ঝুঁকি নিয়ে ডকইয়ার্ডে কাজ করছেন শ্রমিকরা
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৬:৪০ পিএম, ৮ জুন ২০২১ মঙ্গলবার
কোন রকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই ঝুঁকি নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন নদ-নদীর তীরে গড়ে ওঠা ডকইয়ার্ডগুলোতে কাজ করছে শ্রমিকরা। এতে প্রায় সময়ই দূর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ শ্রমিকদের। তবে এর পরও তাঁদের নিরাপত্তার জন্য মালিক এবং সরকারিভাবে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন শ্রমিকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব তীরে অবস্থিত বন্দরের মদনগঞ্জ, থেকে দক্ষিণ দিকে নবীগঞ্জ ও এর আশেপাশের এলাকাতেই রয়েছে ৩০ থেকে ৩৫টি ডকইয়ার্ড। শ্রম আইনের ৭৮ এর ‘ক’ ধারা অনুযায়ী এসব ডকইয়ার্ডে কাজ করতে আসা সকল শ্রমিককে নিরাপত্তা সামগ্রী দেয়ার কথা মালিক পক্ষের। অথচ এসব ডকইয়ার্ডে কর্মরত প্রায় সকল শ্রমিকদেরই নিরাপত্তা সামগ্রী নেই। তাছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রূপগঞ্জ, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার এবং ফতুল্লায় বৈধ অবৈধ মিলিয়ে কয়েক’শ ডকইয়ার্ড রয়েছে। তবে সেখানেও শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী না দেওয়াতে অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছেন তাঁরা।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের একটি সূত্রে জানা গেছে, শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী না দেয়াসহ বেশ কয়েকটি কারণে বন্দর ও আড়াইহাজারের প্রায় ২০ টি ডকইয়ার্ডকে নারায়ণগঞ্জ কল-কারখানা অধিদপ্তর একাধিক নোটিশ পাঠিয়েছে। কিন্তু সরকারি নোটিশ পাওয়ার পরও কিছু প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ না করায় ৫ টি ডকইয়ার্ডের বিরুদ্ধে ঢাকার ৩য় শ্রম আদালতে মামলাও করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণগঞ্জ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, অন্যান্য যে কোনো কাজের চেয়ে ডকইয়ার্ডে কাজ করা তুলনামূলক ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই আমরা বিভিন্ন সময় নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ডগুলোতে পরিদর্শনে যাই। সেখানে অনিয়ম দেখলে তাঁদের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত পদক্ষ্যেপও নিয়েছি। আর এরজন্য মাঝেমধ্যে ডকইয়ার্ড মালিকদের হুমকির মুখেও পড়েছি আমরা। এদিকে নিরাপত্তা সামগ্রী না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রমিকরা অভিযোগ করে জানান, মূলত ডকইয়ার্ডের মালিকরা তাদের হ্যান্ড গ্লাভস, হেলমেট, কিংবা বুট জুতার মতো গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা সামগ্রী দিতে অনিহা দেখাচ্ছে। এর ফলে তারা প্রায় সময়ই আহত হচ্ছেন।
যেমন বন্দরের উইলসন রোডে অবস্থিত খন্দকার ডকইয়ার্ডে দীর্ঘদিন যাবৎ কাজ করে আতিকুল। কর্তৃপক্ষের দিকে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আমারা সারাদিন ঝালাইয়ের কাজ করি। এই কাজ করতে গিয়ে আগুনের ছোট ছোট ফুলকি গায়ের মধ্যেই পড়ে। এতে গায়ের বিভিন্ন জায়গা পুড়ে যায়। হাতে ঠোঁসা পড়ে কিন্তু মালিকরা আমাদের হাতের খাপ (হ্যান্ড গ্লাভস), বুট জুতো (পায়ের দেওয়ার জন্য তৈরী বিশেষ জুতো) মাথার হেলমেট এগুলো কিছুই দেয়না।আমির মোহাম্মদ নামে একই ডকইয়ার্ডের অন্য একজন শ্রমিক বলেন, প্রায় সময়তেই দেখা যায় কারেন্টের তারে পা লাগলে অল্পতেই আমরা আহত হই।
এতে আমাদের মৃত্যুরও আশঙ্কা থাকে কিন্তু আমাদের মালিকরা আমাদের পায়ের জুতা, মাথার টুপি (হেলমেট) দেয়না। সরকার থেকে লোক আইসা যদি আমদের এই বিষয়গুলো দেখতো তাহলে মালিকরা ঠিকই এসব প্রয়োজনীয় যিনিস আমাদের দিতো। তখন আর আমাদের কোন সমস্যা হতোনা। কিন্তু এ বিষয়ে ডকইয়ার্ড কর্তৃপক্ষ কোন কথা বলতে না চাইলেও নারায়ণগঞ্জ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের লেবার ইন্সপেক্টর মেহেদি হাসান বলেন, শ্রমিকদের নিরাপত্তা সামগ্রী না দেয়াতে এ পর্যন্ত আমরা বহু প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ পাঠিয়েছি।
পরবর্তীতে সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলাও করেছি। কিন্তু আমি মনেকরি ডকইয়ার্ডের শ্রমিকদের এসব সমস্যা সমাধান করতে হলে আমাদের যে সংখ্যায় লোকবলের প্রয়োজন, মূলত সেটা আমাদের নেই। তাই এর ফলেও আমাদের পক্ষ্যে শ্রমিকদের এই সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছেনা এবং নারায়ণগঞ্জ কল কারখানা অধিদপ্তরের উপ মহাপরিদর্শক সমেন বড়ুয়া বলেন, আসলে এই বিষয়গুলো দেখার জন্য প্রতিটি এলাকাতেরআমদের কলকারখানা অধিদপ্তরের কর্মকতা আছেন। এরা শ্রমিকদের নানা সমস্যা নিয়ে কাজ করছে। তাই আশা করি দ্রæতই এই সমস্যার সমাধান হবে।