দুর্ণীতিবাজদের আক্রোশের স্বীকার রোজিনা ইসলাম : গণসংহতি আন্দোলন
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৮:৩৫ পিএম, ২০ মে ২০২১ বৃহস্পতিবার
প্রথম আলো পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের উপর শারীরিক নিপীড়নের ঘটনার যথাযথ বিচার ও তার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গণসংহতি আন্দোলনের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। বৃহস্পতিবার (২০ মে) সকালে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব সামনে গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজনের সভাপতিত্বে এবং বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাবেক সভাপতি শুভ দেবের সঞ্চালনায় এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে তরিকুল সুজন বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম একের পর এক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি প্রকাশের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আক্রোশের শিকার। গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাকে প্রতিহত করার জন্যই সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের নামে ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টে মামলা দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকেই সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরোধিতা করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সরকারের গদি রক্ষা এবং দুর্নীতিবাজ সাংসদ-মন্ত্রী-কর্মকর্তা রক্ষা আইনে পরিনত হয়েছে।
১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশরা এই আইন তৈরি করেছিলেন নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য। আর বর্তমান সরকারও নিজেদেরর গদিকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এই আইনের প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। গত কিছু মাস পূর্বে এই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাবন্দী থাকা অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদকে হত্যা করা হলো। আরও অজ¯্র মানুষ এই মামলায় আসামী হয়ে কারাগারে আছেন। বহু মানুষের মাথার উপর ঝুলছে গ্রেফতারি পরোয়ানা। আমরা সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সহ এই আইনে বন্দী সকল মানুষের মুক্তি দাবি করছি এবং একই সাথে এই আইনের বিলোপ চাই। জান ও জবানের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে আমরা সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানাই।
অঞ্জন দাস বলেন, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম আজো জামিন পেলেন না অথচ যে মামলা রোজিনা ইসলামের নামে হলো সে মামলা একটি জামিনযোগ্য মামলা। সরকার ক্ষমতা ব্যবহার করে রোজিনা ইসলামের জামিন আদেশ বিলম্বিত করেছে রোববার পর্যন্ত। আমরা দেখেছি ২০১৮ সালের ৩ মাসে ৩৪ টি মামলা, ২০১৯ সালে ৬৪টি মামলা, ২০২০ সালে ১৭২ টি মামলা, ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত ৬৩ মামলা হয়েছে । অর্থাৎ সরকার সাংবাদিক গণম্যাধ্যম এবং মানুষকে শায়েস্তা করার জন্যই এই আইন তৈরি করেছে।
গত ১৭ই মে যে ঘটনা ঘটেছে তা এদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। এ ধরনের ঘটনা কখনো মন্ত্রী-এমপিদের সাঙ্গপাঙ্গর টর্চার সেলে হয়। কখনো কখনো থানায়, কারাগারে হয়। আর এখন সচিবালয়ের মধ্যেও হচ্ছে। বর্তমান সরকার পুরো দেশটাকেই একটা টর্চার সেলে পরিণত করতে চায়। তথ্য চুরির দায়ে সাংবাদিককে গ্রেফতার করলেন। অথচ তিনি কি তথ্য চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লেন, তা আমরা কেউই জানি না। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের তথ্য জানার অধিকার আছে। তাই রোজিনা ইসলাম কি তথ্য চুরির দায়ে কারাগারে আছেন তা আজ সমগ্র দেশবাসী জানতে চায়।
নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন স্মিথ বলেন, রোজিনা ইসলামের সাথে কেনো এ ঘটনা ঘটলো তা আজ সকলের কাছেই স্পষ্ট। রোজিনা ইসলাম স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা বিভিন্ন দূর্নীতির বিষয়ে রিপোর্ট করেছেন। মন্ত্রণালয়ের কেনাকাটার বিষয়ে অসংগতিগুলো তুলে ধরেছেন। যার ফলে স্বাস্থ্য মন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়ের দফতর, পিয়ন, ড্রাইভার সবাই তার উপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। আর একারণেই তারা রোজিনা ইসলামকে এভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা রুমের ভেতর আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করলেন। সরকারকে উদ্দেশ্যে করে আমি বলবো, আপনারা যদি আপনাদের দূর্নীতির তথ্য প্রকাশ করতে নাই দেন, তাহলে সেটা সরাসরি আইন করে দিন। যাতে করে কেউ আপনাদের বিরুদ্ধে লিখতে না পারে। রোজিনা ইসলামের এই ঘটনা সাংবাদিক নিপীড়নের ক্ষেত্রে ইতিহাসের কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে। আমরা অবিলম্বে এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার চাই।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন, গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার নির্বাহী সমন্বয়কারী অঞ্জন দাস, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন স্মিথ, প্রথম আলো নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি মজিবুল হক পলাশ, জেলা নারী সংহতির সম্পাদক পপি রাণী সরকার, বাংলাদেশ গার্মেন্ট শ্রমিক সংহতির সম্পাদক কাউসার হামিদ, প্রথম আলো বন্ধুসভার সভাপতি রাসেল আদিত্য, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের জেলার সভাপতি ইলিয়াস জামান, এই বাংলা নাট্য দলের সংগঠক মিলন মাহমুদ ও সাংস্কৃতিক সংগঠক জহিরুল ইসলাম মিন্টু সহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।