বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

আইভীতে সরব, ফিলিস্তিনে নীরব হেফাজত!

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৯:৪৯ পিএম, ১৯ মে ২০২১ বুধবার

ইসলামের পক্ষের দল হিসেবে দাবী করা সংগঠন ‘হেফাজতে ইসলাম’ ও ‘ওলামা পরিষদ’র নেতারা ফিলিস্তিন ইস্যুতে চুপসে আছেন। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে বিবৃতি দেয়াসহ প্রতিবাদ জানানো হলেও মুখ খুলছেন না নারায়ণগঞ্জে হেফাজত ইসলাম ও ওলামা পরিষদের নেতারা। ফিলিস্তিনে মুসলিমদের উপর এমন বর্বর হামলার পরও নারায়ণগঞ্জে ইসলামী ওই দু’টি দলের নেতারা চুপসে থাকায় তা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে সচেতন মহলে।  


সচেতন মহল বলছেন, ইতিপূর্বে ধর্মীয় ইস্যুর বাইরেও নানা কারণে নারায়ণগঞ্জে সক্রিয়তা দেখিয়েছে হেফাজত ও ওলামা পরিষদ। অভিযোগ উঠেছে, নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এক নেতার কাছে বশ মেনে বাগে জান্নাত, ডিআইটি ও মডেল মসজিদ নিয়ে ভিত্তিহীন ইস্যু তৈরী করে নারায়ণগঞ্জের হেফাজতের শীর্ষ নেতারা সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর বিষদগারে মেতেছিলেন। এমনকি মেয়র আইভীকে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়াসহ নারায়ণগঞ্জে তার কবর রচিত করার মত হুমকিও দিয়েছিলেন হেফাজত ও ওলামা পরিষদের শীর্ষ নেতারা।


সূত্রের অভিযোগ, মেয়রের বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কে দিতে আর্থিক সুবিধা নিয়ে কাজ করেছিলো হেফাজতের নেতারা। এমনকি মেয়র আইভীও হেফাজতকে প্রভাবশালী এক নেতার ভাড়াটে গুন্ডা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। এই অবস্থায় ফিলিস্তিনে মুসলিমদের উপর এমন বর্বর হামলা চালানো হলেও নারায়ণগঞ্জের হেফাজত ইসলামের নেতারা আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন বিবৃতি বা প্রতিবাদ না জানানোয় হেফাজত ইসলামের নেতাদের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই।


নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আব্দুল কাদির দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ফিলিস্তিনে মুসলিমদের উপর হামলা বন্ধ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিবৃতি দিয়েছেন। কিন্তুমুসলিমদের উপর নির্যাতনের পরও হেফাজতের নেতারা কেন চুপসে আছেন, তা বোধগম্য হচ্ছে না। এতে করে হেফাজতের নেতাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তারা ইতিপূর্বে মেয়র আইভীর বিরুদ্ধে মাঠে নেমে ছিলেন। ভিত্তিহীন ও মিথ্যে ইস্যু নিয়ে নারায়ণগঞ্জ গরম করেছিলেন। কিন্তু এখন ফিলিস্তিনে যখন সাধারণ মুসল্লিদের উপর হামলা চলে, তখন তারা মুখে কুলুপ এঁটে আছেন কেন? তারা কেমন হেফাজতে ইসলামের নেতা? তাদের উদ্দেশ্য এখন মানুষের কাছে পরিস্কার। তারা হেফাজতে ইসলামের নামে রাজনৈতিক সংগঠনে পরিণত হচ্ছে।


জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর হাত ভেঙ্গে তাকে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলো নারায়ণগঞ্জের হেফাজত ইসলামের নেতারা। গত ১২ ফেব্রæয়ারি চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মসজিদের সামনে অনুষ্ঠিত ওলামা পরিষদ ও হেফাজত ইসলামের নেতারা সমাবেশের মাধ্যমে মেয়র আইভীকে হাত ভেঙ্গে শীতলক্ষ্যায় ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। ওই সমাবেশ পরিচালনা করেছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজত ইসলামের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। যাকে শামীম ওসমান নিজেই তার আদরের ছোট ভাই হিসেবে সম্বোধন করেছিল।
অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জে মেয়র আইভীর কবর রচিত করার হুংকার দিয়েছিলেন ডিআইটি মসজিদের ইমাম মাওলানা আব্দুল আউয়াল। তার সাথেও নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জনশ্রæতি রয়েছে। তিনিও ফিলিস্তিন ইস্যুতে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন বিবৃতি বা প্রতিবাদ জানায়নি।  


সূত্র জানায়, হেফাজত ইসলামের বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত হতে যাচ্ছে। শীঘ্রই গঠিত হতে যাচ্ছে হেফাজত ইসলামের নতুন কমিটি। আসন্ন কমিটিতে বিতর্কিত ও রাজনৈতিক দল ঘেষা ব্যক্তিদের জায়গা দেয়া হবে না বলে জানিয়েছে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতারা। সে হিসেবে মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও ফেরদাউসুর রহমান হেফাজতে নেতৃত্ব হারাতে যাচ্ছেন। বোদ্ধা মহল বলছে- তারা নেতৃত্ব হারালে হেফাজত ইসলামের ব্যানারে যেই আস্ফালন দেখাতেন, হেফাজত থেকে বিচ্ছিন্ন হলে সংখ্যা গরিষ্ঠের সেই শক্তি বা আস্ফালন দেখাতে পারবে না মেয়র বিদ্বেষী হেফাজতের ওই নেতারা।   


জানা গেছে, মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও ফেরদাউসুর রহমান জুনায়েদ বাবু নগরীর অনুসারী। মাওলানা জুনায়েদ বাবু নগরীর অনুসারী এই নারায়ণগঞ্জ হেফজত ইসলামের নেতাদের সাথে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে বেশ সু-সম্পর্ক রয়েছে। এমনকি তাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে শামীম ওসমানের উপস্থিতিও দেখা গেছে। তাছাড়া, হেফাজতের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মাওলানা ফেরদৌসুর রহমানকে শামীম ওসমান ইতিপূর্বে তার ভাই হিসেবেও সম্বোধন করেছেন। একই সাথে হেফাজতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর জেলা কমিটির নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়ালের সাথেও শামীম ওসমানের সু-সম্পর্কের বিষয়টি গোপন নেই।

 

ইতিপূর্বে শামীম ওসমানের কথায় মাওলানা আউয়াল ও ফেরদৌস মেয়র আইভী বিরোধী বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন বলেও খোদ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা অভিযোগ করেছিলেন। এসব কারণে নারায়ণগঞ্জের বর্তমান হেফাজত ইসলামের নেতারা সাধারণ মানুষের কাছে সমালোচনার পাত্রে পরিণত হয়েছেন। হেফাজত স্বাভাবিক অবস্থান থেকে গ্রহণ যোগ্যতা হারিয়েছে। এই অবস্থায় ফিলিস্তিন ইস্যুতে হেফাজতের নেতারা চুপসে থাকায় তা নিয়ে সমালোচনার পাল্লা আরো ভারি হলো হেফাজতের নেতাদের।


যদিও, মোদি ইস্যুতে হরতাল ও পরবর্তীতে মামুনুল হক ইস্যুতে তান্ডব চালানোর পর সোনারগাঁ সিদ্ধিরগঞ্জে দায়েরকৃত মামলাগুলোতে হেফাজতের অনেক নেতাই ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন। তবে, হেফাজতের নেতা আব্দুল আউয়াল ও ফেরদৌস কোন মামলাতেই আসামী হননি বা সন্দেহ ভাজন হিসেবে তাদের গ্রেফতারও করা হয়নি। এক নেতার আশির্বাদে তারা ধরাছোয়ার বাইরে। সে হিসেবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে তাদের প্রতিবাদ জানানোর পথে কোন প্রতিবন্ধকতাও ছিলো না। কিন্তু তারা চুপসে থাকায় তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সচেতন মহল।