বৃহস্পতিবার   ২৮ নভেম্বর ২০২৪   অগ্রাহায়ণ ১৪ ১৪৩১   ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কাসেমী গ্রেফতার হলেও অধরা ফেরদাউস আউয়াল!

যুগের চিন্তা অনলাইন

যুগের চিন্তা

প্রকাশিত : ০৮:৫৩ পিএম, ২৩ মে ২০২১ রোববার

হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থ সম্পাদক ও গত সাংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে আসা ধানের শীষের প্রার্থী মনির হোসেন কাশেমীকে গ্রেফতার করা হলেও নারায়ণগঞ্জে হেফাজতের অন্যতম নেতা কেন্দ্রীয় কমিটির নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর হেফাজতে ইসলামের সভাপতি মাউলানা ফেরদাউসুর রহমান রয়েছেন ধরা ছোয়ার বাইরে।

 

তা নিয়ে রহস্যের দানা বেঁধেছে খোদ আওয়ামী লীগ অঙ্গণে। নারায়ণগঞ্জে দক্ষিন মেরুপন্থী আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, ‘উত্তর মেরুপন্থী আওয়ামী লীগের মুখপাত্র’ প্রভাবশালী এক সাংসদের আশির্বাদে নিরাপদে রয়েছেন হেফাজত নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও ফেরদাউসুর রহমান।


বিগত সময়ে নানা ঘটনায় প্রতীয়মান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ শামীম ওসমানের সাথে মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও ফেরদাউসুর রহমানের সখ্যতা রয়েছে। তাদের মধ্যে ফেরদাউসকে আদরের ছোট ভাই হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন শামীম ওসমান।


সম্প্রতি, একটি টেলিভিশনের টকশোতে শামীম ওসমান হেফাজত নেতা মনির হোসেন কাশেমী, মাওলানা আব্দুল আউয়াল ও ফেরদৌস সম্পর্কে কথা বলেছিলেন। তিনি আব্দুল আউয়াল ও ফেরদৌসের পক্ষে কথা বললেও গত নির্বাচনে তার প্রতিদ্ব›দ্বী মনির হোসেন কাশেমীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন।  


সিদ্ধিরগঞ্জে হেফাজত ইসলামের তান্ডবের পর ওই টকশোতে শামীম ওসমান বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ হেফাজতের আমীর মাওলানা আবদুল আউয়াল সাহেবের সঙ্গে আমার একটি সুসম্পর্ক রয়েছে। ২৫-৩০ বছর আগে নিষিদ্ধ পল্লী উচ্ছেদের সময়ে তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি একজন আল্লাহওয়ালা মানুষ। আউয়াল সাহেব পদত্যাগ করেছিলেন শুধুমাত্র সহিংশতার কারণে। মহানগররের সভাপতি মাওলানা ফেরদাউস বলেছেন শহরে কিছুই হয়নি। যা হয়েছে সিদ্ধিরগঞ্জ সাইনবোর্ডে। আমি দায়িত্ব নিয়েই বলছি সিদ্ধিরগঞ্জে মাদানীনগর মাদ্রাসা সেখান থেকেও কোন একটি ছেলে বের হয়নি।

 

বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটে একটি মার্কেট থেকে লোকজন বেরিয়েছে। তাদের ফুটেজ আমাদের সাথে আছে। মামলায় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন ও কাউন্সিলরের নাম এসেছে। এগুলো তদন্ত করে দেখা হবে। আরেকজনের নাম আসেনি যার নাম মনির হোসাইন কাশেমী। সরকারকে ফেলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের যে সভাটি হয়েছে কাঠমান্ডু ও থাইল্যান্ডে, সেখানে এ কাশেমী উপস্থিত ছিলেন। তিনি নিজেও এটা স্বীকার করেছেন। তাছাড়া আমার দলের একজন মহিলাও এর সাথে জড়িত। আমি জানি না এটা সত্য কি না। আমাদের দল থেকে বলা হয়েছে ডোন্ট মুভ। সে কারণেই আমরা কেউ যাইনি। আমরা গেলে কেউ দাঁড়াতে পারতো না। তারা মূলত চেয়েছিল লাশ।’


শামীম ওসমানের ওই বক্তব্যের মাস দেড়েক পর গত ২১ মে রাজধানীর বসুন্ধরা থেকে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলো মনির হোসেন কাশেমী। গোয়েন্দা পুলিশ সূত্র বলছে, ‘কাসেমী এজাহারভুক্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে ৫ মে শাপলা চত্বরে নাশকতা ও ২০২০ সালের মামলাসহ নারায়ণগঞ্জে সম্প্রতি নাশকতার বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।’ তবে, প্রশ্ন উঠেছে এতো দিনেও কেন গ্রেফতার হলো না মনির হোসেন কাশেমী?


এদিকে, মোদিবিরোধী আন্দোলনের পর গত ১ এপ্রিল মনির হোসেন কাশেমী সহ হেফাজতের অন্যান্য নেতাদের ব্যাংক হিসাব তলব করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। কিন্তু তখনও নিরাপদেই ছিলেন মাওলানা আউয়াল ও ফেরদৌস। নারায়ণগঞ্জের ১১টি কওমী মাদ্রাসার ব্যাংক হিসাব তলব করা হলেও কওমী অধু্যুষিত হেফাজত ইসলামের নারায়ণগঞ্জের ওই দুই আলোচিত নেতার ব্যাংক হিসেবও তলব করা হয়নি।


তাছাড়া, ফেরদৌস ঢাকায় র‌্যাবের হাতে আটক হলেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়। অথচ, সেসময়ে নাশকতার মামলায় চারিদিকে আটক করা হচ্ছিল হেফাজত নেতাদের। এমন মুহুর্তে ফেরদৌসকে আটকের পর ছেড়ে দেয়ায় এখানে শামীম ওসমানের আশির্বাদ কাজ করেছে বলে গুঞ্জন উঠে।     
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ইস্যু, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে হরতাল ও হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা মামুনুল হক ইস্যুতে বেশ সরগরম ছিলেন মাওলানা ফেরদৌস ও আউয়াল। এসব ইস্যুতে লাগাতার উস্কানী মূলক বক্তব্য দিয়ে আসছিলো তারা। ফলে জেলার বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের যেই তান্ডব হয়েছে- এসবের নাটেরগুরু বলা হচ্ছে হেফাজত নেতা ফেরদৌসুর রহমানকে। এমনকি ২৮ মার্চ হেফাজতের হরতালে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে আন্দোলন না করায় জেলার সভাপতি আব্দুল আওয়ালের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন এই হেফাজত নেতা।


তাছাড়া, সোনারগাঁয়ে মামুনুল হক ইস্যুতে গত ৩ এপ্রিল তান্ডব ঘটে, ওই তান্ডবের সময়ে মামুনুল হককে উদ্ধার করতে সোনারগাঁয়ে গিয়েছিলেন ফেরদৌস। ঘটনার দিন দৈনিক যুগের চিন্তার সাথে মুঠোফোনে আলাপ কালে এই কথা জানিয়েছিলেন ফেরদৌস নিজেই। অথচ, এসকল ইস্যুতে সৃষ্ট তান্ডবের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় নাম আসেনি এই হেফাজত নেতার। তাছাড়া, মামলাগুলোতে অজ্ঞাতনামা আসামীদের মধ্যে হেফাজতের অন্যান্য কর্মী-সমর্থকদের গ্রেফতার করা হলেও রহস্যজনক কারণে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন হেফাজতের অন্যতম নেতা ফেরদাউসুর রহমান ও শামীম ওসমানের সাথে সু-সম্পর্ক থাকা মাউলানা আব্দুল আউয়াল।    


আওয়ামী লীগেরই একটি পক্ষ অভিযোগ তুলেছিলেন, মূলত ফেরদৌস ও প্রভাবশালী সাংসদ শামীম ওসমানের মধ্যে দৃশ্যমান সক্ষতা থাকায় হেফজতের এই নেতা ধরা পড়লেও পাড় পেয়ে গেছেন। তাকে আটক করা হলেও জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।  


এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেছিলেন, মাওলানা মামুনুল হক ও মনির হোসেন কাশেমীকে গ্রেফতার করা হলেও হেফাজত নেতা ফেরদৌস ও আউয়ালকে গ্রেফতার করতে সমস্যা কোথায়। তারা সরকার বিরোধী বক্তব্য দেয়। মাওলানা আউয়াল মসজিদের মিম্বারে বসে মুসল্লিদের উস্কে দিচ্ছে। যারা এমন উস্কানী মূলক বক্তব্য দিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা উচিৎ। আমি মনে করি, আমাদের দলের একজন এমপি নারায়ণগঞ্জে হেফাজতকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে। তিনি ফেরদৌসকে তার ছোট ভাই বলে পরিচয় দেয়। মূলত ওই এমপি তাদের সমর্থন দেয় বলেই হেফাজতের নেতারা এই সকল কথা বলতে সাহস পেয়েছে। মাঠে নামার সাহস পেয়েছে।’