আইভীকে ভাসাতে গিয়ে ভেসে যাচ্ছেন তাঁরা!
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৬:২৫ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০২১ বৃহস্পতিবার
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর হাত ভেঙ্গে তাকে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলো নারায়ণগঞ্জের হেফাজত ইসলামের নেতারা।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত ওলামা পরিষদ ও হেফাজত ইসলামের নেতারা সমাবেশের মাধ্যমে মেয়র আইভীকে হাত ভেঙ্গে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। ওই সমাবেশ পরিচালনা করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজত ইসলামের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। যাকে শামীম ওসমান নিজেই তার আদরের ছোট ভাই হিসেবে সম্বোধন করেছিল।
তবে, মেয়র আইভীকে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দেয়ার হুংকার দিলেও এবার হুংকার দেয়া নেতারাই ভেসে যেতে বসেছেন। অর্থাৎ হেফাজত ইসলামের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। শীঘ্রই গঠিত হতে যাচ্ছে হেফাজত ইসলামের নতুন কমিটি। আসন্ন কমিটিতে বিতর্কিত ও রাজনৈতিক দল ঘেষা ব্যক্তিদের জায়গা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা। সে হিসেবে মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও ফেরদাউসুর রহমান হেফাজতে নেতৃত্ব হারাতে যাচ্ছেন। বোদ্ধা মহল বলছে- তারা নেতৃত্ব হারালে হেফাজত ইসলামের ব্যানারে যেই আস্ফালন দেখাতেন, হেফাজত থেকে বিচ্ছিন্ন হলে সংখ্যা গরিষ্ঠের সেই শক্তি বা আস্ফালন দেখাতে পারবে না মেয়র বিদ্বেষী হেফাজতের ওই নেতারা।
জানা গেছে, মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও ফেরদাউসুর রহমান জুনায়েদ বাবু নগরীর অনুসারী। মাওলানা জুনায়েদ বাবু নগরীর অনুসারী এই নারায়ণগঞ্জ হেফজত ইসলামের নেতাদের সাথে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে বেশ সু-সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে শামীম ওসমানের উপস্থিতিও দেখা গেছে। তাছাড়া, হেফাজতের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মাওলানা ফেরদৌসুর রহমানকে শামীম ওসমান ইতিপূর্বে তার ভাই হিসেবেও সম্বোধন করেছেন। একই সাথে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর জেলা কমিটির নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়ালের সাথেও শামীম ওসমানের সু-সম্পর্কের বিষয়টি গোপন নেই।
ইতিপূর্বে শামীম ওসমানের কথায় মাওলানা আউয়াল ও ফেরদৌস মেয়র আইভী বিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বলেও খোদ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছিলেন। এসব কারণে নারায়ণগঞ্জের বর্তমান হেফাজত ইসলামের নেতারা সাধারণ মানুষের কাছে সমালোচনার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। হেফাজত স্বাভাবিক অবস্থান থেকে গ্রহণ যোগ্যতা হারিয়েছে বলেও জনশ্রæতি রয়েছে।
এবার শামীম ওসমানের নিয়ন্ত্রিত সেই হেফাজত ইসলামের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগরের কমিটি বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। হেফাজতের প্রয়াত আমীর মাওলানা আহমদ শফী অনুগামীদের নিয়ে করা হবে নতুন কমিটি। ওই কমিটিতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাদের আনা হবে না এবং জায়গা হবে না বিতর্কিতদেরও। হেফাজত ইসলামের একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এদিকে, হেফাজতের আলোচিত নারায়ণগঞ্জ মহানগর কমিটির সভাপতি ফেরদৌসুর রহমানকে বেশ কিছু দিন যাবত মাঠে দেখা যাচ্ছে না। গতকাল তার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। তবে, নায়েবে আমির ও জেলা কমিটির নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়ালের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শারীরিক ভাবে অসুস্থ আছেন বলে দৈনিক যুগের চিন্তাকে জানান। অতঃপর বলেন, নতুন কমিটির বিষয়ে তিনি এখনো কোন বার্তা পাননি এবং তাদের কমিটি বিলুপ্তির বিষয়েও কোন নির্দেশনা বা চাপ আসেনি।
জানা গেছে, হেফজতের নতুন কমিটিতে নারায়ণগঞ্জের আহবায়ক হিসেবে জামিয়া কারিমিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম আবু সায়েম খালেদ ও সদস্য সচিব হিসেবে মাওলান রহমতউল্লাহ বুখারীর নাম রয়েছে। কেন্দ্রীয় ভাবে কমিটি ঘোষণার পরেই নারায়ণগঞ্জের এ কমিটি গঠন করা হতে যাচ্ছে। আহমদ শফি বেঁচে থাকতে নারায়ণগঞ্জ শহরের পূর্ব ইসদাইর এলাকাতে জামি কারিমিয়া মাদ্রাসাতে আসতেন। এ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবু সায়েম খালেস ছিলেন আহমদ শফির অন্যতম ভক্ত ও অনুগামী। কিন্তু গত বছর নারায়ণগঞ্জে হেফাজতের যে কমিটি গঠন করা হয় সেখানে তাঁকে রাখা হয়নি। এছাড়া আল্লামা শফি জীবীত থাকা অবস্থায় জেলা হেফাজতের কমিটিতে রহমতউল্লাহ বুখারীর নাম থাকলেও বাবুনগরীর কমিটিতে তাকে রাখা হয়নি।
হেফাজতের একটি সূত্র জানায়, জেলা ও মহানগরের হেফাজতের বর্তমান কমিটিতে থাকা মাওলানা আবদুল আউয়াল, মুফতি বশিরউল্লাহ, ফেরদাউসুর রহমান ও হারুন অর রশিদ মূলত মাওলানা বাবুনগরীর অনুগামী। হেফাজতের শফি হুজুর পন্থীদের সঙ্গে তাদের সুসম্পর্ক থাকলেও তারা মূলত বাবু নগরী ও প্রয়াত নূর হোসাইন কাশেমীর অনুগামী ছিলেন।
এরই মধ্যে গত ২৫ এপ্রিল রাত ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্তের ঘোষণা দেন সংগঠনের আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী। তিনি জানান, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে কমিটি ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। যদিও হেফাজতের শীর্ষ পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, গত ১১ এপ্রিল থেকে সারাদেশে হেফাজত নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, আলেমদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য সংগ্রহ এবং কওমি মাদ্রাসা বন্ধ করার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সঙ্গে সমঝোতার অংশ হিসেবেই বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সদ্য বিলুপ্ত কমিটির নেতৃত্বে থাকা ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতাদেরও বাদ দেওয়া হতে পারে সম্ভাব্য নতুন কমিটি থেকে। হেফাজতে ইসলামের আল্লামা আহমদ শফীপন্থী আলেমরা জানিয়েছেন, হেফাজতের বর্তমান কমিটি ভেঙে দেওয়ায় নতুন করে হেফাজতকে ঐক্যবদ্ধ করার সুযোগ এসেছে।