বাড়ি বাড়ি ঝুলছে টু-লেট
যুগের চিন্তা অনলাইন
যুগের চিন্তা
প্রকাশিত : ০৯:৪৪ পিএম, ১২ জুন ২০২১ শনিবার
ফতুল্লার দক্ষিণ সেহাচর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আলী হাওলাদার। এক তলা বিশিষ্ট টিনসেড বাড়ির ৮টি রুমের মালিক বয়বৃদ্ধ এই ব্যক্তি। ঘর ভাড়া দিয়ে উপার্জিত আয় থেকেই চলছিলো তার জগৎ সংসার। তবে, ডিএনডি অধ্যুষিত নিম্নাঞ্চলে তার বসত বাড়ি হওয়ায় পড়েছেন মহাবিপত্তিতে। বাড়ি তার তলিয়ে আছে বৃষ্টির জলে। তলিয়েছে বাড়ির সামনের সড়কটিও। জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকায় ৮টি রুমের সবগুলোই পানি প্রবেশ করেছে।
তাই গত মাসেই ভাড়াটিয়ারা চলে গেছেন অন্যত্র। ফাঁকা পড়ে আছে একে একে আটটি ঘর। প্রতিবছরের এই মৌসুমটিতে ভাড়াটিয়া শূন্য থাকে তার বাড়িটি। ফলে এক মাত্র আয়ের উৎসটিও এখন বন্ধ। পরিবার নিয়ে তাই নানামুখি সংকটের মুখে উপনিত হয়েছেন এই বৃদ্ধ। বাড়ির প্রধান ফটকে এক মাস যাবৎ টুলেট ঝুললেও তাতে সারাদিচ্ছেন না নতুন কোন ভাড়াটিয়া। সরেজমিনে দেখা যায়, এমন বিপত্তিতে কেবল দক্ষিন সেহাচর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আলী-ই নন, আশপাশের এলাকার শতাধিক বাড়ির মালিকদের একই হাল। প্রায় প্রতিটি বাড়ির প্রধান ফটকে ঝুলছে টুলেট।
বিশেষ করে ফতুল্লার লালপুর পৌষার পুকুরপাড়, বাংলাদেশ খাদ, ইসদাইর, গাবতলী, টাগারপাড়, কুতুবপুরের নন্দলালপুর, নয়ামটি ও সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকায় এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ডিএনডি অধ্যুষিত এসব এলাকায় ভাড়ায় বসবাস করা বিভিন্ন পেশার মানুষ ও চাকুরিজীবিরা নিরুপায় হয়ে জলাবদ্ধতা এড়াতে অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকার বসতবাড়িতে ঘর ভাড়া নিচ্ছেন। এদিকে, অপেক্ষাকৃত উঁচু এলাকার বহু সংখ্যক বসতবাড়ি আগে থেকেই ভাড়াটিয়া দ্বারা পরিপূর্ণ থাকায় নতুন ভাড়াটিয়ারা চাহিদা অনুযায়ি বাসাও পাচ্ছেন না। আবার জলাবদ্ধতার এই ভোগান্তির সুযোগ নিয়ে অনেক বাড়ির মালিকই দ্বিগুণ ভাড়া দাবি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা মোঃ হৃদয় মিয়া জানান, ‘তিনি স্বপরিবারে লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকায় ভাড়ায় বসবাস করছেন। কিন্তু জলাবদ্ধতার ভোগান্তি আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। তবে, অপেক্ষাকৃত উঁচু বাড়ির মালিকরা বেশি ভাড়া দাবি করছেন। আবার অনেক ক্ষেত্রে উচু এলাকায় ঘরও খালি যাচ্ছে না। তাই নিরুপায় হয়ে তারা লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকাতেই জলাবদ্ধতার মধ্যে বসবাস করছেন। যদিও ইতিমধ্যেই তাদের অনেক প্রতিবেশিই লালপুর ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন বলেও জানান তিনি।’
এদিকে, ভাড়াটিয়ারা চাইলেই বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও অন্যত্র থাকার সুযোগ পাচ্ছেন তবে, নিম্নাঞ্চলের এসব এলাকায় যারা স্থায়ী বসত বাড়ি গড়েছেন, তাদের জলাবদ্ধতায় থাকা ছাড়া অন্যত্র যাওয়ার সুযোগও থাকছে না। লালপুর পৌষার পুকুরপাড় এলাকার বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, জলাবদ্ধতার কারণে বাড়ির নিচতলায় পানি ঢুকেছে। নিচতলার ভাড়াটিয়ারা অন্যত্র চলে গেছে। কিন্তু আমাদেরতো বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। তাই জলাবদ্ধতার মধ্যেই পরিবার নিয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। আশপাশের অনেকেই পানিবাহি রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমরাও শঙ্কায় আছি।’
তিনি জানান, ‘পবিত্র কোরবানির ঈদের মধ্যে ঋতু অনুযায়ী বর্ষা মৌসুম চলে আসায় ওই সময়টাতে জলাবদ্ধতার মাত্রা থাকে বেশি। তাই কোরবানির পশু আনা ও জবেহ করার ক্ষেত্রেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। গতবার বাড়ির ছাদে গরু জবেহ করতে হয়েছিলো। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে তাও হয়ে উঠে না। দীর্ঘদিন ধরে এই জলাবদ্ধতার সমস্যা বিদ্যমান থাকলেও কোন কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ডিএনডি প্রজেক্টের কাজ চলছে, কিন্তু আমাদের এলাকায় জলাবদ্ধতা দুর হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। শুনেছি লালপুর ও ইসদাইর এলাকা ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় আনা হয়নি।’ ডিএনডি প্রজেক্টে ইতিমধ্যে প্রায় ১৩শ কোটি টাকা বরাদ্ধ পেয়ে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ২০১৯ সাল থেকে প্রজেক্টের মূল কাজ শুরু হলেও এখনো পর্যন্ত তা সম্পন্ন হয়নি। কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবে আর কবেই বা মিলবে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি, সেই প্রশ্নই এখন মোটা দাগে ভেসে উঠছে ডিএনডিবাসীর মাঝে।