রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট হয় এখানে !
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ১০:২৩ পিএম, ৩০ মে ২০২১ রোববার
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। গুরুত্বপূর্ণ এই কার্যালয়ে রয়েছে দালালদের দৌরাত্ম্য। এই খবর পুরনো হলেও মিলছে না প্রতিকার। উল্টো নানা ধরণের সমালোচিত ও অপ্রীতিকর ঘটনার জন্ম দিচ্ছে অহরহ। এমনকি রোহিঙ্গাদেরও পাসপোর্ট করানো হয় সেখানে!
ইতিপূর্বে র্যাবের অভিযানে বেড়িয়ে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। র্যাবের হাতে আটকও হয় পাসপোর্ট করতে আসা রোহিঙ্গা নারী। মূলত নারায়ণগঞ্জের ভূইগড়ে অবস্থিত পাসপোর্ট অফিসের দালালের মাধ্যমে নুর তাজ (১৮) নামক ওই রোহিঙ্গা নারী ভূইগড়ে এসেছিলেন বাংলাদেশী পাসপোর্ট করতে।
গোপন সূত্রে প্রাপ্ত সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ওই রোহিঙ্গা নারী ও মোঃ সুমন নামে এক বাংলাদেশি দালালকে আটক করে র্যাব-১১। বলা হচ্ছে, ওই ঘটনায় র্যাবের কাছে তথ্য এসেছিলো বিধায় র্যাব সফল ভাবে অভিযান চালিয়েছে। কিন্তু সব ঘটনায় যেমন র্যাবের কাছে তথ্য আসে না, তেমনই আরো একাধিক রোহিঙ্গা নাগরিক অসৎ উপায়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করে থাকতে পারে বলে মনে করছেন বোদ্ধামহল। অভিযোগ রয়েছে, বৈধ পন্থায় পাসপোর্ট করতে গেলে সময় বিলম্ব সহ নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হন বৈধ গ্রাহকরা। আর দালাল ধরলে অনেক ক্ষেত্রে সহযেই মিলে যায় পাসপোর্ট।
এছাড়া জরুরী পাসপোর্টও মিলছেনা সঠিক সময়ে। জরুরী ক্ষেত্রে ৭ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট গ্রাহকের হাতে পৌছানোর কথা থাকলেও পুলিশ ভেরিফিকশেনেই কেটে যায় বহুদিন। সাধারণ গ্রাহকেরা বলছেন, জরুরি পাসপোর্ট করতে ব্যাংকে যে টাকা জমা দেয়ার কথা রয়েছে আমরা তাই দিচ্ছি। জরুরি পাসপোর্ট পেতে টাকা দিতে হয় ৬ হাজার ৯ শত টাকা ভ্যাট সহ ৭ হাজার। ডেলিভারি দেয়ার কথা ৭ দিনে, কিন্তু সেই পাসপোর্ট ৯০ দিনেও পাওয়া যায় না।’ শুধু কী তাই? অদক্ষ কম্পিউটার অপারেটরদের দিয়ে তথ্য সংগ্রহ করানোর ফলে প্রায় সময়ই পাসপোর্টে উঠে আসছে ভুল তথ্য। ফলে অতিরিক্ত অর্থব্যয়ে পাসপোর্ট সংশোধন করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। এতেও সময় ব্যায় হচ্ছে অতিরিক্ত, আর পাসপোর্ট অফিসের বারান্দায় ঘুরতে হয় দিনের পর দিন।
গ্রহাকদের অভিযোগ, নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে রয়েছে একটি শক্তিশালী দালাল চক্র। এই চক্রের মূল হোতা স্থানীয় কাউন্সিলরের ভাই আলমগীর। এসব দালালদের সাথে পাসপোর্ট অফিসের একশ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে সক্ষতা রয়েছে। দালালদের প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ চলে যাচ্ছে অসাধু কর্মকর্তা কর্মচারীদের হাতে। আর তাই, এসব দালালদের বিরুদ্ধে কার্যকরী কোন উদ্যোগও নিতে দেখা যায়না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে। এর আগে র্যাবের সিনিয়র এএসপি আলেপ উদ্দিনের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে দালাল চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। র্যাবের এই অভিযানের পর কিছুটা কমে ছিলো দালাল চক্রের দৌরাত্ম। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের পার্শ্ববর্তী ফটোকপির দোকানগুলো দালালদের ঘাটি বলে জানিয়েছে সূত্র।
গ্রাহকদের অভিযোগ, দ্রুত পাসপোর্ট দেয়ার নাম করে দালালরা হাতিয়ে নেয় ২ গুণেরও বেশি অর্থ। প্রায় সময়ই টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর আর খুঁজে পাওয়া যায়না দালালদের। ডেলিভারি স্লিপের ফটোকপি গ্রাহকের হাতে দিয়ে পরবর্তীতে মূল স্লিপের জন্য অধিক অর্থ দাবি করে কেউ কেউ। এরপর পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে দালালদের পেছনে ছুটতে হয় গ্রাহকদের।ওই অসাধু কর্মকর্তারা সঠিক নিয়মে গ্রাহকদের সঠিক সেবা দিচ্ছে না। ফলে নানা ধরনের বাহানায় অতিরিক্ত সময় অপচয় হয়ে থাকে। অতঃপর বাধ্য হয়েই উৎকোচ দিয়ে থাকেন গ্রাহকরা অথবা দারস্থ হন দালালদের।
শুধু কী তাই, পাসপোর্ট অফিসের কর্মরত স্টাফরা বৈধ গ্রাহকদের সাথে দূর্ব্যবহার করে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ১৫ নভেম্বর আজমল নামে এক গ্রাহক অফিস সহকারী মহসিনের দূর্ব্যবহারের শিকার হয়। বাংলাদেশি নাগরিক হলেও তাকে রোহিঙ্গা বলে অপদস্ত করা হয়। ধৈর্য্যর বাঁধ ভাঙ্গে আজমলের। ত্যাক্ত হয়ে কাউন্টারের গøাসে হাত দিয়ে ধাক্কা দিলে ভেঙ্গে যায় কাচের বেষ্টনি। আকষ্মিক ওই দুর্ঘটনায় আহত হয় অফিস সহকারী। ওই অবশেষে আসামী হয়ে শ্রীঘরে যেতে হয়েছে কানাডা প্রবাসী আজমলকেই। গ্রহাক আজমলের ভাষ্য, পাসপোর্ট অফিসের স্টাফদের দূর্ব্যবহারেই চটেছিলেন তিনি।
এমনসব ভোগান্তির বিষয়ে জানতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও ফোন রিসিভ করেনি নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান। তবে, একই প্রসঙ্গে ইতিপূর্বে গণমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের অফিসের কারো সাথে দালালদের সাথে সখ্যতা নেই। দালাল থাকলে তা বাইরে, অফিসে নয়।’