদ এই নারীকে বক্তব্য দেন তখন এলাকাবাসীর বিষয়টিতে নজর আসে। মামুনের বাসায় যখন খোরশেদ আসতো তখন তার বন্ধু হিসেবেই সবাই জানতো। চানমারীতে ওই  নারী যেখানে থাকেন সেখানেও সবাই খোরশেদ আর ওই নারীর সম্পর্কের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। ফেসবুক লাইভে দুইজনের ভিডিও দেখার পর থেকে আলোচনা আরো বেড়ে গেছে। 


মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ্ নিজাম বলেন, ‘অনেকদিন আগে ইসদাইরের একটি ঘটনা নিয়ে ওই নারী এক ব্যক্তির মাধ্যমে পারিবারিক একটি ঝামেলার বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসে। আমি এলাকার মুরুব্বিদের বলেছি সমাধান করে দিতে কিন্তু পরবর্তীতে খোরশেদের বিষয়টি নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সোরগোল হওয়ার পরে আমি জানতে পারি ওই নারীই সেই নারী। খোরশেদ ভালো মানুষ তবে খোরশেদ যদি নিজের ভুলে কিংবা নিজের অজান্তে ইমোশনালি কোন ভুল করে থাকে তবে আমার মনে হয় এজিনিসগুলো খোরশেদের ক্লিয়ার করা উচিৎ।’ 

 

গতবছরের আগে ওই নারী পূর্বপরিচিতা কিনা এমন প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সেটি রিসিভ করেননি। বুধবার আবারো কাউন্সিলর খোরশেদের সাথে মুঠোফোনের যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।